

বিচারহীনতার সংস্কৃতিতেই বাংলাদেশে ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহ আকারে। নোয়াখালীতে এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নারকীয়ভাবে নির্যাতন করার ঘটনার প্রতিবাদে যেখানে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে সেখানে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান অপরাধী দেলোয়ারের নাম না থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে একটি খবরে জানা গেছে দেলোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও আবদুর রহিমসহ ৫ তরুণ ওই ঘটনা ঘটায় বলে জানা গেছে। কিন্তু আসামি তালিকায় নেই দেলোয়ারের নাম।
অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ ৫ তরুণ এ ঘটনা ঘটালেও তার নাম নেই আসামিদের তালিকায়। এজাহারে, বাদল (২২)-কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রহিম (২০), আবুল কালাম (২২), ইসরাফিল হোসেন (২২), সাজু (২১), সামছুদ্দিন ওরফে সুমন (৩৯), আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া (৪৮), আরিফ (১৮) ও রহমত উল্যা (৪১)-এর নাম উল্লেখসহ ৭/৮ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে তার পুরো পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আরেক আসামি দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে র্যাব। বাদলকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে আর দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডের একটি বাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
এর আগে দু’দফায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে আটক করা হয়। তারা হলো, একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুর রহিম (২২) এবং রহমত উল্যাহ (৪১)।
এরই মধ্যে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাসায় ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল রোববার গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওচিত্রে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তাঁর মুখমণ্ডলে উপর্যুপরি লাথি ও বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায়। এ সময় গৃহবধূ হামলাকারীদের বহুবার পায়ে ধরে এবং বাবা বাবা বলে ডাকলেও নির্যাতন বন্ধ রাখা হয়নি। বরং তাঁর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ সব স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। তারা এ সময় তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকার বাদল, কালাম, দেলোয়ারসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এলাকাবাসীর দাবি – তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে ওই নারী ধর্ষণের কথা বলছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে এলাকার একদল বখাটে ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে। এভাবে তারা আরো কয়েকবার তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় বলে গৃহবধূ জানান। পরে বখাটেরা শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কোনো একসময়ে তাঁকে বেদম মারধর করে ভিডিও ধারণ করে। এভাবে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তারা গৃহবধূকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আবারও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গতকাল রোববার তারা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, ওই গৃহবধূর সঙ্গে তাঁর স্বামীর দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না। তবে সম্প্রতি স্বামী তাঁর কাছে ফিরে আসেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেনের নজরে এলে তিনি এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। এসপি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ নির্যাতিতাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে।