 
                                       
আজ রোববার, ১৪ শাবান, ১৪৪০ হিজরি, ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবেবরাত, যা লাইলাতুল বরাত বা মুক্তি রজনি নামেও পরিচিত। তবে এ রাতকে ভাগ্য রজনি বলা বা এ রাতে ভাগ্য নির্ধারণ হয় এমন বিশ্বাস রাখা ইসলামসম্মত নয়।
পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রাত জেগে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত, জিকির-আজকার, বিশেষ দোয়াসহ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করে থাকেন। অনেকে গরিবদের মধ্যে হালুয়া-রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ ও দান-সদকাহ করেন। নফল রোজা রাখেন অনেকে। শবেবরাত উপলক্ষে কাল সোমবার সরকারি ছুটি। বন্ধ থাকবে অফিস আদালতসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তবে এ বছর শবেবরাত ও শাবান মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যা শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিলো কিন্তু “ধর্মীয় বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ উচিত নয়” মন্তব্য করে বিষয়টি ইসলামি ফাউন্ডেশন ও ওলামায়ে কেরামের উপর ছেড়ে দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। যেখানে কওমী আলেমদের মধ্যে পরিচিত মুখ বিজ্ঞ আলেম ও মারকাযুদ্দাওয়ার পরিচালক মাওলানা আ. মালেককে প্রধান করে একটি টিম গঠন করে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিষয়টির সুরাহা হয় এবং ২১ এপ্রিল দিনশেষের রাতকেই শবেবরাত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : শবে বরাত কিছু ভ্রান্তি নিরসন
শবেবরাত একটি ফারসি বাক্য। একে আরবিতে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। যার শাব্দিক অর্থ মাগফিরাত বা মুক্তির রাত। উপমহাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবেবরাত পালন করা হয়। এ রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করেন বলেও বিশ্বাস মুসলামদের। তবে এ রাতে আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি বা কারো কারো ছাড়াছাড়ি নিয়েও ওলামায়ে কেরাম কথা বলে থাকেন।
আরও পড়ুন : শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান জরুরী : আল্লামা মাহমূদুল হাসান
হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, রাসূল সা: মধ্য শাবানের রাতে নফল নামাজ আদায় ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সূরায় ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে_ ‘এটা সে রাত, যাতে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ করা হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত ৩ ও ৪ )। কোনো কোনো তাফসিরকারক এ আয়াতকে উদ্ধৃত করে মধ্য শাবানের রাতকে ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ আখ্যায়িত করে সেটিকেই শবেবরাত বলে অভিমত দিয়েছেন। হজরত ইকরামাহসহ কিছু তাফসিরকারকের মতে, পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ দ্বারা শাবান মাসের মধ্যভাগের রাতকে (১৪ শাবান) বোঝানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : শবে বরাত সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য
অন্য দিকে হজরত ইবনে আব্বাস রা., ইবনুল উমার রা., মুজাহিদ রা., কাতাদা রা., হাসান বসরিসহ রা. সহ বেশির ভাগ প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ’ বলতে লাইলাতুল কদরকে আখ্যায়িত করেছেন, যা রমজান মাসে আসে।
আরও পড়ুন : শবেবরাত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত: মুফতী আব্দুল মালেক
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সা. শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন; কিন্তু উম্মতকে এ মাসে বেশি রোজা রাখতে নিষেধ করেন, যাতে রমজানের জন্য সতেজ থাকে। অবশ্য তিনি মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় করা ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। (ইবনে মাজা : কিতাবুল ইকামা)।
শবেবরাতের রাতে আলোকসজ্জারও আয়োজন করে থাকে অনেকে, যা সম্পূর্ণ বিদয়াত বলে মতামত দেন ওলামায়ে কেরাম । ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মতামত ওলামায়ে কেরামের। শবেবরাতের রাতে পটকা ফোটানোর একটি প্রবণতা শহরাঞ্চলে লক্ষ করা যায়, যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ও বেআইনি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই পটকা ফোটানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ বছর এ নিয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
আরও পড়ুন : সহিহ হাদিসের আলোকে শবে বারাত
শবেবরাত সম্পর্কে দেশের রাজনৈতিক নেতা ও দলের বিভিন্ন বানী প্রদান করেন থাকেন। শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাণী : বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শবেব রাত মুসলমানদের জন্য এক মহিমান্বিত ও বরকতময় পবিত্র রজনী। মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বারতা নিয়ে পবিত্র লায়লাতুল বরাত প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমাদের মাঝে সমাগত।’
তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশে শবে বরাত প্রধানত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালিত হয়। মানবজাতিকে আল্লাহ্ তা’য়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয় পবিত্র এই রজনী। নফল রোজার পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের লক্ষ্যে মুসল্লিগণ সারারাত জেগে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন। পবিত্র শবেবরাত সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক, মহান আল্লাহ দরবারে রাষ্ট্রপতি এ প্রার্থনা করেন।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শবেবরাতের এই পবিত্র রজনীতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি সৌভাগ্যমণ্ডিত পবিত্র শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সৌভাগ্যের এই রজনী মানব জাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এই রাতে তিনি ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন। তিনি কামনা করেন যে, ‘পবিত্র শবে বরাত আমাদের সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনবে এবং মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করবেন।
বিএনপির বাণী : পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সব মানুষের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও উন্নতি কামনা করেছে বিএনপি। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়; বিশ্ব মুসলিমের জন্য পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত। এ মহান রাতে আল্লাহ পাক তার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। আর এ কারণেই এই পবিত্র রাতে ধর্মপ্রাণ বান্দারা সারারাত আল্লাহর দরবারে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শবেবরাত উপলক্ষে ইসলামি ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিভিন্ন কর্মসূচি
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ মাগরিব থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-না’ত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম, জিকির, দোয়া ও বিশেষ মুনাজাত।
অনুষ্ঠানমালার শুরুতে সন্ধ্যা ৭.০৫ টায় ‘শবে বরাতের ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন তেজগাঁও মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আজহারি। রাত ৯.০৫টায় ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম। রাত ১১.৪০ টায় ‘শবেবরাত ও রমজানের তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা এহসানুল হক জিলানী। রাত ১.৫৫টায় ‘তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সব শেষে ফজরের নামাজের পর আখেরি মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এছাড়াও দেশের সকল মসজিদে এ রাতে ধর্মপ্রান মুসলমানগন ইবাদাত বন্দেগী ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন আমল করবেন। সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতায় এ রাত পালিত হবে।
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস
 
		
