

নাহিদুজ্জামান নাহিদ, বেরোবিঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রশাসনিক ভবন ও ভিসির বাংলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এসব ভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না জানিয়ে অফিস আদেশে এসব উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে দ্রত নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নোটিশে প্রশাসন ভবন, ভিসির বাংলো, একাডেমিক ভবন এবং শ্রেণিকক্ষের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্লোগান, বক্তব্য প্রদান ও মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তালা লাগিয়ে কোন প্রতিবাদের কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। নোটিশের নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৭৫ তম বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ্যে আসে।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করার ঘটনায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বেশ সমালোচনা হয়। এরপর সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এজন্য অন্যান্য মহলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে-এমন বিষয় বোঝাতেই এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে এমন নোটিশ জারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিন্দা জানিয়ে দ্রুত এই নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি জনপ্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়ার কারণ উল্লেখ করে মতামত জানতে চেয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পোমেল বড়ুয়া বলেন, যেহেতু আমাদের ছাত্র সংসদ নেই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবতায় আসলে দেখা যাবে যে প্রশাসন আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীরা কখনো আন্দোলন-সংগ্রামে সামিল হয় না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষার্থীদের শাসনের বিপরীতে প্রশাসনের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কাজে প্রশাসনিক ভবনে যেতে হয়, অনুমতি কোথায় নিবে? আর, নিতে হবে কেন! তিনি ভিসিকে উল্লেখ করে বলেন, যিনি বা যাঁরা প্রতিদিন আইন ভঙ্গ করে চলেছেন, তাঁরাই আবার বেআইনিভাবে তথাকথিত আইন তৈরী করার কথা বলছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, উপাচার্য, রেজিস্ট্রার বছরের পর বছর অনুপস্থিত। তাঁরা নিজেরাই রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে চলেছেন, প্রতিষ্ঠানের সকল আইন-রীতি ধ্বংস করছেন, তাঁদের এইসব হঠকারী সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে এটি একটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বিজ্ঞপ্তি, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ এ ধরণের অগণতান্ত্রিক কথাবার্তা আশা করে না! উল্লেখ করে এই এই শিক্ষক নেতা বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারণ জানানোর দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান এই অফিস আদেশের প্রত্যাহার এবং নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এটি যায়না কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আর সামরিক শাসন চলছে না।
তিনি বলেন, ভিসি নিজেই বছরের পর ক্যাম্পাসে না এসে নিয়োগ শর্ত ভেঙ্গে অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ফরমান জারি করার এখতিয়ার রাখেন না তাই ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করতে হবে।
এ নোটিশের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একে এম ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটে নি যে সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা করে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন সংসদ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রনীত আইনকে লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধান, ডিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। এমন কি শিক্ষক নিয়োগেও বিভাগীয় প্লানিং কমিটির সুপারিশ নেয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। সম্প্রতি নিয়োগ প্রাপ্ত অনেক শিক্ষকের বেতন বন্ধসহ নানা হয়রানিমূলক কর্মকান্ড করে চলেছে বর্তমান প্রশাসন। এ অবস্থায় এ ধরনের নোটিশই বলে দেয় যে এ প্রশাসনের অপকর্মগুলো বিনা প্রতিবাদে ও নির্বিচারে চালিয়ে যেতে চায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিউর রহমান, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।#