

ফেনীর সোনাগাজী আলিয়া মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের আসামী সোনাগাজী থানার ওসি (প্রত্যাহার) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরোয়ানা জারির ২০ দিন পার হওয়ার পর বহু আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করে আজ ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হল।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আবেদন জানিয়ে আদালতে মামলা করা ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন পাবলিক ভয়েসকে বলেন,
ওসি মোয়াজ্জেম আদালতে জামিন চাইতে এলে তার গ্রেফতারের রিট আবেদন করে মামলা করা মামলার বাদি ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সোনাগাজী থানার ওয়ারেন্ট তামিল কর্মকর্তা ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রহণ করার পর তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করবেন। সেখানে তার জামিন চাওয়া হলে জামিনের বিরোধিতা করবেন তিনি। যে কোনো ভাবেই তিনি আইনীভাবে ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন ঠেকানোর চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারের সংবাদে আমরা আনন্দ প্রকাশ করছি” সাথে সাথে তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই নুসরাত হত্যাকান্ডের মামলাটি তদারকি করার কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত : ব্যারিস্টার সুমন নুসরাত হত্যার আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়ে আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন।
আরও পড়ুন : নুসরাতকে বিব্রতকর প্রশ্ন করা সেই ওসির বিরুদ্ধে মামলা করলেন ব্যারিস্টার সুমন
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন দেশেই আছেন। তার দেশত্যাগের সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে তিনি গ্রেফতার হবেন।
প্রসঙ্গত : মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করে আলোচিত আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছিলেন।
গত ১৫ এপ্রিল সাইবার আদালতে এ আবেদন করেছিলেন তিনি। পরবর্তিতে পিবিআই তদন্তে ওসি মোয়াজ্জেমকে দোষী সাব্যস্থ করার পর ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন,
মোয়াজ্জেমের নৈতিক অধিকার নেই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে থাকার।
আদালতে করা রিট আবেদনে বলা হয়েছিলো, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে।
২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। আর সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি।
নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ।
ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গেল ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন : নুসরাতের কবরের পাশে ব্যারিস্টার সুমন; দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস