

মিনহাজ আবেদিন :
প্রকৃতি প্রেমীদের স্বাগত জানায় অপার সৌন্দর্যের সাম্রাজ্যে। গাছের নিচেও ফুটে থাকে লালগালিচা হয়ে। যেটি সব বয়সের মানুষের মনকে নিমিষেই ভালো করে দেয়। মনোমুগ্ধকর আকৃতি দিয়ে পরিবেশ সাজিয়ে মানুষের মনকে করে তোলে সতেজ। ফুটিয়ে তোলে প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সেটি ফুল, সবার প্রিয়। যেদিকে চোখ যায় দেখে যেন মনে হয় দৃষ্টিনন্দন সব ফুলের রাজত্ব চলছে। মনে হয় প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া স্বর্গরাজ্য। চারিদিকে ফুল আর ফুল। এ দৃশ্য দেখা যায় বন্ধ থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাপাসে। যেন ফাগুনের বাহারি সব ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। শহীদ মিনার চত্বরের ভিতরে, সিনেট ভবনের পাশে, জোহা চত্বরে চারপাশে, প্যারিস রোডের ধারে, উপাচার্য বাসভবন, বেগম রোকেয়া হল, মন্নুজান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মতিহার হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হলসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলের ভিতরের প্রতিটি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে অপার সৌন্দর্যের ফুলের বাগান।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দুপাশ দিয়েই শিক্ষার্থীদের প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার পথ। এই দুপথের মাঝ বরাবর মূল ফটক থেকে জোহা চত্বর পর্যন্ত বিশাল জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। এখানে লাগানো হয়েছে ‘বটল পাম’ গাছ। পাশাপাশি রাখা হয়েছে গোলাপ, রঙ্গন, সিলভিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। মূল ফটক পেরিয়ে একটু সামনে যেতেই হাতের ডান পাশের সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার ঘিরে রয়েছে আরও একটি বাগান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরের চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা রঙের গাঁদা ফুল গাছ। যেটির ঘ্রাণে মাতোয়ারা করে তোলে মানুষের মন। চোখের পলকেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি ও মনকে বিমোহিত করে তোলে।
মাথার ওপরে ফুটে থাকা ফুল ঝড়ে পড়ে লালগালিচা হয়ে। অতিথিদের স্বাগত জানায় অপার সৌন্দর্যের সাম্রাজ্যে। একটু খেয়াল করলেই ডালে ডালে দেখা মিলবে মধু খেতে আসা বুলবুলি, কাঠশালিক আর হলদে পাখির ঝাক। এ দৃশ্য মিলবে রাবি ক্যামপাসের রাকসুভবন চত্বর, শহীদ মিনার চত্বরসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে।
ক্যাম্পাস ঘুরতে আসা গণিত বিভাগের সুমাইয়া রহমান বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রকাশ করে ফুলের মাধ্যমে আর নানান ধরণের ফুলের সমাহার দেখা যায় ফাগুনে। সেই ফুল আর মৃদু বাতাসের অসাধারণ সংমিশ্রনে দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অঙ্গন। যা তৈরি করে মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় এক পরিবেশ। স্বাভাবিকভাবে তাকালেই যেন মনে হয় অপার সৌন্দর্যের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে বলে জানান শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফুলবাগানের দায়িত্বরত মালী মনছুর হাফেজ ও নাইমুল। তারা বলেন, ডালিয়া, সাইলসিয়া, সালভিয়া, চায়না গাঁদা, স্টার, পিটনি, ক্যালেনডুলা, পলাশ, রঙ্গন, কামিনী, জবা, ডায়মন, ইন্টারাম, ড্রানথাস, পপি, কসমচ, গাজেনিয়া, ভারবেনিয়া, চন্দ্রমল্লাীকা, সুনোবল, টাইগার ডালিয়া, অ্যালামন্ডা, মাসুন্ডা, করবি, কাঠবেলি, রজনীগন্ধা, বকুল, হাসনাহেনা, নয়ন তারা, দুপাটি, ডেজি, জিনিয়া, শেরি, প্লক্স, টগর, কুপিয়া, ঘাসফুল, মাধবিলতা, স্থলপদ্ম, শিউলী, বকফুল, গন্ধরাজ ইত্যাদি ফুলগাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের ভিতরে লাগানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাগানের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মালী মোহম্মদ মুনসাদ বলেন, এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ইনকাগাঁদা, রঙ্গন,সিলভিয়া, চন্দ্রমল্লীকা, বিশ্বসুন্দরী, ক্ষয়রি, তাজমহল, বেগনীসহ নানা প্রজাতির ফুল গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, এই ফুলগাছের বাগানের বয়স প্রায় ১১ মাস হয়েছে। এগুলোতে জানুয়ারির শুরুতে ফুল আসা শুরু করে এবং মার্চ পর্যন্ত থেকে ঝরে য়ায়। যখন ফুল গাছে কলি আসে তখন ডিএপি সার, পটাসিয়াম সার, ফসফেট সার, হাড়ের গুড়া, শরিষার খৈইল ইত্যাদি দুই সপ্তাহ পঁচিয়ে গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। এতে করে ফুলগুলো আকারে বড় হয়, পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং ফুল গাছকে সতেজ রাখে।
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছের বাগান করা হয়েছে। এতে করে পুরা ক্যাম্পাস ফুলের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে জোহা চত্বর পর্যন্ত বিশাল জায়গা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান করা হয়েছে। এই বাগানে ‘বটল পাম’ গাছ, গোলাপ, রঙ্গন, সিলভিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। এইসব ফুলগাছগুলো ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলেছে। যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে তোলে।#
লেখক: মিনহাজ আবেদিন, শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।