

ফেনীর সোনাগাজী আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের যৌণ হয়রানীর প্রতিবাদ করে অগ্নীদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়া মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের কবরের পাশে উপস্থিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত ও জনপ্রিয় ব্যারিস্টার সুমন আজ (৮ মে) সিলেট থেকে ফেনীতে নুসরাতের বাড়িতে যান এবং তার পরিবারের সাথে নুসরাতের কবর জিয়ারত করেন। সাথে সাথে তিনি তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। নিহত নুসরাত জাহান রাফির ভাই, বাবা এবং মায়ের সাথেও তিনি কথা বলেন। “নুসরাত হত্যার বিচারের জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত তিনি” এমন বিষয়ে তাদের কাছে জোর অঙ্গীকার করে আসেন তিনি।
সেখানে তিনি নুসরাত জাহানের কবরের সামনে দাড়িয়ে বলেন, আমরা নুসরাত জাহানের হত্যাকারী সকলকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এই বিচারের তদারকি করছেন। “দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার তা করা হবে” বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, নুসরাত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলেই গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় আটক আছেন কেবল ওসি মোয়াজ্জেম ছাড়া। তার ব্যাপারেও আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়ে আছে। যে কোনো সময়ে সে অবশ্যই গ্রেফতার হয়ে আইনের আওতায় আসবে।
প্রসঙ্গত : নুসরাত হত্যাকান্ড বিষয়ে তদন্তের বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে অনেকটাই জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি নুসরাত হত্যাকান্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তির বিষয়ে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছেন শুরু থেকেই।
আরও পড়ুন : নুসরাতকে বিব্রতকর প্রশ্ন করা সেই ওসির বিরুদ্ধে মামলা করলেন ব্যারিস্টার সুমন
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ব্যারিস্টার সুমন সাইবার আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করেন। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই গত ২৬ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই বলেছে, সোনাগাজীর তৎকালীন দায়িত্বরত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে। অনুমতি ছাড়া থানায় নুসরাতের ভিডিও করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার এই তিন অভিযোগের তদন্তে ওসি মোয়াজ্জেম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
তখন গণমাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে যেহেতু ওসি মোয়াজ্জেম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন- আমরা চাইবো মাননীয় আদালত যেন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আমি মনে করি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পুলিশ ডিপার্টমেন্টে থাকার আর নৈতিক কোনো অধিকার নেই। গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে পুলিশ বাহিনীর কলঙ্কমুক্ত হবে এবং ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে বলে মনে করি।
মূলত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে।
২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। আর সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গেল ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর সারাদেশে কঠোর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে বিচারের দায়ভার নিজে গ্রহণ করেন তবে হত্যাকান্ডের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত ওসি মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলেও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাকে গ্রেফতারে তৎপর হচ্ছে না পুলিশ এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকের।
আরও পড়ুন :
ওসি মোয়াজ্জেমের নৈতিক অধিকার নেই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে থাকার: ব্যারিস্টার সুমন