বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে চলতে চলতে যেসব অভিজ্ঞতা পেয়েছি?

প্রকাশিত: ৯:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২১
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ৬ বছরের অভিজ্ঞতা। আজাদুল ইসলাম সুমন। ছবি : পাবলিক ভয়েস।

আজাদুল ইসলাম সুমন:

জীবনে বড় হওয়ার ইচ্ছা থাকে প্রতিটি মানুষের। এই বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন নিজের মেধা ও মননের যথার্থ পরিচর্যা এবং একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রয়াস। জীবনের বাঁকে বাঁকে ছোট ছোট সাফল্য মানুষের সেই অসীম গন্তব্যের পথে প্রেরণা জোগায়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ করার পর প্রতিটি মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হাওয়া।

আর একজন শিক্ষার্থী সেই আকাশছোয়া স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কেউ সে স্বপ্ন ছুতে পারে, আবার কারো কাছে থাকে অধরা। অকালে ঝড়ে যায় অনেকের শিক্ষা জীবন, আবার কেউ সম্মানের সাথে লেখাপড়া শেষে জায়গা করে নেয় দেশের শীর্ষ স্থানে। আজ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর ৬ বছরে বেশি সময়ে স্বপ্নের ক্যাম্পাসে কাটানো বাস্তব অভিজ্ঞতা :-

এইচএসসিতে বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিল যে ছেলেটি, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বহু চেষ্টা থেকে সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে অনার্স শেষ করতে দেখেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান কোন এক ব্যাচের যে ছেলেটাকে সব সময়ে বলতো, তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবা না। সে সবার আগে সরকারি চাকরি পেয়েছে। তাও গ্রাজুয়েট শেষ করার আগেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পরপর দেখতাম এক বড় ভাই প্রচুর খায়, শুকনা,পানি সবই চলে প্রচুর পিনিক। শেষের দিকে এসে দেখি সব ছেড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, নিয়মিত তাবলীগে যান। আর তিনি যে প্রচুর পড়াশুনা করতেন তার প্রমানও করেছেন GRE শেষ করে।

ছাত্র রাজনীতিতে এমন অনেক নেতা-নেত্রী দেখেছি যাদের প্রোটোকল দিতো অসংখ্য সাধারণ কর্মী বা শিক্ষার্থীরা। একটা সময়ে দেখেছি সেই নেতানেত্রী একা ক্যাম্পাসে আসে একা চলে যায়। কেউ সালাম দিতেও যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন শিক্ষক দেখেছি যাকে সবাই অনুসরন করেন। কখনই তার সম্পর্কে নেতিবাচক কোন শব্দ করতে শুনিনি। ডিপার্টমেন্টের সবার কাছে তিনি সর্বেসর্বা। অন্যান্য স্যারও যেকোন সমস্যায় তার কাছে ছুটে যান। এ যুগে এমন গুণী ব্যাক্তিত্বের অধিকারি খুব কম শিক্ষকই চোখে পড়ে।

আরেকটি বিষয়ে অনেক শুনেছি তবে স্ব-চোখে দেখিনি। জুনিয়ররা বলতো এক বড় ভাই ভার্সিটির স্টুডেন্ট থেকে শিক্ষক হয়েছেন। তিনি জুনিয়রদের সাথে এমন ব্যাবহার করেন, মনেহয় তিনি কখনই এ ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলেন না। মনেহচ্ছে বিদেশ থেকে পড়াশুনা করে আসছেন। তার প্রতি অনেকেই সন্তুষ্ট না।

এমন মেয়েকে দেখেছি যে তার বয়ফ্রেন্ডকে কোন মিছিল মিটিং এ যেতে দিতো না বা ছাত্রনেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে দিতো না, আবার পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে সেই মেয়েরই স্লোগানে।

হলে অনেক ছাত্রনেতা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই রাতারাতি বড় রাজনৈতিক পদ পেয়ে হারিয়ে যেতে। আবার এমনও দেখেছি প্রথম থেকেই সামনের সাড়িতে এখনো এক রকমই আছেন। বিভিন্ন ঝড়ে বহুনেতা হারিয়ে গেছে তিনি কখনই ঝড়ে হেলে পড়েন নাই।

রাজনীতির মাঠে মিছিলে হাটে যে ছেলেটাকে কখনো দেখিনি, শুধু ফেসবুক পোস্ট করেই নিজেকে নেতা দাবি করে।

চমৎকার একজন বন্ধুকে দেখেছি যার এমন একটি চাবি ছিলো যিনি সব ধরনের তালা খুলতে পারতেন।

ছাত্র রাজনীতিতে অসম্ভব সাহস দেখেছি, যে একজনের গলায় অস্ত্র ধরেছে। তা দেখে পাশের সবার হাটুতে কাপুনি শুরু হয়েছে। তবে যার গলায় অস্ত্র ধরেছিলো সে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে একা দাড়িয়ে ছিলো। তাকে বিন্দু মাত্র ভয় পেতে দেখিনি।

তুখোড় মেধাবি কিছু ছাত্র দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যারা পরীক্ষার হলে যাওয়ার পরে, প্রশ্নপত্র দেয়ার পরে দোস্ত আজ কি পরীক্ষা? এমন একবার নয় বহুবার দেখেছি। সে শিক্ষার্থীও প্রথম শ্রেনীতে স্নাতক সম্পন্ন করতে দেখেছি।

আবার এমন ছাত্রও দেখেছি যিনি অনার্স শেষ করতেই ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু আজও অনার্স শেষ করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখা সেরা উদাসীন ছাত্র সে।

হলে সবচেয়ে দাপটে চলা নেতাকেও একসময় চুপসে যেতে দেখেছি। আবার ছোটভাইদের দেখলে হাসিমুখে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতো যে রাজনৈতিক কর্মী, তাঁকে রাজনীতির মাঠে অনেক উচুঁতে উঠতে দেখেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটেছে চারবছরের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে, প্রথম বর্ষ শেষ করতে পারেনি। এখনো সেই প্রথম বর্ষেই পড়তেছে।

হলে উঠার পরে প্রতিদিন নাস্তা না করেই দু’বেলা খেয়ে দিন কাটিয়ে দেওয়া ছেলেটিকে দেখেছি, একসময় ছাত্রজীবনেই শুধু টিউশনি করে মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময়ই নিজের ঔদ্ধত্য জাহির করা এক ছাত্রকে দেখেছি বয়স অনেক পার হয়ে যাওয়ার পরেও অনার্স ও শেষ করতে পারেনি, চাকরি ব্যাবসা কিছু-ই ব্যবস্থা করতে পারে নি।

সুন্দর চেহারা নিয়ে অহংকার করা এক ব্যাচমেটকে শেষ মুহূর্তে ভাঙা মুখের চেহারা নিয়ে চল্লিশের কোঠা ছোঁয়া ভুড়িওয়ালা এক আঙ্কেলের হাত ধরে সংসারে যেতে দেখেছি।

মাদ্রাসা থেকে হেফজ, দাওরা, ইফতা পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে এসে পুরোপুরি জিন্স টিশার্ট ওয়ালা ডিস্কো হয়ে যেতে দেখেছি।

শার্ট প্যান্ট পড়ুয়া ইংরেজী সাহিত্যে পড়া সচরাচর পোশাকে অনেক ছাত্রকে অগাধ ধর্মীয় জ্ঞান ধারণ করতে দেখেছি।

ইয়ো ইয়ো হানি সিংগার টাইপের ড্যান্সিং করে হাঁটাচলা করা এক মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকে এসে হিজাব পালন করে নিয়মিত ফেসবুকে কোরআনের আয়াত পোস্ট করতে দেখেছি।

ক্যাম্পাসে প্রেম করে বিয়ে, তারপরে সংসার আবার সেই ক্যাম্পাসেই তাদের দুজনের ডিভোর্স হয়েছে।

নিয়মিত একবেলা ভাত আর দুবেলা গঞ্জিকা সেবন করা এক বন্ধুকে দেখেছি তিনদিনের তাবলীগে গিয়ে সব নেশা ছেড়ে দিয়ে সুন্নতি বেশে অন্য ছাত্রকে নামাজের দাওয়াত দিচ্ছে।

আগাগোড়া খাঁটি পর্দা করে বোরখা পরিহিত এক মেয়ে নির্বিঘ্নে সব বন্ধু বান্ধব ও সংগঠনের সাথে সময় দিতে দেখেছি। পর্দা তার কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

চার বছর জানপ্রাণ দিয়ে সম্পর্কে জড়িত থেকেও এক মেয়ে তার প্রেমিকের চেয়ে আরেকটু প্রতিষ্ঠিত ও একটি সরকারি চাকরিজীবী ছেলে পাওয়ার পরে এক মুহূর্তে তার প্রেমিককে ভুলে গেছে। অনেক ছলনা-কোশল করে প্রেমিককে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার জন্য বেছে নিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠিত ছেলে সরকারি চাকরিজীবীকে।

প্রশ্ন হতে পারে যিনি এটি লিখেছেন তার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে?
উ: তার ক্ষেত্রে যা যা ঘটেছে তার বর্ননাও লেখার মধ্যেই রয়েছে।

আর কি বাকি আছে বাস্তবতা শেখার?

কখনো বর্তমান নিয়ে হতাশ বা উৎফুল্ল হইও না, সর্বদা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ বলে তো আসলে কিছু নেই, বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তই অতীত হয়ে যাচ্ছে।

লেখক: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো: আজাদুল ইসলাম সুমন।

মন্তব্য করুন