
ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম জয়নগর গ্রামে স্ত্রী ও সন্তানকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামী বেল্লাল হোসেন পাটওয়ারীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামী বেল্লাল উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নাছির পাটোয়ারীর ছেলে। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশী সময় ধরে মামলার বিচার পরিচালনা করে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ এ. বি. এম. মাহমুদুল হক আসামী বেল্লাল হোসেনকে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড ও ২০১ ধারার অভিযোগে ১০ বছর কারাদন্ড প্রদান করেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষনার সময় আসামী বেল্লাল উপস্থিত ছিল। এ ছাড়াও রায় শোনার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে অনেক উৎসুক জনতা ভীড় জমায়।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামী বেল্লাল হোসেন ঢাকায় ড্রাইভারী চাকুরী করতেন। মাঝে মাঝে সে বাড়িতে আসতো। তার প্রথম সন্তান মেহেদীর বয়স সাত বছর ও দ্বিতীয় সন্তান মােহনার বয়স এক বছর। বেল্লাল ঢাকায় চাকুরী করার সুবাদে ঢাকার একটি মেয়েকে বিয়ে করে। এবং শাহনাজকে বিয়ে করার পূর্বে ঢাকার স্ত্রীকে তালাক দেয়। কিন্তু ঢাকায় থাকা কালে পূর্বের স্ত্রীর সাথে পুনরায় যোগাযোগ করে। বিষয়টি শাহনাজের কাছে ধরা পড়ে। এ নিয়ে বেল্লালের সাথে শাহনাজের ঝগড়া-ঝাটি হয়। এ ঘটনায় বেল্লাল ভিটামিন জাতীয় ওষুধের সাথে বিষ মিশিয়ে পর দিন ঢাকায় চলে যায়। পরে শাহনাজ ওষুধের সাথে বিষের গন্ধ পেয়ে তার আত্মীয় স্বজনকে জানায়।
পরবর্তীতে বেল্লাল আবারও স্ত্রী শাহনাজকে হত্যা করার জন্য নতুন করে স্বড়যন্ত্র করতে থাকে। এবং ঘটনার দিন রাতে বেল্লাল তার স্ত্রী শাহনাজকে ঘুমের মধ্যে মুখ চেপে ধরে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে ঘটনাকে অন্য দিকে নেয়ার জন্য স্ত্রী শাহনাজের গায়ে কম্বল পেচিয়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এবং সে ছেলে মেহেদীকে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বিদ্যুতের তার থেকে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করে। এতে তার কন্যা সন্তান মোহনাও আগুনে পুড়ে মারা যায়।
আসামী বেল্লাল হোসেন ১৬৪ ধারার জবানবন্ধীতে উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২ জুন শুক্রবার দিবাগত রাতে আমি স্ত্রী শাহনাজকে সহবাসের জন্য জোর করি। এতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে চাকু দিয়ে গলায় আঘাত করলে সে মারা যায়। আমি নিজেকে বাচানাের জন্য স্ত্রীকে কম্বল পেচিয়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে স্ত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেই। আমি আমার ছেলে নিয়ে লাফিয়ে ঘর থেকে বের হই। আমার স্ত্রী পুড়ে মারা যায় ও আমার ছােট কন্যা সন্তানও উক্ত আগুনে পুড়ে মারা যায়। আমি এক পর্যায় অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমার ভাই বা অন্য কোন লােক সে সময় ছিল না। এবং এ ঘটনায় অন্য কেহ জড়িত নয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আাইনজীবী সৈয়দ আশরাফ হোসেন লাভু জানান, এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক রায়। রায়ে বাদি পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এনএইচ/

