

আইসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯’র সেরা খেলোয়াড় হতে চলছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশ লীগ পর্ব পেরোতে না পারলেও ব্যাটিং বোলিং অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে ফাইনালে যাওয়া দলের খেলোয়াড়দেরও ছাপিয়ে গেছেন বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডার পারফর্মার।
লীগ পর্বে ৯ ম্যাচের ৮ ম্যাচ খেলতে পারে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সাথে একমাত্র ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। নিজের সেরা খেলা দিয়ে প্রত্যেকটি ম্যাচেই দলের অন্যতম সেরা ভরসা হয়ে ওঠে সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে করেন ৭৫ রান সেই সাথে ১০ ওভার বল করে ৫০ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট শিকার করেন। নিউজিল্যান্ডের সাথে হেরে যাওয়া ম্যাচেও স্বপ্রতিভই ছিলেন সাকিব। ৬৪ রান করার পাশাপাশি নেন ২টি উইকেট। ইংল্যান্ডের সাথে তো তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। এভাবেই ম্যাচ বাই ম্যাচ সাকিব হয়ে ওঠেন দলের অন্যতম সেরা ভরসা। ৮ ম্যাচের ৮ ইনিংসে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করে ফাইনালের আগ পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় রয়েছেন সাকিব। সর্বোচ্চ গড়ে ক্যান উইলিয়ামসনের ৯৯.৩১ এর পরেই দ্বিতীয়তে সাকিবের অবস্থান (৮৬.৫৭ )।
এদিকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ৯ ইনিংসে ৬৪৮ রান করে সাকিবের থেকে মাত্র ৪২ রান বেশি নিয়ে প্রথমে থাকা রোহিত শর্মার দল ভারত বিদায় নিয়েছে সেমিফাইনাল থেকে। ১০ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪৭ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারের দল অস্ট্রেলিয়াও বিদায় নিয়েছে সেমিফাইনাল থেকেই। সাকিবের কাছাকাছি থাকা ইংল্যান্ডের জো রুট চতুর্থ, জনি বারিস্ত সপ্তম এং নিউজিল্যান্ডের ক্যান উইলিয়ামসন রয়েছেন তালিকার পাঁচ-এ।
সাকিবকে টপকাতে হলে জো রুটকে করতে হবে ৫৭, উইলিয়ামসনকে ৫৮ এবং জনি বারিস্তকে করতে হবে ১১০ রান। সাকিবকে টপকাতে হয়তো পারবে কিন্তু খুব বেশি পেছনে ফেলতে পারবে না নিশ্চয় কেউই। অন্তত ৫০ রান পেছনে ফেলতে হলেও প্রথম দুজনকে মিনিমাম সেঞ্চুরি করতে হবে। আর আর বারিস্তকে করতে দেড়শো পেরুনো ইনিংস। এদিকে রান করে সাকিবকে পেছনে ফেলতে পারলেও উইকেট দিয়ে সেটা পারবে না এই তিনজনের কেউ। জো রুট আর উইলিয়ামসনের ২টি করে উইকেট থাকলে বারিস্তর নেই একটিও। তার মানে অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে সাকিবের দ্বারে কাছেও নেই কেউ। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক বল হাতে ১০ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিলেও রান করেছেন সব মিলিয়ে মাত্র ৬৮। অন্যদিকে ৬০৬ রানের পাশাপাশি সাকিবের রয়েছে ১১ উইকেট। যার দ্বারে কাছেও নেই এমন অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্সের কেউ।

দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শেষে আইসিসির সেই টুইট
মোদ্দাকথা রানের দিক থেকে সাকিবকে টপকাতে পারলেও অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্সে সাকিবকে টপকানোর মতো কোনো খেলোয়ার এখন আর ট্রাকে নেই। এদিক থেকে অপ্রতিদ্বন্ধী সাকিব আল হাসান। রেটিং পয়েন্টেও এগিয়ে সাকিবই। সাকিবের চেয়ে রুট-উইলিয়ামসন ১১০ পয়েন্ট পিছিয়ে। সমান দুটি করে সেঞ্চুরি নিয়ে রুট-উইলিয়ামসনের আগেই (৩) রয়েছেন সাকিব।
- সব মিলিয়ে এবারে বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট সাকিব আল হাসানেই যে হতে চলছেন সেটা সহজেই অনুমেয়। এই সম্ভাবনার কথা স্বয়ং আয়োজক কর্তপক্ষ আইসিসি জানিয়েছে ১১ জুলাই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বিদায় নেওয়ার পর। আইসিসির অফিসিয়াল টুইটারে একাউন্টের এক টুইট বার্তায় কে হচ্ছেন সেরা খেলোয়ার ক্যাপশন দিয়ে একটি একটি ছবি পোস্ট করা হয়। যৌথ ছবিটিতে শুরুতেই ছিলো সাকিব আল হাসানের ছবি। আজকে ফাইনাল। মাত্র একটি ম্যাচ। আইসিসির হিসেবেও সাকিবকে টপকাতে পারবে না কেউ এমনটিই মনে করছে আয়োজক কর্তপক্ষ।
হুম, সবশেষে বলেই দেওয়া যায় সাকিবই হতে যাচ্ছেন এবারের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। এ যাবতকাল পর্যন্ত ধারণা ছিলো শুধুমাত্র ফাইনালিস্ট বা সর্বোচ্চ সেমিফাইনালিস্ট দলের খেলোয়াড় হলেই সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হবেন। অলিখিত নিয়ম হিসেবেই এ ধারা চলে আসছিলো। কিন্তু সাকিব এবার যা করেছেন তাতে সাকিবকে এড়িয়ে যাওয়াটা ভিষণই দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে। অনেক বিশ্বসেরা কিংবদন্তিরা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন সাকিবেরই সেরা হওয়া উচিত।
সম্ভবত সেটাই হতে চলছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে আইসিসি থেকে সাকিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে আজ ফাইনালে মাঠে থাকার জন্য। তাহলে কি আইসিসি নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে? যে সাকিবই হতে যাচ্ছেন ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’। আর সাকিবও কি এজন্যেই এখনো ইংল্যান্ডে রয়ে গেছেন। সেরা খেলোয়াড় হতে চলছেন আঁচ করতে পেরেই কি তবে দলের সঙ্গে দেশে ফেরেননি সাকিব? আপাতত তাই মনে হচ্ছে। ওহ একটা কথা ওই চিঠির সাথে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে থাকতে গ্রেট শচিন টেন্ডুলকারকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন কথা হলো সাকিব কি গ্রেটদের সাথে পুরস্কার বিতরণ করবেন নাকি গ্রহণ করবেন সেটাই দেখার বিষয়। দেখা যাক তবে কী হয় আজ বাংলাদেেশ সময় মধ্যরাতে…….
/এসএস