আজ থেকে খুলছে ‘বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের’ সকল প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ৭:২০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০
বরিশালের চরমোনাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের সদর দপ্তর। ছবি : মিরাজ নাদিম।

বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি কর্তৃক পরিচালিত, চরমোনাইর মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড এর নিয়ন্ত্রণে থাকা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ (২৯ আগস্ট) থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে।

  • সরকারী নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কওমী মাদরাসা খোলার অনুমতির উপর ভিত্তি করেই বোর্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুরআন শিক্ষা বোর্ডে সচিব মাওলানা এম শামসুদদোহা তালুকদার।

আজ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই বোর্ডের অধিনে থাকা সকল বিভাগের ক্লাশ ও পরীক্ষাসহ সামগ্রিক সকল কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে সকল কার্যক্রমই সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মোনে করা হবে বলে বোর্ড সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের কাছ থেকে জানা গেছে।

  • চরমোনাই তরিকার নিয়ন্ত্রনাধিন এই বোর্ডটির চেয়ারম্যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)। এই বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদাধিকার বলেই তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি। বোর্ডটির নির্বাহী চেয়ারম্যান হলেন মুফতী সৈয়দ নুরুল করীম।

বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড একটি স্বতন্ত্র বোর্ড। বহুমূখী প্রকল্প ও ইসলাম শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে কাজ করছে বোর্ডটি। ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার কুরআনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠাই এই বোর্ডের লক্ষ।

বোর্ডের সচিবের বরাতে জানা গেছে – কুরআন শিক্ষা বোর্ডের অধিনে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনভূক্ত প্রায় ৩ হাজারের অধিক মাদরাসা রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টির অধিক রয়েছে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত মাদরাসা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই বোর্ডের অধিনে রয়েছে বৃহৎ বৃহৎ মাদরাসা। এই বোর্ডের অধিনে থেকেই দাওরায়ে হাদীস ছাড়া অন্যান্য ক্লাশের ছাত্র-ছাত্রীরা বেফাকে পরীক্ষা দিয়ে থাকে এবং দাওরায়ে হাদীসের ছাত্র-ছাত্রীরা হাইআতুল উলয়ায় পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য গত ২৫ আগস্ট সকল কওমী মাদরাসাসমূহকে প্রজ্ঞাপনে এনে নতুন করে জারি করা একটি নোটিশের মাধ্যমে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার সুস্পষ্ট অনুমতি মিলেছে।

দেশের আলেম-উলামাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৬টি শর্তে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে ২৫ আগস্ট একটি নোটিশ দিয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।

নোটিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগ মনিটরিং করতে পারবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ৬টি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনাগুলো হলো – ১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও মাথায় নিরাপত্তা টুপি পরিধান করা আবশ্যক। ২. মাদরাসায় প্রবেশের পূর্বে প্রবেশদ্বারে স্যানিটাইজিং করতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীরা তার নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে।বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক চলাফেরা করবে না। ৪. একজন শিক্ষার্থী থেকে অপর শিক্ষার্থী কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করবে। ৫. কোভিড-১৯ এর কারণে কোলাকুলি ও মুসাফাহা করবেনা। ৬. শিক্ষক ও কর্মচারীগণও একইভাবে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস গ্রহণ করবেন।

এর আগে গত ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয়ার অনুমতি দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়। এরও আগে গত ১ জুন থেকে দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।

প্রসঙ্গত : করোনাকালীন সময়ে করোনা মহামারীর বিস্তার রোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কওমী মাদরাসামূহকেও গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে আলেমদের দাবি অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়।

এরও আগে ১ জুন দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।

পরবর্তিতে গত ১৩ জুলাই হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে মাওলানা মাহফুজুল হককে আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।

এরপর গত ২৩ জুলাই হাইআতুল উলআর পক্ষ থেকে ৮-ই আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ৫ আগস্ট হাইআর একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে ৮ আগষ্ট কওমী মাদরাসা খোলার পূর্ব সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। পরবর্তিতে স্পষ্টভাবে কওমী মাদরাসাসমূহ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন