ঈদে বাড়ি ফেরা; ভ্রমণে নিরাপদ ও সতর্ক থাকুন, প্রস্তুতি নিন আগেই

প্রকাশিত: ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০১৯

২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সাধারণ মানুষের বাড়ি ফেরার সময়কার একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজধানীর সদরঘাটের সে ভিডিও চমকে দিয়েছিলো মানুষকে। মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের চাঁপে সদরঘাটের প্রবেশ পথের রেলিং ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গিয়েছিলো কয়েকটি পরিবার। ছিলো নারী শিশুও। বহুকষ্টে তারা বেঁচে গেলেও শত শত মানুষ প্রতিবছর নিহত হন ঈদে প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে গিয়ে।


প্রতি বছরই ঈদে সাধারণ মানুষের বাড়ি ফেরা নিয়ে অসংখ্য নিউজ প্রতিবেদন হয়। সতর্ক করা হয় সরকারি ভাবেও। তারপরও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে লাশ হয়ে মৃত্যপথের যাত্রী হন অনেকেই।

২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে প্রাপ্ত তথ্যমতে; বাড়ি ফিরতে গিয়ে নৌ, রেল ও সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ১৩ দিনে নিহত হয়েছেন প্রায় ৪০৫ জন। এ ছাড়া নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ছিলেন প্রায় ২৫ জন। যার মধ্যে ১৮ জনকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। এককভাবে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩৯ জন। আর আহত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জন। অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

এর আগে বিগত তিন বছরে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঈদুল ফিতরে ঘরে ফেরাকে কেন্দ্র করে ৬০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮০৩ জন। তারা আরও জানা, ঈদ যাত্রা শুরুর দিন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছে। একই সময় নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা মেট্রো পুলিশের তথ্যানুযায়ী গত ১৫ বছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০ হাজার। এতে মারা গেছেন ১৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ সেলের হিসাব মতে ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২ হাজার ৪৫৭টি। ২০১৯ এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৪৫ জন। আহত হয়েছেন ২৯ হাজার ৭৮৭ জন। সরকারি হিসাবে প্রতিদিন মারা যান ১২ জন। বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চের মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ১২ লাখ মানুষ দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এ হার ৪০-৫০ গুণ বেশি। একটি দুর্ঘটনায় যদি একটি পরিবারের একজন কর্মক্ষম লোকও মারা যান, তাহলে সেই পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কোনো সময় পুরো পরিবারটিকেই পথে বসতে বাধ্য হয়।


ঈদুল ফিতর বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে চায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে আবাস গড়ে তোলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন জেলার মানুষ। রাজধানীতে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের নিজের বাড়ি নেই। তারা ভাড়া বাসায় থাকেন। ঈদের লম্বা ছুটিতে তাদের বেশিরভাগই চান পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। তাই ঈদের আগেই বাড়ি ফেরার আনন্দে জনস্রোত ভেসে ওঠে রাজধানী ঢাকার বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট আর রেলস্টেশনের দিকে। স্বভাবতই সড়ক, রেল ও নৌপথে ঠাঁই থাকে না কোথাও।

কিন্তু অপরিকল্পিত যাত্রা ও অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা নিমিষেই আনন্দকে পরিণত করছে বিষাদে। যে পরিবারের একজন মানুষ ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ওই পরিবারে ঈদ আনন্দ বলতে কিছু থাকে না। ঈদ আনন্দের পরিবর্তে বিষাদে ছেঁয়ে যায় পুরো পরিবার।

তাই, ঈদে যারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা আগে থেকেই সতর্ক ও নিরাপদ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে নিন। অতিরিক্ত চাঁপ ও বোঝা হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলবেন না।

মন্তব্য করুন