ব্যারিস্টার সুমনের সামাজিক কার্যক্রম : পিছে লোক লেগে গেছে বলে সতর্ক থাকতে বললো আদালত

প্রকাশিত: ১:১৬ পূর্বাহ্ণ, মে ৮, ২০১৯

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত “ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে” নিয়ে আদালতপাড়া উত্তাল হয়ে আছে। সম্প্রতি পঞ্চগড়ে কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটের আবেদন করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। এ আবেদনের ভিত্তিতে আদালতে হওয়া শুনানিতে সুমনকে বলা হয়েছে সতর্ক থাকতে কারণ তার ক্যারিয়ার ধ্বংশ করার জন্য একটি গ্রুপ তার পেছনে লেগেছে। তাছাড়া তিনি যেভাবে সামাজিক কার্যক্রম করেন তা নিয়েও অনেকে তার পেছনে লেগে আছে বলে জানিয়েছে আদালত।

আদালতপাড়ায় এক ভিডিও সাক্ষাতকারে আজ (৭ মে) ব্যারিস্টার সুমন এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আদালত আমার সামাজিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং সাথে সাথে আমাকে বলেছেন সতর্ক থাকার জন্য কারণ একটি গ্রুপ ইতিমধ্যে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে” তবে আদালত চাচ্ছে আমি আমার সামাজিক কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাই।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি আল্লাহকে খুশি করার জন্যই এসব কাজ করি। মানুষের কষ্ট আমার সহ্য হয় না তাই আমি যেখানে সমস্যা হয় সেখানে ছুটে যাই। এতে কেউ যদি ঈর্ষাপরায়ণ হয় তবে আমি কী করতে পারি। আমি আমার কাজ চালিয়ে যাবো এভাবেই।

তবে সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমন কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটের আবেদন করার পর অনেকে তার বিষয়ে একটি প্রশ্ন তুলে বলেছেন যে, ব্যারিস্টার সুমন যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সরকারী প্রসিকিউটর হওয়ার সুবাদে তিনি এ ধরণের একটি মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

কিন্তু এর জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, “আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে আমি যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম এবং যুদ্ধাপরাধিদের বিষয়ে আমি কখনওই আপোষ করবো না। তাদের পক্ষে যাবো না। তবে তার মানে এই নয় যে, আমি অন্য কোনো মামলা পরিচালনা করতে পারবো না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার সময় আমাকে বলা হয়নি যে আমি কোথাও যেতে পারবো না। একজন আইনজীবী হিসেবে আর একজন আইনজীবীর মর্মান্তিক মৃত্যুর আমি কঠোর প্রতিবাদ করবোই। তাছাড়া আমি আমার নিয়োগপত্র নিয়ে এসেছি তা আমি আদালতে দেখাবো।

এ বিষয় আরও কয়েকজন আইনজীবীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, “ব্যারিস্টার সুমনের কাজ সর্বোচ্চ প্রশংসাযোগ্য। যারা সমাজের ও রাস্ট্রের ভালো চায় না তারাই মূলত তার বিরোধিতা করছে বলেও বলেন তারা।

প্রসঙ্গত: পঞ্চগড়ে কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটের আবেদন করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। এর আগে ফেনীতে অগ্নিদদ্ধ করে নুসরাত হত্যার সময় এক পুলিশের আচরণের বিষয়েও রিট করেছিলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সোমবার (৬ মে) বলেন, কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পরবর্তিতে হাসপাতালে মারা যাওয়া আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের ব্যাপারে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে পারমিশন নেওয়া হয়েছে। আমি নিজেই রিট আবেদনের বাদী হয়েছি।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী পলাশ জেলার আটোয়ারি উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বড়সিংগিয়া গ্রামের প্রণব কুমার রায়ের ছেলে।

জানা যায়, তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ মার্চ দুপুরে মানববন্ধন করার সময় প্রধানমন্ত্রীর নামে পলাশ কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। রাজীব রানা নামে এক তরুণ তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। তাকে আটক করে ২৬ মার্চ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৬ এপ্রিল কারা হাসপাতালের বাথরুমে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ মারা যান।

ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন জানান, কারা হেফাজতে আসামি কীভাবে অগ্নিদগ্ধ হবে? অগ্নিদগ্ধ হওয়ার উপকরণ তার কাছে কীভাবে এলো? সে সুযোগ তো নেই। আর এ ঘটনায় কারাকর্তৃপক্ষ নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে কীভাবে তদন্ত করবে। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছি।

এছাড়া আবেদনে কারা অভ্যন্তরের নিরাপত্তা সংস্কারের আর্জি জানানো হয়েছে। আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি প্রিজন, রংপুর বিভাগের ডিআইজি, পঞ্চগড়র কারাগারের জেলারকে।

মন্তব্য করুন