লোকসভা নির্বাচন: চলছে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ

প্রকাশিত: ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৯

ভারতে ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। আজ সকাল থেকে দেশটির ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুইটি অঞ্চলের ৯১টি আসনে নাগরিকরা ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। অনেক কেন্দ্রে ভোর পাঁচটা থেকে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন পুরুষ ও নারী ভোটাররা।

‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন’ হিসেবে খ্যাত এ নির্বাচন চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হবে। মোট ৯০ কোটি ভোটার অংশ নেবেন। এর মধ্যে দেড় কোটি নতুন ভোটার।

এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং জাতীয় কংগ্রেস। প্রথম দফায় ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত দুইটি অঞ্চলের ৯১টি আসনের জন্য ভোট নেয়া হবে। এসব আসনে ১ হাজার ২৮৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

ভারতে লোকসভা বা সংসদের নিম্ন কক্ষে মোট ৫৪৩টি আসন রয়েছে। সরকার গঠন করতে কোনো দল বা জোটের কমপক্ষে ২৭২টি আসন প্রয়োজন হয়।

লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে গত এক মাস ধরেই সরগরম ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকার ও বিরোধীদের একের পর এক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে উত্তপ্ত ছিল প্রচারণা।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের দুইটি আসন ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িশ্যা, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভার ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচনের একদিন আগে আজ আমেথি আসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, লোকদল, তৃণমূল কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, তেলেগু দেশম, আম আদমি পার্টির মতো রাজ্যভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে যেসব রাজ্যের পোলিং স্টেশনগুলো ভোট গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত হবে সেগুলো হলো: অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লক্ষদ্বীপ।

এর মধ্যে কিছু কিছু রাজ্যে, যেমন অন্ধ্র প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডে, একদিনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে গেলেও উত্তর প্রদেশের মত অনেক রাজ্যে কয়েকটি ধাপে ভোট গ্রহণ চলবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন ভোটারদের প্রতি পাকিস্তানের বালাকোটের মুজাহিদ শিবিরে ভারতের অভিযান এবং পুলওয়ামার হামলায় নিহত সেনাদের প্রতি তাদের ভোট উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলো সেনা সদস্যদের জীবন নিয়ে বিজেপির রাজনীতির প্রতিবাদ জানিয়েছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন ভারতের অর্থনীতিতে বিরাট সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু সেই থেকে দেশটিতে বেকারত্বের হার কমেনি, বরং বেড়েছে।

সমালোচনা-বিতর্কে জড়িয়েছে বড় বড় নীতিমালাগুলো। হয়তো সে কারণেই ক্ষমতা ধরে রাখতে তার বিজেপি এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় হিন্দু জাতীয়তাবাদকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে মূল কিছু ইস্যু ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান ইস্যুটি। কেননা এবারের নির্বাচনে দেড় কোটিই নতুন ভোটার।

এছাড়াও অনেক বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বর্ণপ্রথা ও ধর্মীয় বিভেদপূর্ণ ধারণা। ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই মোদি ও তার দল বারবারই হিন্দুত্ববাদ উসকে দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিজেপির গত ৫ বছরে ভারতে শুধু বেআইনিভাবে গরু সরবরাহ ও গরুর মাংস খাওয়া বা বিক্রির সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু কট্টরপন্থি বেশ কিছু সহিংস দল ও গোষ্ঠীর আক্রমণে অন্তত ৪০জন মুসলিম নিহত হয়েছে।

একই সঙ্গে হিন্দুদের উঁচু ও নিচু বর্ণের ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সুবিধার বিপুল ব্যবধান রাখার বিষয়টি উচ্চবর্ণে প্রশংসিত হলেও অন্যান্য বর্ণের জনগোষ্ঠীর জন্য তা হয়ে উঠেছে ক্ষোভের কারণ।

ছয় সপ্তাহব্যাপী এ নির্বাচনযজ্ঞ শেষ হতে হতে আপাতদৃষ্টিতে প্রায় গুরুত্বহীন অনেক ছোট বিষয়ও শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে দেখা দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

অন্যবারের চেয়ে রাজনৈতিক জটিলতাও বেশি এবারের লোকসভা নির্বাচনে। গতবারের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপিসহ স্থানীয় দলগুলোর প্রতি যে বিশেষ অনুরাগ বিদ্যমান ছিল, বেশকিছু রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনেই এর মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা ৭ ধাপের লোকসভা নির্বাচনেও থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইএ

মন্তব্য করুন