লোকসভা ইস্যু: মুসলিম লীগের পতাকা পাকিস্তানের মতো, বিতর্ক কীসের?

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯

দক্ষিণ ভারতের কেরালায় একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল)।

৭০ বছরেরও বেশি পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি ভারতের পার্লামেন্টে প্রায় সবসময় একাধিক এমপি-ও পাঠিয়ে এসেছে। দলটির পতাকার রং সবুজ। এক কোণায় সাদাতে চাঁদ-তারা আঁকা থাকে।

কেরালার মুসলিম লীগের এই পতাকা নিয়ে আচমকাই ভারতে বিরাট তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

সম্প্রতি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী যখন কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়েছিলেন, তখন তার মিছিলে ছিল মুসলিম লীগের ওই পতাকার ছড়াছড়ি।

সেটা হয়তো খুব স্বাভাবিক, কারণ বহু বছর ধরেই কেরালাতে আইইউএমএল হল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী – একই জোটের অংশ হিসেবে তারা বহু বছর রাজ্যের ক্ষমতাতেও থেকেছে।

কিন্তু কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক শোভাযাত্রায় কেন চাঁদ-তারা খচিত সবুজ পতাকা থাকবে, এই প্রশ্ন তুলে ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা।

এমন কী এই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে সাদৃশ্য আছে, এমন একটি পতাকা ভারতের কোনও রাজনৈতিক দল আদৌ কেন ব্যবহার করবে?

বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রকাশ্য জনসভায় এই পতাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর মিছিলে ভারতের তেরঙা পতাকা নেই, কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক হাত নেই – শুধু আছে মুসলিম লীগের চাঁদ-তারাওলা সবুজ পতাকা – এটা কেমন কথা?

কেরালায় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কেপিএ মাজিদ বলেছেন, ‘ওয়েনাডে রাহুল গান্ধীর মিছিলে কোনও পাকিস্তানের পতাকাও ছিল না, ইসলামী পতাকাও ছিল না। যা ছিল, সেগুলো শুধু আমাদের দলেরই পতাকা! আর এই পতাকা আমাদের সঙ্গে আছে দলের জন্মলগ্ন থেকেই!’

‘কাজেই ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের এই পতাকা নিয়ে যে সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে তা পুরোটাই ভিত্তিহীন।’

তারা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সঙ্গে আইইউএমএলের পতাকার অনেক ফারাকও আছে। পাকিস্তানের পতাকার একপাশে যেমন চওড়া সাদা ফালি আছে, কেরালার দলটির পতাকায় কিন্তু তা নেই!

ইতিহাসও বলছে, কেরালার এই রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে ভারতের দেশভাগের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই – কারণ আইইউএমএলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে ভারতের স্বাধীনতার পর, ১৯৪৮ সালে।

অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ-র নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়েছিল যে অল ইন্ডিয়া মুসলীম লীগ, সেই দলটি কিন্তু দেশভাগের পর পরই ভেঙে দেওয়া হয়।পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে সেই দলটির আলাদা আলাদা শাখা তৈরি হয়।

আর ভারতে মহম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বে তখনকার মাদ্রাজে ১৯৪৮ সালের ১০ মার্চ জন্ম হয় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের। ভারতের প্রায় প্রতিটি নির্বাচিত লোকসভাতেই (কেবলমাত্র দ্বিতীয়টি বাদ দিলে) আইইউএমএলের এক বা একাধিক এমপি ছিলেন। এখনকার কেরালা বিধানসভাতেও তাদের আঠারোজন নির্বাচিত এমএলএ আছেন।

১৯৭৮ সালে কেরালাতে মুখ্যমন্ত্রী সি এইচ মহম্মদ কোয়া-র নেতৃত্বে আইইউএমএল জোট সরকারও গঠন করেছিল। দক্ষিণ ভারতের আর একটি রাজ্য তামিল নাডুর বিধানসভাতেও আইইউএমএল সদস্যরা একাধিকবার জিতেছেন।

কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই পুরনো রাজনৈতিক দলটির পতাকাকে ঘিরেই এখন বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিবিসি।

আইএ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন