

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ৩৯ তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এ দিন ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতাদের একজন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলেও দাবি করে থাকেন অনেকে। অনাড়ম্বর জীবন যাপন ও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দিক হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন তিনি। দেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্যতম এক উন্নয়ন উচ্চতার মহাসড়কে। যে কারণে জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের” পক্ষ থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। পাকিস্তানের অধিনে চাকরি করা একজর সেনা সদস্যের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা তখন উজ্জিবিত করেছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মেজর জিয়া এবং তাঁর বাহিনী সামনের সারি থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বেশ কয়েকদিন তাঁরা চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশলগতভাবে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করেন। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী,রাঙ্গামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেণী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। তিনি সেনা-ছাত্র-যুব সদস্যদের সংগঠিত করে পরবর্তীতে ১ম,৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই তিনটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান, যুদ্ধ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং তারপর জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের ও জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও বিএনপি প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক বিতর্ক ও আলোচনা থাকলেও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের জনগনের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন এবং দেশের উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে বিএনপি ও সমমনা দল এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো দিনটিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে আসছে।
জিয়াউর রহমানের দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন। আরাফাত রহমান কোকো সেভাবে সরাসরি রাজনীতি না থাকলেও বিএনপির রাজনীতিতে তার প্রভাব ছিলো। ছোট সন্তান আরাফাত রহমান ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। বড় সন্তান তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন তবে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে তিনি লন্ডনে বসে বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ‘জেড ফোর্স’র অধিনায়ক হিসেবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। একই বছর ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। যে দলের প্রধান ও জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
বিএনপির কর্মসূচি :
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে বিএনপি গত বুধবার ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
কর্মসূচিগুলো ৩০ মে থেকে শুরু হয়ে ১০ জুন শেষ হবে। এগুলো সবই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পালন করা হবে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বেলা ১১টায় ঢাকার শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শুধু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকেল সাড়ে ৩টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সভা হবে।
এ ছাড়া ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডের ওপরে বিষয়ভিত্তিক অনলাইন আলোচনা সভা হবে।
দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের আয়োজনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জনসমাগম ছাড়াই এসব সামগ্রী বিতরণ করবেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া, যুগান্তর।
আরও পড়ুন : জিয়াউর রহমানের জন্মদিন ১৯ জানুয়ারি