ঈদ সালামির মহড়ায় কিশোর গ্যাং, নাটাই আ’লীগ নেতাদের হাতে!

প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২১

কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বন্ধ করতে এক-দেড় মাস আগে রাজধানীজুড়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। শতাধিক কিশোরকে আটকও করা হয়।

কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বরং ঈদুল ফিতর সামনে রেখে তাদের পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক উৎপাত আরো বেড়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কিশোর গ্যাংয়ের দল বেঁধে মহড়া দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের হাতে।

মিছিল-সমাবেশকেন্দ্রিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে দাপট দেখানো, নীরব চাঁদাবাজির বড় হাতিয়ার এরাই। তারা ঈদ-উৎসবে ‘বড় ভাইদের’ কাছে যায় সালামির আশায়। ‘বড় ভাইয়েরা’ ত্রাণ বা সহায়তা হিসেবে যেখানে যা পান তার বেশির ভাগই ‘ছোট ভাইদের’ তুষ্ট করার জন্য বিলিয়ে দেন।

সম্প্রতি কামরাঙ্গীর চর এলাকার একজন কাউন্সিলর ত্রাণের টাকা নিজের পছন্দের কর্মী ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের ‘ঈদ সালামি’ হিসেবে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

জানা যায়, ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এলাকাকেন্দ্রিক ব্যাবসায়িকপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা।

আর দলীয় নেতাকর্মী যারা নিয়মিত টাকা দেয় না তাদের কাছ থেকে সদস্যপিছু ১৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। যেসব নেতাকর্মী কিশোর দল নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁরা তো নিয়মিতই দেন। এ ছাড়া নেতারা খুশি হলে মোবাইল ফোনসেট, মোটরসাইকেলও উপহার হিসেবে পেয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

রাজধানীর লালবাগ থানাধীন আমলীগোলা এলাকার পুষ্পসাহা পুকুরপারে ঢাকা দক্ষিণের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি একরাম উল্লাহ সারোয়ার্দীর রাজনৈতিক কার্যালয়। তাঁর কার্যালয় ঘিরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী সুজন ওই গ্যাং পরিচালনা করেন।

ঈদ ঘিরে তাঁর নেতৃত্বে এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে কিশোর গ্যাং চাঁদা তুলছে বলে একাধিক দোকানি অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়াও এলাকায় নতুন কোনো ভবন তৈরি করতে গেলেও তাদের টাকা দেওয়া লাগে, নয়তো কৌশলে গলিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না নির্মাণসামগ্রী।

অভিযোগ অস্বীকার করে একরাম উল্লাহ সারোয়ার্দী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার অফিসে পোলাপান আসে না, মুরব্বিরা আসেন। চাঁদাবাজির অভিযোগও মিথ্যা।’

গত বুধবার রাত ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের প্রধান সড়কে আড্ডা দিচ্ছিল ৩০ থেকে ৪০ জন কিশোরের একটি দল। ওই দলের সদস্য রাব্বি (১৪) নামে একজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। রাব্বি জানায়, তারা সাফায়াত উল্লাহ গ্রুপের। তিনি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক।

ওই এলাকার ঢাকা উদ্যান-৪, নবীননগর এক নম্বর রোড, তুরাগের তীরসহ আশপাশে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আনাগোনা সব সময়। এলাকায় রিকশা চুরি, দোকান থেকে পণ্য কিনে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার মতো অপরাধে জড়িত তারা। কালের কণ্ঠ

আই.এ/

মন্তব্য করুন