

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার আয়োজনে মাদারীপুর সরকারি কলেজের সামনে দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী সহিংসতার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ১ অক্টোবর সকাল ১০ টায় ইশা ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান সেরনিয়াবাত (আসলাম) এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহমান সেরনিয়াবাত (আসলাম) বলেন, “দেশ এখন ধর্ষণ মহামারিতে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সলিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট বলছে- ২০১৪ সালে মোট ধর্ষণ ৭০৭টি। ২০১৫ সালে মোট ধর্ষণ ৮৪৬টি। ২০১৬ সালে মোট ধর্ষণ ৭২৪টি। ২০১৭ সালে মোট ধর্ষণ ৮১৮টি। ২০১৮ সালে মোট ধর্ষণ ৭৩২টি। ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২জন।
চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬০১ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৪৬২ জন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৪ জন। ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৪০ জনের বয়স ৬ বছর এবং ১০৩ জনের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১২৬ জন নারীর ওপর।
শতকরা ৩ শতাংশ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত অপরাধী শাস্তি পায়। আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শাস্তি হয় মাত্র ০.৩ শতাংশ। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী।”
তিনি আরো বলেন, “দেশে ধর্ষণের মাত্রা দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও বিচারের মুখ দেখছেনা জনগণ। এ দেশে ধর্ষণ করে কিংবা ধর্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নারীদের হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। তনু হত্যা, মিতু হত্যা, তানিয়া হত্যার বিচার এখনো আমরা দেখতে পাইনি। নুসরাত হত্যার বিচার হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশে ধর্ষিতা হয়েছে ৩৫ জন নারী। সরকার নারী ক্ষমতায়নের বুলি ছড়ালেও প্রকৃতপক্ষে নারীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বারবার সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।” তাই অনতিবিলম্বে সংসদ অধিবেশন ডেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন করার জোর দাবি জানান তিনি।
মানববন্ধনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ জামিল হোসাইন ও ইসলামী যুব আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক মুহাম্মাদ দেলোয়ার হুসাইন। নেতৃদ্বয় তাদের বক্তব্যে বলেন, “ধর্ষণ বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী যেন ধর্ষণের উৎসব চলছে। এর দায় ভার সম্পূর্ণভাবে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের।
তারা আরো বলেন, নারী ক্ষমতায়নের মুখরোচক বুলির আড়ালে চলছে নারীর প্রতি সহিংসতা। বর্তমান সরকার আজ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ। সিলেটের এমসি কলেজ নয় শুধু সারা দেশে আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধর্ষণের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এভাবে একটি সমাজ চলতে পারে না । অনতিবিলম্বে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কার্যকর করতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এমসি কলেজ এবং খাগড়াছড়িতে উপজাতি ধর্ষণের অভিযুক্ত ধর্ষকদের বিচার করতে হবে। অন্যথায় ইশা ছাত্র আন্দোলন ছাত্র জনতাকে নিয়ে গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে।” তারা ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারি দলের কর্মীদের বেপরোয়া ভাব এবং সরকারের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেন।
উক্ত মানববন্ধনে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ জাকির হুসাইন, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ সাজ্জাত হোসাইন, দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসে, আলিয়া মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ আবু নাঈম, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক মুহাম্মাদ ফেরদাউস, সদস্য মুহাম্মাদ ইমরান হোসেন, সদর থানা শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ হফিজুর রহমান, মাদারীপুর পৌর শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ বশির উদ্দিন, কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া, ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম শিবচর থানার সভাপতি মোহাম্মাদুল্লাহ তায়ানি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এনএইচ/