কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ১:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১

ইউসুফ পিয়াস
পাবলিক ভয়েস

দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে আর মাঠেঘাটে সরিষা ফুলের ছড়াছড়ি। সারি সারি হলুদের মুগ্ধতার দৃশ্যে বিমহিত সবাই। কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর, তাও চারদিকে হলুদের সমাহার। মনে হয় যেন রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে অনেক কিছু দেখা যায় এই রাজ্যে! সবাই যেন হুমড়ে পড়ে হলুদের ওপর। প্রকৃতির এ সময়টাতে কাছে কিংবা দূরে যে দিকেই হোক ভ্রমণ সরিষার রাজ্যে একবার হলেও ঘুরতে চায় মন।

গ্রাম বাংলার মাঠে প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। শীতের আবহমান ছন্দে প্রকৃতি সেজেছে নিজের মতো করে। কুয়াশায় মড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমহিত ভ্রমণ পিপাসুরা। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চারিদিকে বিরাজ করছে অপরূপ দৃশ্য। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদের বিশাল সমারোহ। কুয়াশা ও ঝলমলে রোদের খেলা আর দিগন্ত বিস্তৃত হলদে বরণ সরিষার ফুলের ঘ্রাণ। দিগন্তজোড়া হলদে রঙের ফুলের সৌন্দর্যে মাতাল সৌন্দর্য প্রেমিরা।

শীতের মুক্ত হাওয়ায়  চারপাশ সরিষা ক্ষেতে ঢাকা। যেদিকেই চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। আর এই ঘ্রাণ উপভোগে ছুটে চলছে হাজার হাজার মানুষ।

ঢাকার পাশেই সৌন্দর্যে ঘেরা সরিষা ফুলের বাগান:

মানিকনগন সরিষা ক্ষেত: ঢাকার খুব কাছে সরিষা ফুলের সুন্দর রাজ্য মানিকনগর। ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজ। সেটা পেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বাঁয়ের সড়কে কয়েক কিলোমিটার চললেই মানিকনগর। সেখানে সড়কের দুইপাশে পাওয়া যাবে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। এছাড়া মানিকনগর থেকে সামনে সিঙ্গাইরের সবখানেই আছে সরিষা ফুলের রাজ্য। সেখান থেকে আরেকটু দূরে গেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা এলাকায়ও আছে প্রচুর সরিষা ক্ষেত।

সিঙ্গাইর: মানিকগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা সিঙ্গাইর। এখানকার প্রায় সব ফসলের মাঠই এখন সর্ষেক্ষেতে পরিপূর্ণ। চারদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। মাঝ দিয়ে বয়ে চলা মেঠো পথ। গাঁয়ের ছেলেপুলেদের দুরপনা আর কৃষকদের কর্মব্যস্ত সময়। সবই দেখতে পাবেন এসব সরিষা ক্ষেতে। ঢাকার গাবতলী পেরিয়ে কিছুটা সামনেই আমিন বাজার। সেখান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ছেড়ে হাতের বাঁয়ের রাস্তা, সোজা চলে গেছে সিঙ্গাইর। তবে হলুদের রাজ্য পেতে সিঙ্গাইর পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমিন বাজার থেকে সিঙ্গাইরের দিকে প্রায় ৩ কিলোমিটার চললে নদীর উপরে একটি সেতু পার হতে হয়। ওপারে হাতের বাঁয়ে যে কোনো ছোট সড়ক ধরে একটু ভেতরে ঢুকলেই পেয়ে যাবেন হলদু গালিচায় মোড়ানো ফসলের ক্ষেত।

ঝিটকা: এ জায়গাটিও মানিকগঞ্জে। এখানে গেলেও পেয়ে যাবেন দিগন্তজোড়া সরিষা ক্ষেত। মাঠ ভরা হলুদ সরিষা ক্ষেতের ভেতরে বাড়তি দেখা মিলবে আঁকাবাঁকা মেঠোপথের দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ। এখানকার সরিষা ক্ষেতগুলোর কোনো কোনো জায়গায় মধুচাষীরা বসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য। তাছাড়া সূর্য ওঠার আগে ঝিটকা পৌঁছতে পারলে তাজা খেজুরের রস খেতে পারবেন। এ জায়গায় সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা।

ঢাকার কাছে সরিষা ফুলের আরেক জগতের নাম মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান আর টঙ্গিবাড়ী। এখানকার আড়িয়াল বিল কিংবা সোনারঙ এলাকায়ও আছে প্রচুর সরিষা ক্ষেত। যে কোনো দিন কিছুটা সময় করে তাই ঘুরে আসতে পারেন কাছে-দূরের কোনো এক সরিষা ক্ষেত থেকে। ঢাকা থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা সম্ভব।

ঘুরতে যেতে নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা কোনো গাড়ি নেয়া উচিত। খরচ কমাতে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করেও নিতে পারেন।  তাহলে ইচ্ছেমতো ভালোলাগা যে কোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন। ঘুরতে গিয়ে সরিষা ক্ষেতের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখবেন। মনে রাখবেন, সরিষা ক্ষেতে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় খুব সকাল কিংবা বিকেল

ওয়াইপি/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন