বাঙালি জাতিসত্তার “অগ্নিঝড়া মার্চ” শুরু

প্রকাশিত: ২:১৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০১৯
অগ্নিঝড়া মার্চে শেখ মুজিবের আঙ্গুল উঁচিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে শুরু হল বাঙালি জাতিসত্তার সাথে মিশে থাকা অগ্নিঝড়া একটি মাস__ মার্চ মাস। স্বাধীনতার মাস। ১৭৭১ সালের মার্চ মাসেই রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার বীজবৃক্ষ। ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে আছে এ মাসেরই শেখ মুজিবের অগ্নিঝড়া ভাষণের সে দিন। রেসকোর্সের তপ্ত ভাষণে বাংলার জনগণ পেয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম বানী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমি “মুজিববিহীন” কল্পনা করতে পারি না_ করিও না। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মনে হয়েছে__স্বাধীনতার প্রহর শুরু হল যেন। শুরু হল অদম্য সাহস আর আত্মপ্রত্যয়ের অগ্নিঝরা মার্চ। ১৯৭১ এর এই মাসকে ধরা হয় মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত ক্ষণ হিসাবে। এ মাসে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে স্বাধীনতাকামী জনতা। নতুন পতাকা, বজ্রকন্ঠ ঘোষণা ও কালরাত- সব মিলিয়ে নানা ঘটনা প্রবাহে উত্তাল ছিল ১৯৭১ এর মার্চ মাস।

ছিল শতবাঁধা, প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধও ছিল অবিরত। শুরুটা বাহান্নতে, এরপর মুক্তি সংগ্রামের নানা ধাপ অতিক্রম করে ৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয় পায় বাঙালি। শুরু হয় পাকিস্তানী সামরিক জান্তার নীল নকশা বাস্তবায়ন। বাঙালিও সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল।
একাত্তরের ৭ মার্চে দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বঙ্গবন্ধু দাঁড়ালেন জনতার সামনে। বললেন, বাঙালির বঞ্চনার কথা, শোষণ আর শাসিত হবার কথা। উনিশ মিনিটের এক জাদুকরী ভাষণে জাতিকে দীপ্ত মুক্তিসেনানিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, ‘১৯৭১ এর ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান ৩ তারিখের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় পাকিস্তানের দুরভিসন্ধি প্রকাশ পেয়ে যায়। এর পরপর মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।’

অপরিসীম ত্যাগের পর বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ঠিক। তবে এখনও অর্জনের আছে অনেক কিছু। তাই দীর্ঘ সময় পার করার পরও প্রতিবছরই মার্চ যেন বাঙালিকে নতুন বোধ ও চেতনায় জাগ্রত করে।

অনেক লড়াই সংগ্রামের পর ৭০ এর নির্বাচন। নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে তখনও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। ৭১ এর ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার কথা ছিলো। কিন্তু মার্চের প্রথম দিন দুপুর ১টায় হঠাৎই বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া খান অধিবেশন স্থগিত করে দেন। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পুরো জাতি।

ইয়াহিয়া খানের ভাষণের আগেই হোটেল পূর্বাণীতে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের গণপরিষদ সদস্যরা। অধিবেশন স্থগিত হয়ে গেলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২ মার্চ ঢাকায়, ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল। আর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু জানান, রেসকোর্স ময়দানেই দেয়া হবে পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি।

২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এ বাঙালি জীবনে আসে নিকষ কালো রাত। পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে হত্যা করে ঘুমন্ত সাধারণ মানুষকে।

এ রকম নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকলো একাত্তরের মার্চ মাস। উত্তাল সেই মার্চ একই সাথে অহংকার ও সাহসের। মার্চ মাসের রক্তিম সূর্যের উদয় হয়েছিলো একটি নতুন দেশের বারতা নিয়ে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আসে সেই স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতা বীজ বপন করেছিল এদেশের সূর্যসন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। যে বীজ শাখা প্রশাখায় রূপান্তরিত করেছিল এদেশের মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা।

শেখ মুজিবের সে অবদান তাই এ জাতি মনে রাখবে। মনে রাখবে উত্তাল রেসকোর্সে শেখ মুজিবের সেই গমগম আওয়াজ __ “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম_ স্বাধীনতার সংগ্রাম”

মন্তব্য করুন