

মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ মুরসির গায়েবানা জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদ আল-আকসায়।
১৭ জুন রাতে মুরসির মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের ঘন্টা তিনেক পর আল আকসায় মুসুল্লিরা এ নামাজ আদায় করেন বলে জানা যায়। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ওই জানাযা নামাজের ভিডিওতে দেখা যায় নামাজের পূর্বে সেখানের মুসুল্লিরা মুরসির জন্য দোয়া কামনা করেন।
আরও পড়ুন : ড. মুহাম্মদ মুরসি : জীবনকর্ম ও নতুন মিশরের স্বপ্নদ্রষ্টা
মিশরের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরাইলের সাথে সরাসরি বিরোধীতা করে মুসলিম বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০১২ সালে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নেওয়া তার একটি পদক্ষেপ ইতিহাস হয়ে আছে।
আরও পড়ুন : মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ‘শহীদ’ আখ্যা দিলেন এরদোগান
২০১২ সালের নভেম্বরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল কর্তৃপক্ষ জোর করে অভিবাসনের চেষ্টা করে। ফিলিস্তিনের আন্দোলনকারী যোদ্ধারা হামাসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, এবং এক অসম যুদ্ধ শুরু হয়। এর নাম ছিলো “হিজারাতুস সিজ্জিল”। যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ইসরাইলের কলজে ঝলসে যাওয়া শুরু হয় মুরসীর জন্য। সিংহের মত হুংকার ছাড়েন তিনি।
মুরসি বলেন, “মনে রেখ ফিলাস্তিনেরা একা নয়”। তিনি দ্রুততার সাথে তেল-আবিব থেকে মিশরীয় দূতাবাস প্রত্যাহার করে নেন। তার প্রধানমন্ত্রী কিনদীলকে গাজাতে পাঠালেন সাহায্যের চিহ্নস্বরূপ। যিনি হামাসের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরিপূর্ণ ঐকমত্য ঘোষণা করে আসেন। খুলে দেন রাফাহ সুড়ংগ। এবং দ্রুত যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করেন ইসরাইলকে।
প্রসঙ্গত : গতকাল সোমবার (১৭ জুন) আদালতে বিচার চলাকালীন অবস্থায় মুহাম্মাদ মুরসি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৬৭ বছর বয়সী মিশরের এই জনপ্রিয় নেতাকে জোর করে অন্যায় অভিযোগে কারাগারে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে মিশরের অগনতন্ত্রিক সামরিক শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির ওপর।
আরও পড়ুন : মুরসির ইন্তেকাল ; অসুস্থ অবস্থায় জোর করে আদালতে আনা হয়েছিলো তাকে
জানা গেছে, আদালতে অসুস্থ অবস্থায় মুহাম্মদ মুরসিকে উপস্থিত করা হয়েছিলো। তিনি অসুস্থবোধ করেছেন বলার পরও তার বিচারকার্য পরিচালনার নামে তার মানবিক অধিকার হরণ করারও সংবাদ দিয়েছে অনেক গণমাধ্যম।
এদিকে কারাগারে তাকে সার্বিক সুবিধা ও চিকিৎসা প্রদানেও গড়িমসি ছিলো কারা কর্তৃপক্ষের। অনেকেই মুহাম্মাদ মুরসির ইন্তেকালের সাথে তুলনা করছেন ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর সাথে।
মুরসির ইন্তেকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য : ২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে বিশাল গণঅভ্যুত্থান। এতে পদচ্যুত হন হোসনি মোবারক।
এরপর মিসরের প্রথম অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান জনপ্রিয় নেতা মুহাম্মদ মুরসি।
কিন্তু ২০১৩ সালে ষড়যন্ত্রের সুযোগ নিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরীয় সেনাবাহিনী। পরে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
এরপর ২০১৩ সালে মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করা হয়। এর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার করেছেন। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন : মুরসিকে অবিসংবাদিত নেতা আখ্যা দিয়ে তার মৃত্যুতে ইশা’র শোক প্রকাশ