এরশাদের বৈচিত্রময় জীবন: আলোচিত দশ দিগন্ত

প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০১৯

হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত নাম। নানা কারণে এদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম ও সকল ঘটনায় তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বৈচিত্রময় এক জীবনে তিনি যেমন ছিলেন একজন প্রখর রাজনীতিবীদ তেমনি ছিলেন একজন ব্যার্থ মানুষ আবার তাকে বলা হতো একজন প্রেমিক পুরুষ। অপরদিকে তিনি ছিলেন একজন কঠোর সেনাপ্রধান। ৯ বছর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। জেলও খেটেছেন ৬ বছর। একাধিক বিয়ে করেছেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে নানা কারণে ছিলেন আলোচনার প্রধান চরিত্র।

পাবলিক ভয়েসের বিশেষ এই প্রতিবেদনে এরশাদের জীবনের নানাদিক নিয়ে গবেষণামূলক এই লেখাটি লিখেছেন পাবলিক ভয়েসের বিশেষ লেখক সামছ্ আল ইসলাম ভূইয়া।

বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারী। ভারতের কোচবিহার জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন এরশাদ। যদিও এরশাদের দাবি তিনি কাউকে উৎখাত করে নন বরং তাকে (সেনাবাহিনীকে) ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান করা হয়েছে বিধায় তিনি ক্ষমতায় যান। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও জাতীয় পার্টিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দল বানানো হয় এবং এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা করা হয়। গত ২৭ জুন সকালে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন তিনি। দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে ১৪ জুলাই রবিবার তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিয়ুন।

হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বৈচিত্রময় জীবনকে দশ পয়েন্টে এনে লেখাটি সাজানো হলো।

১. রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের খেদমতে এরশাদ :

  • – হাইকোর্টের সামনে পুকুর ভরাট করে এরশাদই তৈরী করেছিলেনন দেশের জাতীয় ঈদগাহ।
    – তিনি যাকাত বোর্ড গঠন করেছিলেন।
    – তিনি মাদরাসা শিক্ষায় দাখিলকে এসএসসি এবং আলিমকে এইচএসসি সনদের সমমানের মর্যাদা প্রদান করেছিলেন।
    – তিনিএবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের মাসিক অনুদান প্রদান করেছিলেন।
    – তিনি ঈমামদের জন্যে ভাতা চালু করেছিলেন।
    – তিনি দেশের সকল মসজিদের পানি ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।
    – তিনি রেডিও টিভিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
    – তিনি রেডক্রসের নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট করেছিলেন।
    – ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং জুম্মার দিন অর্থাৎ শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করেছিলেন।

২. শাসন ক্ষমতায় এরশাদ কী ব্যর্থ ছিলেন?

শাসন ক্ষমতায় এরশাদের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে রয়েছে নানান কথা। আলোচিত যে বিষয়গুলো ছিলো তা হলো :

  • – একটি নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি।
    – শিক্ষানীতিতে হাত দিয়ে তিনি একটি আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। যা কিছুটা ব্যর্থতা আকারে সামনে এসেছে সবার।
    – বিরোধী সকল নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা মোটেই ইতিবাচক দিক ছিল না তার।
    – এরশাদের নয় বছরের শাসনে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো ভাঙনের শিকার হয়। গোটা রাজনীতিকে কলুষিত করে নিজের দল গঠন চূড়ান্ত করেন তিনি।
    – তার ভুল ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের মানুষ রাজপথে সোচ্চার ছিল। এতে অসন্তুষ্ট ছিলেন এরশাদ। নয় বছরে কয়েক হাজার মানুষকে তিনি হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
    – তার করা চিকিৎসানীতি দেশকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
    – ক্ষমতার জোরে এরশাদ নিজে কবি না হয়ে ভাড়াটে কবির মাধ্যমে কবি হিসেবে পরিচিতি নেয়ার চেষ্টা করেন।
    – নারী ঘটিত কেলেঙ্কারির শেষ নেই তার।
    – ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চোরাকারবারিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল তার উপর।

৩. জিয়াউর রহমানের খুনের সাথে সংশ্লিষ্টতা :

সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদকে জিয়াউর রহমানের খুনি দাবি করে তাঁর বিচার চেয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের বিএনপির গণ-অনশন কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া এরশাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনেন। খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদ মঞ্জুর ও জিয়াউর রহমানের খুনি। তাঁর বিচার করতে হবে। এই বক্তব্যের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন আমি জিয়ার খুনি। জিয়া যখন খুন হন, বিচারপিত সাত্তার তখন ক্ষমতায়। তিনি বিএনপির প্রেসিডেন্ট। তখন তিনি বিচার করেননি। বরং তিনি আমাকে চিঠি দিয়ে সেনা বিদ্রোহ দমন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খুনিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তাহলে কে জিয়ার খুনি? এত দিন পর এই কথা কেন? দেশবাসী জানে, জিয়ার খুনি কে’।

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এসময় সেনাপ্রধান ছিলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তাই সন্দেহ তীর তার উপরেই ছিল বেশ কয়েকটি কারণে।
১/চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানকে হত্যার করা হয়। মেজর জেনারেল মঞ্জুর তখন চট্টগ্রামের জিওসি। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে মঞ্জুর পুরো ঘটনার দায়ভার নিজের কাঁধে নেন। প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর মঞ্জুর সারাদেশে মার্শাল ল’ জারিসহ চার দফা দাবি পেশ করেন। ১ জুন মঞ্জুর তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান। তার দলে বিদ্রোহী কয়েকজন অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এক পর্যায়ে মঞ্জুরকে ফটিকছড়ির পাইন্দং গ্রামের এক চা বাগান থেকে হাটহাজারী থানার ইনসপেক্টর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস গ্রেফতার করেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মঞ্জুরকে থানায় আনা হয়। এরপর থানা থেকে এক সেনা কর্মকর্তা (সম্ভবত ক্যাপ্টেন এমদাদ) মঞ্জুরকে সেনানিবাসে নিয়ে যান। এরপর ২ জুন রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে মঞ্জুরের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। বলা হয়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একদল ক্ষুব্ধ সেনা সদস্যের হাতে মঞ্জুর নিহত হয়েছেন। মঞ্জুর হত্যার জন্য এরশাদকেই জিয়া হত্যার পরিকল্পনাকারী মনে করা হয়।

২/জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আলোচিত চরিত্র লে. কর্নেল মতিউর রহমান। মতিউর রহমানই জিয়াউর রহমানকে গুলি করেছিলেন (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ: এ লিগাসি অব ব্লাড, এ্যাস্থনি মাসকারেনহাস)।

বলা হয়, ৩০ মে এর আগে কোনো এক সময় মতি সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আর এ দেখা করার মধ্যেই অনেকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান।

৩/জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি রুহুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। যার অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল ও খুলনা জেলা জজ সৈয়দ সিরাজ উদ্দীন আহমদ। এ কমিটি অনেক নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু কপি বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে কোনো এক অদৃশ্য চাপে এক ঘণ্টার মধ্যে সেই নির্দেশ বাতিল করা হয়। কোনো কপি আর সংবাদপত্র অফিসে যায়নি। আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদনের বদলে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়। যা তখনকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। এই শ্বেতপত্রের তথ্য ছিলো একমুখী। যেখানে বিদ্রোহীদের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন অভিযানের কথা বলা হলেও এর পেছনের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখা ছিলো না। ছিলো না মঞ্জুরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য। তদন্ত প্রতিবেদনটি বাতিল হওয়ায় এরশাদকেই দেশবাসী জিয়া হত্যার খুনি মনে করেন। কেননা এরশাদ তখন সেনাপ্রধান ছিলেন। তিনিই রাষ্ট্রপতিকে তদন্ত প্রতিবেদন গায়েব করতে প্রভাবিত করেছেন বলে মনে করা হয়।

৪. এরশাদের জীবনে আলোচিত বিদিশা অধ্যয় :

এরশাদের প্রেমের সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল বিদিশা ইসলাম। নিজ বয়সী কবি ও শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশা ইসলামের প্রেমে পড়েন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রায় ছয় বছরের পুরো জেল জীবনে বিদিশার সাথে প্রেম করে ২০০০ সালে ঘোষণা দেন যে তিনি বিদিশাকে বিয়ে করেছেন। সেদিন ছিল তাদের ছেলে এরিকের প্রথম জন্মদিন। বিদিশাকে নিয়ে স্বল্পস্থায়ী সংসারে এরশাদের জটিলতা না কমে বরং বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিদিশার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আলোচিত নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদিশাকে তালাক দিয়ে তিনি চুরির মামলায় জেলে পাঠান। চুকে যায় তখনকার মতো এরশাদ-বিদিশা পর্ব। বিদিশা ইসলাম এখন স্থায়ীভাবে ঢাকাতেই বসবাস করেন।

৪ দলীয়জোট সরকারের শাসনামলে অভিযোগ ওঠে, দুই বউকে দিয়ে এরশাদ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। রওশন রাখছিলেন ক্ষমতাসীন বিএনপির সঙ্গে, আর বিদিশাকে রাখছিলেন তখনকার জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। বিদিশা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকও করেন। বিষয়টি জানতে পারেন চার দলের জোট সরকারের নীতি নির্ধারকরা। এরপর সরকার থেকে এরশাদকে চাপ দেয়া হয় তার দ্বিতীয় বউ বিদিশাকে তালাক দিতে। এরশাদের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’ নামে একটা বইও লিখেছেন বিদিশা। বইয়ে সংসার ভাঙ্গার জন্য বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বাবরকে দায়ী করেন। রাজনীতি না করলেও এরশাদের জাপার বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সাথে তার যোগাযোগ আছে। এমনকি এরশাদের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখতেন বিদিশা। এরশাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগে বিদিশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে জানা যায়। গত একবছরে এরশাদের প্রায় প্রতিটি ভারত সফরের সময়েই বিদিশা সে দেশে অবস্থান করেছিলেন।

৫. সন্তান সন্তুতি:

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প-গুজব রয়েছে। এরশাদ নিজে তার জীবনী গ্রন্থ ‘আমার কর্ম আমার জীবন’-এ তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদ তাঁর জম্ম, বেড়ে ওঠা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণসহ জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। ওই বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এরশাদের ৩ পুত্র ১ কন্যা সন্তান। সব চেয়ে বড় মেয়ে মাহজাবিন (জেবিন)। দেশে লেখাপড়ার পর লন্ডনে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। বিয়ে করে বর্তমানে লন্ডনেই অবস্থান করছেন তিনি। মেয়ে সাবিতা ও ছেলে নিকো জলিকে নিয়ে জেবিনের ছোট্ট সংসার। তবে জেবিনের মায়ের নাম উল্লেখ করেননি এরশাদ। আর এরশাদের ছেলেদের মধ্যে সবার বড় রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। জন্ম হয় ১৯৮৩ সালে। সাদ প্রথমে আমেরিকান স্কুলে লেখাপড়া করেন। গ্রাজুয়েশন শেষে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ব্যবসা করছেন। গ্রন্থে আলম নামে আরেক পুত্রের নাম উল্লেখ করেছেন এরশাদ। আলম সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে আমার ঠিক ঔরসজাত সন্তান নয়, তবে তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়’। এরিক হচ্ছেন এরশাদের কনিষ্ঠ সন্তান। বিদিশার গর্ভে তার জন্ম হয়েছে ২০০১ সালের ১১ মার্চ। বিদিশা-এরশাদের বিচ্ছেদ হলে এরিক বিদিশার কাছেই বেড়ে ওঠেন।

৬. নারীসঙ্গ :

সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদের জীবনে একাধিক নারীর আগমনের খবর ওপেন সিক্রেট। তার মধ্যে চারজনের সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ ছাড়া বাকিরা কেউ ছিলো না এরশাদের জীবনে। এদের কেউ মারা গেছেন, কেউ বিদেশে, কেউ দেশে থেকেও না থাকার তালিকায়। রওশন ছাড়া এরশাদের কথিত স্ত্রী হিসেবে যে তিনজন পরিচিতি পেয়েছিলেন তার হলেন মেরি, জিনাত মোশাররফ ও বিদিশা ইসলাম। এর মধ্যে বিদিশাকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছিলেন। যদিও শেষতক তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এরশাদ। মৃত্যুর আগে তিনি ‘একাকিত্ব’ জীবন কাটিয়েছেন। কারণ, এরশাদ ও রওশন দু’জন দু’বাসায় থাকতেন। রোমান্টিক পুরুষ এরশাদের প্রেমিকার তালিকায় আলোচিত ছিলেন শাকিলা জাফর, নাশিদ কামাল, নীলা চৌধুরী, সালমা বিন হেনা, আমেনা বারী প্রমুখ। বছর দুয়েক আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্যান্ডালে জড়ান এরশাদ। সাথী নামের এক আইনজীবীর সাথে ৮৮ বছর বয়সী এরশাদের ঘনিষ্ট ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক টুইটারে। অনেকে মন্তব্য করেন সাথী এরশাদের নতুন প্রেম ছিলো। এরশাদের বহুবিবাহ বা চারিত্রিক স্খলন নিয়ে তার নিজ দল বা পরিবারের কেউ কখনো মুখ খুলতে যান না। আলোচনাও করতে চান না।

৭. আলোচিত এক বড়ই গাছের গল্প :

এরশাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অবিরাম আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৯১-৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে এবং কোনো কোনোটিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় এরশাদ অনেক ধরনের গাছগাছালি লাগান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর তাকে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একসময় এই কারাগারে বন্দি ছিলেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদও।

পরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী জাতীয় সংসদে তার আলোচনায় ‘ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না’ মন্তব্য করে বলেন, ‘বেগম জিয়া একদিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিনা অপরাধে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সেই জেলখানায় এখন খালেদা জিয়া! ২৮ বছর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি বরই গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছে এখন বরই ধরেছে। কারাবিধান অনুযায়ী, এই বরই খাওয়া যাবে কিনা, জানি না। সুযোগ থাকলে খালেদা জিয়াকে সেই বরই খেতে দেওয়া হোক’।

কথিত আছে জেলের মধ্যে এরশাদ একটা বরই গাছ লাগিয়ে ছিলেন। সেসময় এরশাদ জেলার, সুপারভাইজার সহ সবাইকে বলেছিলেন, এই গাছে যখন ফল হবে তখন খালেদা জিয়া জেল খাটবেন। তখন তিনি এই বরই গাছের ফল খাবেন। কিন্তু এরশাদ তার নিজ এলাকা রংপুর সার্কিট হাউজে বরই গাছের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ওটা আমি ঠাট্টা করেছি। রোপন করা সেই কথিত বড়ই গাছের কোনো অস্তিত্ব নেই। কোন রুমে ছিলাম মনে নেই’।

৮. এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির অবস্থা :

জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই দল গঠন করেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১ আসনে বিজয়ী হয়। নির্বাচন ২টিতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে, এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসন, এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন লাভ করে। জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে এসে নেতৃত্বের কোন্দলে তিন ভাগে বিভক্ত হয়। দলটি তখন এরশাদ গ্রুপ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গ্রুপ ও নাজিউর রহমান মঞ্জু গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এরশাদ গ্রুপ ১৪টি এবং আনোয়ার হোসেন গ্রুপ ১টি আসন লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয়। এবং ২৭ টি আসন লাভ করে। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে নির্বাচন হয়। কারণ এর আগেই ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে পেয়েছে ১৩টি আসন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়েছে ২০টি। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসন লাভ করে বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়। রসিকতা করে অনেকে বিষয়টাকে গৃহ পালিত বিরোধী দল বলে অভিহিত করেন। এ নির্বাচনের আগে দলটিতে আবারও ভাঙন আসে। এরশাদের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ একাংশ নিয়ে আলাদা দল গঠন করেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ২২টি আসন লাভ করে বিরোধী দল হয়। জাতীয় পার্টি এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়েছে। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় দল। এই দলই বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল। এরশাদের নেতৃত্বাধীন এই অংশটি মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে পরিচিত। বড় ভাঙনগুলো হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে। কখনো আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আবার কখনো ভেঙেছে মন্ত্রী হওয়া নিয়ে। দিনে দিনে কমছে জন সমর্থন। সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে যাচ্ছে আসতে আসতে।

জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় টিকে থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রভাব নেই বললেই চলে। এরশাদের বিদায়ের সাথে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবার নেতৃত্বের দৃঢ়তা পেলে জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও অনেকে মনে করেন। দেখা যাক শেস পর্যন্ত জিএম কাদের-রওশন দ্বৈরথে কোথায় গিয়ে ঠেকে পাটির ভবিষ্যত।

৯. এরশাদ তার সম্পদ কি করেছে?

এরশাদ তার ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি জমি অনেক আগেই এতিমদের নামে লিখে দিয়েছেন। অবশিষ্ট সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে লিখে দিয়েছেন। যে ট্রাস্ট থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এরিকের ভরণপোষণ করা হবে। এরপর অবশিষ্ট অর্থ সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। এরিকের পরবর্তী প্রজন্মও একইভাবে সুবিধা ভোগ করবেন।

এ ট্রাস্টের নামে রয়েছে ১৫ কোটি টাকার এফডিআর, রংপুরের পদাগঞ্জে অবস্থিত পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ, বারিধারার ফ্ল্যাট (প্রেসিডেন্ট পার্ক, যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন), গুলশানের ফ্ল্যাট, বনানী বিদ্যানিকেতনের বিপরীতে অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট, বনানী ইউআই শপিং কমপ্লেক্সের দু’টি দোকান, রংপুর শহরে ৬৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাসভবন (পল্লীনিবাস) ও নিজের নামে কেনা পাঁচটি গাড়ি।

তার জীবনীতে তিন ছেলে এক মেয়ে উল্লেখ করলেও তাদের কোনো শর্ত রাখা হয়নি ট্রাস্টে। এ বিষয়ে এরশাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ওই ছেলে মেয়েদের তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। আর সাদের মা রওশন এরশাদের রয়েছে অঢেল সম্পদ। যা তিনি উত্তরাধীকার সূত্রেই পাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় এরশাদের তুলনায় রওশনের সম্পদ বেশি দেখা গেছে।

১০. মৃত্যু, জানাযা ও দাফন :

আজ রোববার ১৪ জুলাই ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাবেক এই সেনাপ্রধানের কবরস্থান, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছে জাতীয় পার্টি। জাপার প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভা বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের’র সভাপতিত্বে। এতে জাপার ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানা যায়, সভায় এরশাদের সম্ভাব্য কবরস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ এরশাদের কবরস্থানের জায়গা কেনার জন্য ৫ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতা পাবলিক প্লেসে জায়গা কিনে সেখানে এরশাদের কবর রাখার পক্ষে মত দেন। আবার কয়েকজন এরশাদকে সেনানিবাস অথবা আসাদ গেটের বিপরীতে সংসদ প্রাঙ্গণে কবরের কথা বলেছেন। বৈঠকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সফিকুল ইসলাম সেন্টু মোহাম্মদপুরের আদাবরে জায়গা কিনে কবর দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আদাবরে জায়গা না পাওয়া গেলে সাভারে আমার নিজস্ব জায়গা থেকে দুই বিঘা জমি এরশাদের কবরস্থানের জন্য লিখে দেবো।’ পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘স্যারের শারীরিক সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মৃত্যুর পর কোথায় জায়গা হবে, কোথায় জানাজা হবে— এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে।। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, আজ বাদ জোহর সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে এরশাদের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা। বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জন্মভিটা রংপুরে। পরে ঢাকায় এনে সামরিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

দাফন জানাজা যেখানেই হোক না কেনো, এরশাদের মৃত্যুতে এদেশের এক আলোচিত রাজনৈতিক অধ্যয়ের সমাপ্তি হলো বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। বৈচিত্রময় এক জীবন নিয়ে রাজনীতিতে আলোচিত থাকা এরশাদ এদেশের মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিভিন্ন কারণে। কেউ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করবে তাকে আবার কেউ তাকে স্মরণ করবেন একজন স্বৈরশাসক বা ব্যর্থ রাজনৈতিক হিসেবে। তবে যে যেভাবেই স্মরণ করুক আল্লাহ তায়ালা তার কৃতকর্মের অপরাধগুলো ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করুক এ কামনাই থাকবে।

এইচআরআর/এসএস/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন