

ইউসুফ পিয়াস
পাবলিক ভয়েস
বাসা থেকে আসরের নামাজ আদায় করে ওয়ারি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একটি বোরাক বাস আসে। বাসে উঠে দেখি কোনও সিট খালি নেই। পেছনের দিকে একটি সিট খালি তবে পাশে একজন হিজাব পরা মেয়ে। মেয়েটিকে সম্মান দেখানোর জন্য আমি দাঁড়িয়ে আছি। বাসের পেছনের সিটগুলো একটু বেশি ছোট হওয়ায় সেখানে ঘেঁষাঘেঁষি বেশি হয়। মেয়ে মানুষ থাকলে আমি সব সময় এই সিটে বসা থেকে বিরত থাকি।
আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাসের কন্ট্রাকটার কয়েকবার পেছনের খালি সিটে গিয়ে বসতে বলল। শনিরআখড়া থেকে সায়েদাবাদ খুব বেশি পথ নয়। এটুকু পথ দাঁড়িয়ে যেতে কোনও কষ্ট হবে না বিধায় আমি দাঁড়িয়েই আছি। যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত গিয়ে পুরো বাস খালি হয়ে গেল। আমি একটি ফাকা সিটে বসে ফোন বের করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়ছি।
এখন গাড়িতে আমি ড্রাইভার, কন্ট্রাকটার, হেলপার আর মেয়েটি ছাড়া কেউ নেই। বাসের কন্ট্রাকটারকে লক্ষ করলাম বার বার মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। তার লোলুপ দৃষ্টি। মেয়েটির চোখও এড়ালো না বিষয়টি। মেয়েটি চোখেমুখে কিছুটা ভয় নিয়ে আমার সোজাসুজি অপর পাশের একটি সিটে বসে পড়ল।
তখনও বিষয়টি আমি পরিস্কারভাবে বুঝতে পারিনি। একটু পর বাসের কন্ট্রাকটার এসে আমাকে বলল, হুজুর ভাই আপনি নামেন না কেন? গাড়ি আর যাবে না! আমি বলি, সামনেই নেমে যাবো। আমার উত্তরটা শুনে লোকটা বিরক্ত হল।
সায়দাবাদ জনপদ মোড় শেষ কাউন্টার। এখান থেকে বাসগুলো ইউটার্ন নেয়। বাসটি আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত যাওয়া মাত্রই বাসের হেলপার আর কন্ট্রাকটার কোন কথাবার্তা ছাড়াই মেয়েটির দিকে তেড়ে এসে বললো, এই ভাড়া দে?
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বললো, ভাই ভাড়া তো অনেক আগেই দিয়েছি। কন্ট্রাকটার বলল, শনিরআখড়া থেকে সায়দাবাদ ভাড়া দশ টাকা তুই ভড়া দিলি পাঁচ টাকা, আরও পাঁচ টাকা দে! মেয়েটি কোন মতেই দিতে রাজি হল না। আর দিতে চাইবেই বা কেন? সে ধার্যকৃত ভাড়া পাঁচ টাকা পরিশোধ করেছে।
ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় কন্ট্রাকটার মেয়েটিকে হুমকি দিতে শুরু করে। ‘ভাড়া না দিলে তোরে নামতে দিমু না! মেয়েটি নামতে চেষ্টা করলে কন্ট্রাকটার মেয়েটির পথ আটকে দেয়। একপর্যায়ে মেয়েটি আমাকে ডেকে বলে, ভাইয়া দ্যাখেন ওরা কেমন করছে। আমি ভাড়া দিয়েছি তবু ভাড়া চাইছে।
আমি বুঝতে পারি ওরা ইচ্ছে করেই মেয়েটির সাথে এমন করছে। আমি শক্তকন্ঠে কন্ট্রাকটারকে বললাম, এই মামা সমস্যা কি আপনার? শনিরআখড়া থেকে সায়দাবাদ জনপদে ভাড়া কত? বললো, দশটাকা। আমি বললাম, ভাড়া দশ টাকা হলে আমার থেকে পাঁচ টাকা নিলেন কেন? তা ছাড়া ভাড়া তো পাঁচ টাকা করেই।
নরম কথায় চিড়া না ভেজায় আমি আরেকটু সাহস নিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে অনেকটা ধমকের সুরে বললাম, এই বাস থামান। আমার কার্ডটি বের করে দেখালাম এবং পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করতে চাইলাম। সরাসরি বলে বসলাম, আপনাদের সবগুলোকে পুলিশে দিব।
এবার কন্ট্রাকটার আর হেলপার একটু ভয় পেয়ে ড্রাইভারকে ডাক দিয়ে বলল, ওস্তাদ ভাইরে নামিয়ে দ্যান। ততক্ষণে আমি যাত্রাবাড়ি থানার ফোন নাম্বার ডাইলে নিয়েছি। এমন সময় বাসের তিন জনই হাসতে হাসতে বলল, ভুল হয়েছে। আমাকে হাত ধরে নামিয়ে দিল। নামিয়ে দিল মেয়েটিকেও।
আমার ব্যস্ততা থাকায় আমি দ্রুত অন্য বাসের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলাম। মেয়েটি শুধু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, ধন্যবাদ। আমি বললাম, একটু সামধানে চলাফেরা করবেন।
আই.এ/