চা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা; মন্দির নির্মাণে প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২১

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা: দেশজুড়ে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এ  জেলায় চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতিনিয়তো অন্যায়, সরকার কর্তৃক চা শ্রমিকদের বিভিন্ন রকম সাহায্যে সহযোগিতা করলেও পিছিয়ে পড়া এসব মানুষদের সঙ্গে চলছে প্রতারণা।

সরকার কর্তৃক সমাজ কল্যান দফতরের আওতাধীন গৃহীত বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ করেন শ্রীমঙ্গলের ৮ নং কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা নতুন প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার কার্ড পেয়েছেন তারা এককালীন ১ বছরের ৯ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন ভাতা সংগ্রহকারীদের সরকারী অর্থ বিতরণের সময় কাউকে কিছু না জানিয়ে নগদ ১ হাজার টাকা স্থানীয় একটি মন্দির নির্মাণের জন্য কেটে রাখার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

No description available.

কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত ভাড়াউড়া চা বাগানের ৬নং ওয়ার্ডের মীরা দোষাদ অভিযোগ করে বলেন, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণের সময় নারী ইউপি সদস্য মিতু রায়ের স্বামী তাকে ভাতার টাকা নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান এর বাসায় যেতে বলেন।কিন্তু যেদিন দেশ থেকে শুরু করে বর্হিবিশ্ব জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু জাতীর মহানায়ক জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সকল প্রতিষ্টান বন্ধ ঘোষণা, সেদিন বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার দিন নির্ধারণ করেন।

ভুক্তভোগী মানুষেরা টাকা আনতে চেয়ারম্যানের বাসায় যাওয়ার পর তাকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ৬ নং ইউ পি ইদ্রিস আলী নারী ইউপি সদস্য মিতু রায় ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালার বড় ভাই সন্তোষ গোয়ালা কাউকে কিছু না জানিয়ে সকলের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা কেটে রাখেন তখন তিনি প্রতিবাদ জানালে চেয়ারম্যানের বড় ভাই সন্তোষ গোয়ালা তাকে ধমক দিয়ে কথা বলেন এবং এও বলেন বেশি কথা বললে কার্ড বাতিল করে দেওয়া হবে বলে।

No description available.

তিনি আরও জানান মেম্বার, পঞ্চায়েত সভাপতি ও চেয়ারম্যান এর ভাই প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে কিভাবে মন্দির নির্মাণের জন্য টাকা কেটে রাখলো আমি যেখানে তিন মেয়ে ও ছেলের পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া ও চিকিৎসার খরচ বহন করতেই হিমশিম খাই সেখানে গরীবের জন্য বরাদ্দ সরকারী অর্থ কিভাবে কেটে রাখা হয়।

আরেক ভুক্তভোগী বিধবা লক্ষী মনি গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ করে জানায়, মিতু মেম্বারনী, ইদ্রিস আলী মেম্বার ও প্রানেশ চেয়ারম্যান এর বড় ভাই সন্তোষ গোয়ালা আমাকে বলে, বিধবা ভাতা থেকে এক হাজার টাকা কেটে রাখা হবে, আমাদেরকে টাকা দিতে হবে। তখন আমি বলেছি এই টাকা তো সরকার থেকে আমাকে দিয়েছে, তাহলে আপনারা কেনো কেটে রাখবেন তখন তারা বলেন তোমরা বেশি কথা কও, এই টাকা তোমাদের দিতে হবে। এই কথা বলে মন্দির নির্মাণের নামে একটা ১ হাজার টাকার রিসিট দিয়ে টাকা নিয়ে যায়। একই দিন বাড়ি বাড়ি হতে ২০০ টাকা করে তুলেন মন্দির তৈরি করার কথা বলে।

No description available.

তিনি আরও বলেন চা বাগানের শ্রমিকরা সাপ্তাহিক হাজিরাতে ১০-২০ টাকা করে মন্দিরের জন্য দিয়ে থাকি তাহলে কেনো এই বাড়তি টাকা কেটে রাখলো উনারা। এ বিষয়ে ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাগানের একটা মন্দির নির্মাণের জন্য তাদের বলেছি যে, তোমরা তো টাকা পেয়েছো সেখান থেকে চাইলে তোমরা চাঁদা হিসেবে এক হাজার টাকা করে দিতে পারো, তখন তারা এক হাজার টাকা করে মন্দির নির্মাণের নামে দেয়। আমরা কোন জোর করে টাকা নেইনি। তারা স্বেচ্ছায় টাকা দিয়েছে এবং বলেন আমার এমন কোন অভিযোগ নেই কারো কাছে ৫ বছরে,যদি জানতে চান তাহলে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে দেখেন।

বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নূর মিয়া বলেন, আমরা তো জোর করে কোন টাকা নেই নাই, তারা স্বেচ্ছায়ই মন্দিরের জন্য টাকা দিছে। প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকেও কি টাকা নিতে হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে নূর মিয়া বলেন, আপনি প্রতিবন্ধী বলেন, বা সুস্থ মানুষই বলেন, তারা তো ধর্মের নামে টাকা দিচ্ছে। আর আমরা তাদের হাতে নয় হাজার টাকা দেওয়ার পরে তারা আমাদেরকে এক হাজার টাকা দিছে, আমরা রসিদ ও দিয়ে আসছি।

No description available.

কালিঘাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিতু রায় বলেন, আমরা জোর করে কোন টাকা নেইনি।বাগানের মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাই তাদের কাছ থেকে আমরা এক হাজার টাকা করে নিয়েছি। আমরা তাদেরকে টাকার রশিদ ও দিছি। বাগানের সবার কাছ থেকেই টাকা নিচ্ছি, কেউ ১শ, ২শ বা ৫শ করে টাকা দিচ্ছে।

No description available.

প্রতিবন্ধী ও বিধবার ভাতার টাকা কেটে রাখার বিষয়ে কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালার সাথে যোগাযোগ করা হলে বার্তালাপে তিনি বলেন, ভাতার টাকা থেকে কেউ কোন টাকা নিয়েছে বলে আমার জানা নাই তবে যেহেতু আমি এখন জেনেছি রাত হয়ে গেছে কেউ জানায়নি আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি সকালে, তারপর ঘটনা সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু আশ্বাস প্রদান শুধু মুখে বলা পর্যন্ত সমাপ্ত।

এর কারণ গতকাল কথা বলার আজ দিন গড়িয়ে রাত আশ্বাসের কোন রকম ফলপ্রসূ মিলেনি চেয়ারম্যান কালীঘাট ইউনিয়ন প্রানেশ গোয়ালা কতৃক।

মন্তব্য করুন