

কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত-এর উদ্যোগে আয়োজিত মহাসম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম একত্রিতভাবে কাদিয়ানীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। সিদ্ধান্তে ৪ দফা ও ৩ টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৭ মার্চ রাজধানীর খিলগাঁও উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে।
৪ দফা সিদ্ধান্ত হলো,
১. পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারকেও কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবিলম্বে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করতে হবে।
২. কাদিয়ানী সম্প্রদায় কোরআন হাদিসের ভিত্তিতে, সাড়া দুনিয়ার ওলামা-মাশায়েখ ও মুফতিগণের ঐক্যমতে তারা মুসলমান নয়, কাফের। তাই তাদের জন্য ইসলাম ও মুসলমানের পরিভাষা যথা- নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, আযান, মুয়াজ্জিন, মসজিদ, ইমাম, ইজতেমা, ইত্যাদি ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৩. কাদিয়ানীরা যেহেতু মুসলমান নয় সেহেতু তাদের কোন মসজিদ থাকতে পারে না। তাদের উপসনালয়কে মসজিদ নাম দেয়ার কারণে অনেক মুসলমানের নামাজ নষ্ট হচ্ছে। তাই তাদের সকল উপাসনালয়কে সরকারি উদ্যোগে উদ্ধার করে মুসলমানদের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।
৪. কাদিয়ানীরা নিজেদের মুসলমান পরিচয় দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করে কাদিয়ানীদের দলভুক্ত করছে। তাই তাদের যাবতীয় অপতৎপরতা, বই-পুস্তক, লিফলেট, লিটারেচার মুদ্রন, প্রচারণা, প্রকাশনা, সংরক্ষণ ও বিতরন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
ঘোষিত ৩ টি কর্মসূচি
১- ঢাকা মহানগরসহ পার্শ্ববর্তী ৮টি জোনে এক একটি করে খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের ব্যবস্থা করা।
২- প্রতি জেলায় কমিটি গঠন করে এক একটি করে খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলনের ব্যবস্থা করা।
৩- বাংলাদেশের প্রত্যেক মসজিদে জুমআর বয়ানে খতমে নবুওয়ত ও কাদিয়ানীয়াত বিষয়ে দলীল-প্রমাণ সহকারে সাধারণ মুসল্লিদের অবগত করা।
আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত-এর উদ্যোগে আয়োজিত মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী। তিনি তার বক্তব্যে কাদিয়ানী ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবাইকে সতর্ক করেন।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দিয়েছেন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী মহাপরিচালক আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, কাদিয়ানীরা কাফের যারা তাদের কাফের মানবে না তারাও কাফের। তিনি অবিলম্বে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সরকারকে যথাযোগ্য পদক্ষেপ নিতে আমন্ত্রণ জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকার জামিয়া রাহমানিয়ার শাইখুল হাদিস ও আলোচিত বক্তা মাওলানা মামুনুল হক বলেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও শাহরিয়ার কবিররা কাদিয়ানীদের পক্ষাবলম্বন করে এদেশের ওলামায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সংসদে বসে আলেম-ওলামাদের বিষোদগার ও কাদিয়ানীদের পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে। এমনকি তিনি অভিযোগ করে বলেন ইনু মেননরা এদেশের ওলামায়ে কেরামদের সম্প্রীতির শিক্ষা দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের সম্প্রীতি শিক্ষা নিতে হবে না।। তিনি আরও বলেন একটি সাধারণ বিস্কুট বা চানাচুরের কোম্পানি যদি তাদের পণ্যে অন্যের সিল দিয়ে বাজারজাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়, আদালতে তার বিচার হয়, তাহলে মুসলিমদের প্রধান বস্তু ঈমান নিয়ে যারা প্রতারণা করছে, মুসলমানদের ইমানের লেভেল লাগিয়ে যারা সাধারণ মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন আইন হবে না। তারা কেন বিচারের আওয়াত আসবেন না।
এছাড়াও সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মালিবাগ জামিয়ার মুহতামিম আল্লামা আশরাফ আলী, বারিধারা জামিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা নুর হুসাইন কাসেমী, যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাতিমম ও মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির আল্লামা মাহমুদুল হাসান, জামিয়া নুরিয়ার কামরাঙ্গিচরের মুহতামিম মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, জামিয়া কিশোরগঞ্জের মুহতামিম মাওলানা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, ফরিদাবাদ জামিয়ার মুহাতিমম ও বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, আরজাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, হেফাজতের ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রমুখ।