

পাবলিক ভয়েস: মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ঝরে পড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী। আগামীকাল (২ ফেব্রুয়ারি) শনিবার যারা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে তাদের মধ্যে দুই বছর আগে নিবন্ধন করেছিল ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষার্থী। আর এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৭ জন। সেই হিসাবে নিয়মিত ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এরা ঝরে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ অংশ না নেয়া শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ছাত্রী। তাদের শিক্ষাজীবন চলমান থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেন, ঝরে পড়বে কেন, ঝরা পড়া নয়। পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগে স্কুলপর্যায়ে টেস্ট পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। ফলে এবার বেশি পরীক্ষার্থী কমেছে। যারা সুযোগ পায়নি, তারা আগামীতে আরো ভালো প্রস্তুতি ও সচেতন হয়ে অংশ নেবে।
সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন আরো বলেন, দুদকসহ অনেকেই স্কুলপর্যায়ের টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার সুপারিশ করেছে। এ সিদ্ধান্তটি আরো আগের, এ বছর থেকে এটি কার্যকর করা হচ্ছে। তাই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অংশ না নেয়ার সংখ্যা বেড়েছে সত্য।
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা সম্পর্কে শিক্ষা বোর্ডগুলোর দেয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী ও সচিব উপরিউক্ত কথা বলেন।
শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে জানা গেছে, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার ২৪ শতাংশ ঝরে পড়েছে বা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ঝরে পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারিগরি বোর্ডে, ৫৯ শতাংশের ওপরে (৫৯.১১%)। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঝরে পড়ার হারে কুমিল্লা বোর্ড শীর্ষে। এ বোর্ডে দুই লাখ ১৬ হাজার ৮৯০ জন নিবন্ধন করেছিল। পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪২৪ জন। ২৯ শতাংশের বেশি।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিলেট বোর্ড। ২৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে যশোর বোর্ড ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে মাদরাসা বোর্ড, ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি পরীক্ষার সার্বিক দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো আশঙ্কা নেই। আমি আশা করি এবার প্রশ্ন ফাঁস হবে না।
অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন গুজবের পেছনে না ছোটেন এবং এ কারণে বিভ্রান্ত না হন। মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের পাবলিক পরীক্ষায় কোনো প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। কার্যকর কিছু পদক্ষেপের ফলে এ ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গিয়েছিল। এবারো সে পদক্ষেপগুলো আরো জোরদার করা হয়েছে।
অংশ নিচ্ছে ২১ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী
২০১৯ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৭ লাখ ১০২ জন, দাখিল তিন লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৯ জন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মোট পরীক্ষার্থী, ছাত্রী এবং বিজ্ঞানে পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বারের চেয়ে এবার এক লাখ তিন হাজার ৪৩৪ জন পরীক্ষার্থী বেশি। এর মধ্যে ছাত্রী ৫৬ হাজার ২০৫ জন। ছাত্র ৪৭ হাজার ২২৯ জন। এবার বিজ্ঞানেও পরীক্ষার্থী বেড়েছে।
এ বছর পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ জন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। গত বছর বিজ্ঞানে পরীক্ষার্থী ছিল পাঁচ লাখ তিন হাজার ৬২৭ জন। তিন হাজার ৪৯৭ কেন্দ্রে হচ্ছে এ পরীক্ষা। ২৮ হাজার ৬৮২ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। এবার ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৩৭ জন নিয়মিত। বাকি তিন লাখ ৯১ হাজার ৫৪ জন অনিয়মিত। মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী তিন হাজার ৩৪২ জন।
প্রশ্নের নিরাপত্তা সম্পর্কে বোর্ডগুলো এবার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে এবার এলুমিনিয়াম ফয়েল খাম ব্যবহার করা হবে। এতে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট আরো সুরক্ষিত থাকবে। প্রশ্নপত্র বহন ও পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে জড়িত কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
কেবল কেন্দ্র সচিব ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগবিহীন একটি সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু তা নিয়ে তিনি পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সিটে বসতে হবে। শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশের ৫ মিনিট পর বা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে পরীক্ষার বিষয়ের সেট কোড এসএমএসে জানানো হবে।
নির্দেশ দেয়ার পরও কোচিং সেন্টার চালু থাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি এই নির্দেশ বাস্তবায়নে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক প্রমুখ।