কওমী মাদরাসাকে ‘আমাদের মাদরাসা’ বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:০২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০১৯

জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে কওমী মাদরাসা ও মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ মার্চ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একটানা প্রায় সাত মিনিট কওমী মাদরাসার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি কথা শুরু করেন_“আমাদের কওমী মাদরাসা” শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে। অনেকেই বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। কওমী মাদরাসাকে প্রধানমন্ত্রী নিজের মনে করে কথা বলেছেন সংসদে_এমন মন্তব্যও এক নবীন আলেমের।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদরাসা নিয়ে দেয়া দীর্ঘ বক্তব্যে বেশ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কওমী মাদরাসা ও দারুল উলুম দেওবন্দের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন,

“কওমী মাদরাসা সৃষ্টি হয়েছে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে, ‘মাদ্রাসাশিক্ষার মাধ্যমে থেকে এই ভূখণ্ডে মুসলমানদের শিক্ষা শুরু হয়েছিল বলেও ইতিহাস তুলে আনেন তিনি।”

বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে এনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫টা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের পড়াত। প্রায় ২০ লাখ ছেলেমেয়ে সেখানে পড়াশোনা করে। মাদ্রাসা আছে বলেই যাদের মা–বাবা নেই তারা সেখানে স্থান পাচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া পাচ্ছে। কাজেই আমরা তাদের অস্বীকার করতে পারি না।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারী সংসদে রাষ্ট্রপতির আলোচনার সম্পূরক বক্তব্যে গিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন কওমী মাদরাসাকে “বিষবৃক্ষ” আলেম ওলামাদের কার্যক্রমকে “মোল্লাতন্ত্র” প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফীকে “তেতুল হুজুর” বলে কটাক্ষ করাসহ মহানবী স. এর খতমে নবুওয়াত বিষয়কে অনেকাংশেই অস্বীকার করে তিনি কাদিয়ানীদের পক্ষাবলম্বন করে বক্তৃতা দিয়েছেন। সেই সাথে সাথে কওমী মাদরাসা সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মেননের সে বক্তৃতা ‘কটাক্ষপূর্ণ’ ও ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে দেশের আলেম সমাজ এবং মুসলমানরা কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকায় প্রতিবাদ প্রোগ্রামও করেছে এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে। খোদ জাতীয় সংসদেও গত ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ মেননের বক্তৃতার প্রতিবাদে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং ১১ তারিখ দ্বিতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভীও রাশেদ খান মেননের বক্তৃতার প্রতিবাদ করেন।

১১ মার্চ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বক্তৃতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কেউ কেউ বলবেন মাদ্রাসা হচ্ছে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারখানা। কিন্তু আমি এটার সঙ্গে একমত নই। হোলি আর্টিজানে জড়িতরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা। উচ্চশিক্ষিত পরিবার ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির আইন পাস হয়েছে সর্বসম্মতভাবে। এটা নিয়ে তো আর কথা থাকতে পারে না। এই বিষয়টি নিয়ে আর বোধ হয় প্রশ্ন আসবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য কওমী মাদরাসার সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ অনেকেই বেশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রাশেদ খান মেননের বক্তৃতার কারণে দীর্ঘদিনের যে অস্বস্তি এবং চাপা ক্ষোভ ছিল তা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে।

মন্তব্য করুন