

আবদুল্লাহ আল মাসউদ
তিলাওয়াত শেষে সাদাকাল্লাহুল আজীম বলাটাকে অনেকে মনে করেন ভারতীয় প্রথা। আরবে এটি নাই। বিষয়টা ভুল ভাবনা। এর প্রচলন আজমে যেমন আছে আরবেও আছে। অনেকেই এটাকে বিদআত বলতে চান। তাদের দাবিটি সঠিক নয়।
শায়খ আবূ যুহরার ফতোয়ার কিতাব পড়তে গিয়ে এই বিষয়ে একটা প্রশ্ন নজরে এলো। তিলাওয়াত শেষে এটি বলা কতোটুকু ঠিক বা বেঠিক সেটা জানতে চেয়েছেন একজন প্রশ্নকর্তা। তিনি উত্তরে যা লেখলেন বেশ ভালো লাগলো। তার উত্তরটা সংক্ষেপে বলছি।
ইমাম নববী তার কিতাব ‘আত-তিবয়ান’-এর মধ্যে তিলাওয়াতের আদব উল্লেখ করে বলেন :
“যখনই কোনো রহমতের আয়াত পড়বে তখন আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। আর যখন কোন শাস্তির আয়াত আসবে তখন আল্লাহর কাছ থেকে অকল্যাণ এবং শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। অথবা বলবে- হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে নিরাপত্তা কামনা করি। এমনিভাবে যখন আল্লাহর বড়ত্বের কোন আয়াত আসবে তখন তার বড়ত্বের ঘোষণা দিবে এবং বলবে- সুবহানাল্লাহ অথবা তাবারকা ওয়া তাআলা।
নবীজি যখন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআনের আয়াতের মতো করে জবাব দিতেন। এই বিষয়ে তিনি দুইটি হাদীস পেশ করেছেন। আমি একটা তুলে দিচ্ছি-
আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ওয়াত ত্বীন-ওয়ায যাইতূণ”-এর “আলাইসাল্লাহু বি-আহকামিল হাকিমিন” বলার সময় তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা ওয়া আনা আলা যালিকা মিনাশ শাহিদীন”। এমনিভাবে কেউ “লা উক্বসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি”-এর শেষ আয়াত “আলাইসা যালিকা বি-ক্বাদিরীন ‘আলা আই যুহইয়াল মাওতা” পাঠ করার সময় যেন অবশ্যই বলেঃ “বালা।” আর যে ব্যক্তি “সূরাহ মুরসালাত” তিলাওয়াত করবে এবং তার “ফাবি-আইয়ি হাদীসিন বা’দাহু য়ুউমিনূন” আয়াতটি পাঠ করবে, যে যেন অবশ্যই বলেঃ “আমান্না”।
বর্ণনাকারী ইসমাইল বলেন, অতঃপর আমি আরবের ঐ বেদুইন বর্ণনাকারীকে দেখতে যাই তার বর্ণনাটি সঠিক কিনা জানার জন্য। তখন বর্ণনাকারী আমাকে বলেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি মনে করেছো আমি হাদীস ভুলে গিয়েছি? আমি ষাটবার হাজ্জ করেছি এবং প্রত্যেক হাজ্জে আমি কি ধরনের উটের উপর আরোহণ করেছি, তা এখনও আমার স্মরণ আছে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৮৮৭]
সবশেষে তিনি উপসংহার টানেন এভাবে-
‘এসব কিছু থেকে আমরা বুঝতে পারলাম তিলাওয়াতকারী যখন কুরআন তিলাওয়াত শেষ করে এবং বলে- সাদাকাল্লাহুল আজীম তারমানে সে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। সুতরাং এতে হারাম বা মাকরূহ হবার কিছু নেই। বরং আমাদের উল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা যায় এটি পছন্দনীয়।
[ফাতাওয়া আশ-শায়খ মুহাম্মাদ আবূ যুহরা : ৮৩-৮৪ ]
ক্বুলতু : সাদাকাল্লাহুল আজীম মানে হলো মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন। এটি তিলাওয়াতকৃত বিষয়ের সত্যায়ন ও স্বীকৃতি। সে হিসেবে একে নাজায়েয বলার কিছু দেখি না। হাদীসেও এটি বৈধ হবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে সতর্কতাস্বরূপ এটি বলার সময় কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করার মতো সুর দিয়ে বলবে না। বরং সাধারণভাবে বলবে। যাতে করে আয়াতের সাথে এর পার্থক্য হয়ে যায়। অন্যথায় কেউ কেউ মনে করতে পারে, এটিও বোধহয় কুরআনেরই আয়াতাংশ।