

এবারের বহুল কাঙ্ক্ষিত বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন হয়ে গেল। আক্ষরিক অর্থেই সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, কোন বিশৃঙ্খলা ব্যতিরেকে। অবশ্য সিইসি প্রদত্ত অবাধ ও সুষ্ঠু টাইপের নয়।
তাবলীগের দেশী বিদেশী মুরব্বিদের বয়ানের মাঝে ইলমি গভীরতা ও জজবা ভরপুর ছিল। ভারতের মাওলানা আহমাদ লাট ও ইব্রাহীম দেওলাসহ শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা হাজির ছিলেন। পাকিস্তানের তারিক জামিল সাহেব অসুস্থ, তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তিনি চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞার কারণে আসতে পারেননি।
মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা। বিশেষ করে ফেসবুক মিডিয়ায়। পয়লা ডিসেম্বরে ঠিক এখানেই হায়েনাদের ন্যায় অতর্কিত আক্রমন করেছিল তাবলীগের দুর্নীতিবাজরা। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা এখানে নির্মমভাবে হামলার শিকার হয়েছিল। অর্থাৎ তালেবে এলেম, উস্তায ও আলেম উলামায়ে কেরামদের রক্ত ঝড়েছে এখানে। ওলামাদের রক্তের বদলা এ দুনিয়ায় হয়তো হবে না। হামলাকারীদের একজনও আজ পর্যন্ত পাকড়াও হয়নি। সরকার আইনের রক্ষক, ধারক-বাহক। তাঁরা ইনসাফ করেনি। অবশ্য তা আশা করাটাও বাতুলতা। মোল্লাদেরকে মারলে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারী কিতাবে আইনের কোন ধারা নাই বুঝি!
পড়ুন : বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে পাবলিক ভয়েসের সব প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন
ঠিক আছে, অন্যভাবেও তো হতাহতদেরকে পুষিয়ে নেয়া যেতো। নিহতদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা বাবদ কয়েক লাখ টাকার চেক ভিন্ন ভিন্ন খামে ভরে গণভবনে তাঁদেরকে ডাকা যেতো। এতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মাণ ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যেতো। এমন পরামর্শ দেয়ার মত লোক তাঁর আশেপাশে নেই। না থাকলে নাই। কিন্তু কিছুদিন পর পর যখন দেখি, সাংবাদিক, ও তারকা শিল্পীদের নামে চল্লিশ-ষাইট লাখের চেক বিতরণ করা হয়, অথচ তারা নিঃস্ব নন। তখন জনগনের করের মুদ্রাকে মনে হয় স্রেফ তেজ পাতা।
আলেমদের উপেক্ষা করার এ রেওয়াজ আর কাঁহাতক চলবে?
বিশ্ব ইজতেমা আলেম ওলামাদের পরিচালনায় দুদিন আর নন-আলেমরা দুদিন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ একটা আখেরী মোনাজাত হলো। এ দুদিনে টংগীতে লোক সমাগমের দিক দিয়ে বলা যায় রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জুমার জামাত ছিল ইতিহাস কাঁপানো।
অত্র ইজতেমায় ওলামা-তোলাবাদের অংশগ্রহণ ছিলো ব্যাপক। এতায়াতিরা বলছে নাবালক তালেবের এলেমদের দ্বারা মাঠ ভরা হয়েছে। এখানে নাবালক কারা আছে তা তারা বুঝলো কেমনে? অথচ হাজার হাজার মোবাইল ভিডিওতে এমন নাবালকদেরকে কেউ দেখলো না।
এ বারের ইজতেমায় একটা আকর্ষণীয় আইটেম ছিল দেশের শীর্ষ প্রবীণ মুরব্বি আল্লামা আহমদ শফী হুজুরের হেলিকপ্টারে ইজতেমার উদ্দেশ্যে আগমন। না এটা না। আকর্ষণীয় লেগেছে, তাঁকে সসম্মানে পাশে বসিয়ে গাড়ী চালিয়েছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর, সে দৃশ্যটি।
মিডিয়ার দৃষ্টিতে শেষ হওয়া ইজতেমাটি যুবায়েরপন্থীদের আয়োজন হিসেবে চিত্রিত। মূলতঃ এটি ছিল আলেম ওলামাদের পরিচালনাধীন বিশ্ব ইজতেমা। অবশ্য কতক মিডিয়া বলেছে, মৌলভী সাদ বিরোধীদের বিশ্ব ইজতেমা। এসব মিডিয়াকে ‘কাউয়া’ মিডিয়া বলতে ইচ্ছে করছে।
দাওয়াত ও তাবলীগকে মূলতঃ নবীওয়ালা কাজ বলা হয়ে থাকে। আর সে লক্ষ্যে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে জামাত বের হয় দাওয়াতের উদ্দেশ্যে। এ বছরে অন্তত ১৫৭৫ টি জামাত বের হয়েছে।
আজ রাত থেকে অন্য গ্রুপ ‘ইন’ হবে ইজতেমা ময়দানে। তাঁরা “এতায়াতি গ্রুপ” নামে পরিচিত। অর্থাৎ আমির সাদ সাবের অনুসারী। তাঁরা কতটা জমাতে পারবে সেটা দেখবে দেশবাসী।আর ইজতেমা শেষে কতটা জামাত বের হবে সেটাও পর্যালোচনা হবে। এ গ্রুপটিতে কালো মুদ্রার ঝনঝনানি আছে। ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফ এতায়াতিদের নেতা। আর উপনেতা পাতিনেতা হলেন- এরতেজা হাসান, আশরাফ আলী, ওয়াসিফ তনয় মুফতী ওসামা, সৈয়দ আনোয়ার গং। আরেক জন আছেন, যিনি একজন সিনেমা আর্টিস্ট ও মেকার। অনন্ত জলিল। তাঁর নায়িকা বউর নাম বর্ষা। অনন্ত জলিলের অদ্ভুত স্কিনটাইট জুব্বা আর গম্বুজ টাইপ টুপি পাগড়ী দেখে আমরা শিহরিত। আরো শিহরিত হই, ঐ পোষাক পরে তিনি টিভিতে সিনেমার গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। সিনেমার অন্যান্য নায়ক নায়িকার পাশাপাশি নব্য এতায়াতি তাবলীগার অনন্ত জলিলের বউ বর্ষার নাচগানও থাকে তাতে।
জেনারেল শিক্ষিতের দ্বারা প্রযোজিত চলতি ইজতেমার প্রতি আমাদের কোন দরদ নাই। কারণ পয়লা ডিসেম্বরে তারা ইনোসেন্ট মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতি কোন অনুকম্পা দেখায়নি। ওরা তাঁদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। তুরাগকে কহর দরিয়া বানিয়েছে।
এতায়াতিরা প্রচন্ড রকম আলেম বিদ্বেষী। আলেমদের কাজ নাকি তারা করবে! যারা হয়তো বাংলা কুরআন পড়ে উচ্চারণ বিকৃতি করে এমনভাবে পড়াবে-
কুল আউজু বিরব্বিন্নাশ, মালিকিন্নাশ, ইলাহিন্নাশ………….।
আসতাগফিরুল্লাহ।
লেখক : এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক