

মুহা. রবিউল ইসলাম
গরীবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন একটি নয় দুটি নয় হাজারো পরিবারের দেখা মিলবে স্বাধীন বাংলার এই জনপদে। কিন্তু তবুও যেন বিত্তবানদের চেয়েও আনন্দময় চাহনি থাকে ওদের চোখে মুখে, কারন ওরাই তো সেই খেটে খাওয়া মানুষ যাদের শ্রমে দেখা মেলে কষ্টের ঘাম। যাদের উপার্জনে থাকে হালালের ছোঁয়া।
কিন্তু সমাজে এদেরকে দেয়া হয় না তাদের ন্যায়সঙ্গত মর্যাদা বরং হতে হয় লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও অপমানিত। যেনো গরীব হয়ে জন্ম নিয়ে তারা হয়ে গেছে সমাজের বোঝা। সে বোঝা কেউ চায় ডাস্টবিনের নর্দমা কিংবা কোন এক খাদের কিনারায় রেখে আসতে। কেউ চায় তাদের নির্বিচারে অত্যাচার করতে। কিন্তু আসলেই কি তাদের পরিনতি এমনই হবার মতো?
একজন গরীব হতদরিদ্র পিতার সাংসারিক ভরণপোষণের দায়িত্বটা তার জন্য অনেকাংশেই দুরহ হয়ে পড়ে। অনেকক্ষেত্রেই তাদের পরিবারের সন্তানদেরকে তেমন একটা পড়ালেখা করানো সম্ভব হয়না। ফলশ্রুতিতে করতে হয় কল-কারখানায় কিংবা কোন এক জায়গায় পরিশ্রম। কোনমতে কেটে যেতে থাকে দরিদ্র ওই পরিবারটির সংসার।
দিন, মাস, বছর অতিক্রান্ত বা অতিবাহিত হবার সাথে সাথেই দরিদ্র পরিবারটির কপালে চিন্তারেখার ভাঁজ ফেলতে শুরু করে পরিবারের সদ্য কিশোরী হওয়া মেয়েটি। কখনো বখাটেদের উৎপাত, কখনও কোন কোন বিত্তবানদের লোলুপ দৃষ্টি। যে দৃষ্টি এড়ায় না দরিদ্র পিতা-মাতার উদ্বিগ্ন মনকে। খুঁজতে শুরু হয় তার জন্য পাত্র! বিদায় দিতে হয় অল্পবয়সী মেয়েটাকেই।
সামাজিক নিয়ম অনুসারে মেয়েটির জন্য যে পাত্র ঠিক হয় তা উল্লেখযোগ্যভাবে তেমন সামাজিক মর্যাদাসম্মন্ন হয় না। শিক্ষা-দিক্ষাও তেমন থাকে না তার। ছেলের পরিবার থেকে শুরু করে সবার চাহিদা থাকে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু বাগিয়ে নেয়া। যার নাম হয় ‘অভিশপ্ত যৌতুক’
ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষের দেখা সাক্ষাৎ পর্ব শেষে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারিত হয়। তবে বিপত্তি বাঁধে একটা জায়গায়__ ছেলেকে কিছু দিতে হবে। যা দিতে গিয়ে মেয়ের বাবার সর্বস্ব খুইয়ে ফেলতে হয় প্রায়ই। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবার এই বোঝা বহন করতে পারে না। এরপরই শুরু হয় নির্যাতনের ধাপ।
যৌতুকের টাকার জন্য অত্যাচার শুরু হতে থাকে মেয়েটির উপর। দুর্দশাগ্রস্থ, হতাশার চাদরে নিমজ্জিত দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষটি পারেনি আজও যৌতুকের টাকাগুলো যোগাড় করতে। নির্যাতনের মাত্রা তীব্র হয়। নির্যাতনের তীব্রতা এতোটাই সইতে না পেরে মেয়েটিকে অকালে ঢলে পড়তে হলো মৃত্যু কোলে।
হ্যাঁ প্রিয় পাঠক : এমন হাজারো কন্যার মৃত্যু অহরহ ঘটছে আমাদের সমাজে। যেখানে যৌতুকের হাতে জিম্মি হয়ে আছে অসংখ্য হতদরিদ্র পিতা-মাতার অসহায় কন্যারা। আমাদের অতি শীঘ্রই সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়তে মোকাবেলা করতে হবে যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে মুছে দিতে হবে এই ধরনের অন্যায় আবদার ও নির্লজ্জতাকে। যাতে করে আগামির সন্তান ও পরিবার মুক্তি পায় “যৌতুক” নামক সামাজিক ব্যাধি থেকে।
যৌতুকের কষাঘাতে সমাজে যে ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে তা দুর করতে না পারলে অদুর ভবিষ্যতে সমাজ হয়ে পড়বে আরও নোংরা_আরও কলূষিত। তাই সমাজ ঠিক করতে এই ব্যাধি দুর করা অতি জরুরি।
আসুন ; যৌতুককে সম্পুর্ন না বলে দেই
সমাজ সংষ্কারে ইসলামকে সঙ্গী করে নেই।
লেখক : অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক