‘বাবা’কে নিয়ে ইবরাহীম কোব্বাদীর আবেগঘণ আবৃতি (ভিডিও)

মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

প্রকাশিত: ৩:৫১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২০

ভালোবাসার সবচেয়ে নিরাপদ ভরসাস্থল হলো বাবা। বাবাকে বলা হয় সন্তানের জন্য ‘বটবৃক্ষ’। বাবা যেন সব সময়ই শ্যামলছায়া হয়ে থাকেন আমাদের সবার পরিবারে। বাবা যখন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান তখন সন্তানরা বাবাকে উপলব্ধি করেন যুগ-যুগান্তর ধরে।

  • আবৃত্তিশিল্পী ও স্বনামধন্য গ্রাফিক ডিজাইনার ইবরাহীম কোব্বাদী ও প্রতিনিধিত্বশীল তরুণ আলেম আবদুর রহমান কোব্বাদীর বাবা মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. কিছুদিন পূর্বে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মহান রবের সান্নিধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। গত ২০ জুলাই (সোমবার) রাত ১২.১ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন নোয়াখালীর স্বনামধন্য এই আলেমে দ্বীন।

ইন্তেকালের এক মাসের কিছু বেশি সময় পর বাবাকে নিয়ে আবেগঘন ও হৃদয়াগ্রহী একটি আবৃত্তি প্রকাশ করেছেন আবৃত্তিশিল্পী ইবরাহিম কোব্বাদী। ভরাট গলায় হৃদয়ের সবটুকু আবেগ জড়িয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন এই আবৃত্তিটি।

‘প্রিয় বাবা’ শিরোনামে এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ এর লেখনীতে আবৃত্তিটি নিম্মরূপ :

প্রিয় বাবা,
এতদিন বেশ ভালোই কাটছিলো।
তুমি পাশে থাকার অনুভূতিগুলো  বটবৃক্ষের বিস্তৃত ছায়াতল ছিল। আমার সুখোরাজ্যের ছাউনি হয়ে আগলে রাখতে
ভালোবাসার পরশে, আদর স্নেহের আবেশে।

বাবা,
বড্ড ভালো ছিলাম,সুখে ছিলাম তোমার দু’আয়,
তোমার নয়ন জুড়ানো চাহোনিতে। জীবনের ক্ষণে ক্ষণে উৎসাহ উদ্দীপনা ভরসা দিতে।

বাবা,
এতদিন তোমায় দেখে তোমার সোহাগ মেখে  হৃদয় জুড়াতাম।
আলোকোজ্জ্বল পথে জীবনের পরতে পরতে তোমায় পেতাম।
কিন্তু হঠাৎ, মনের অজান্তেই যেন ফুটন্ত গোলাপ ঝরে গেল।
আর পাচ্ছিনা গোলাপের সেই ঘ্রাণ, নিথর দেহে নেই, প্রিয় বাবার প্রাণ।

বাবা,
আজ তোমার এই মহাপ্রস্থান, তুমি না থাকার শুন্যতা, আমাকে নিরবে কাঁদায়।
নীরব রজনীতে ভাবি তোমাকে চেয়ে থাকি আনমনে আকাশের তারায়।
তবুও,
বারবার দোলা দিয়ে যায় তোমার স্মৃতি।
জনমভর তোমার প্রতি থাকবে বিনম্র শ্রদ্ধাপ্রীতি।

বাবা,
আজ তুমি হারিয়ে গেছো, দু’নয়ন থেকে আড়াল হয়েছো,
তবে, স্মৃতি থেকে তুমি হারাতে পারোনি।
তুমি আমার সুখস্মৃতি, ভালোবাসার ভান্ডার আমার প্রীতি।

বাবা,
তুমি আজও বেঁচে আছো মনে প্রাণে, তোমার সন্তানের সঠিক পথেচলা, সৎ কথা বলা, তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে তোমার অশ্রুমাখা দু’আ ,

প্রিয় বাবা,
স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে তোমার ছাঁয়া। স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাক তোমার মায়া।

বাবা ও প্রিয় বাবা,
ওপারে তুমি ভালো থেকো , আমরা ভালো আছি।
রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি ছগীরা।

মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :

মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ.। পিতা : আল্লামা কোব্বাদ রহ.। তিনি ১৩ মে ১৯৪৪ সনে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন আমানতপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

জন্মের পর পিতার কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি মাওলানা ওয়ায়েস উদ্দীনের। তার বাবা আল্লামা কোব্বাদ রহ. দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে তার নিজ গ্রামে জামেয়া ইসলামিয়া আমানতপুর নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

পঞ্চাশের দশকে আল্লামা. কোব্বাদ রহ. বগুড়া জেলার জয়পুরহাট থানাদীন কড়ই সিনিয়র মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মাওলানা ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. সেখানে দাখিল সমাপ্ত করেন। এরপর নিজ মাদ্রাসার প্রয়োজনে ১৯৫৭ সনে তার পিতা নোয়াখালী চলে আসলে তিনি সেখানেই পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯৬৫ সনে দারুল উলুম ম‌ঈনুল ইসলাম হাটহাজারী থেকে দাওরা সম্পন্ন করে নিজ পিতার সহকারী হিসেবে জামিয়া ইসলামিয়া আমানতপুর মাদ্রাসায় কর্মজীবন শুরু করেন।
পিতার মৃত্যুর পর‌ও তিনি নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘ ৫৫ বছর যাবত একই প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করে এসেছেন।

অত্যন্ত বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের মানুষ মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. ৭৬ বছর বয়সে ২০ জুলাই ২০২০ ইং সালের সোমবার রাত ১২.১ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।

ইন্তেকালের সময় তিনি চার ছেলে চার মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী ও বহু মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস, ছাত্র রেখে গেছেন।

নোয়াখালীতে আমানতপুর মাদরাসা মাঠে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তার জানাযা সম্পন্ন হয় এবং নিজ এলাকাতেই তিনি সমাহিত হন।

বিশেষ গুন : মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. নিয়মিত রোজনামচা লেখার অভ্যাস ছিল। মৃত্যুর পর তার নিজ হাতে লিখিত প্রায় ২৫ টি ডায়েরী পাওয়া যায় যেখানে তিনি জীবনের অসংখ্য বিষয়ের খুটিনাটি বিষয় লিখে গেছেন।

রাজনীতিতেও তিনি সদা তৎপর ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির প্রধান পুরুষ হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর খেলাফত আন্দোলনে নোয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর জীবনেন শেষের দিকে মরহুম চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করীম রহ প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

নিজ বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর পূত্র ইবরাহীম কোব্বাদী লেখেন – আব্বা চলে গেলেন। কিন্তু এতো এতো স্মৃতি রেখে গেছেন যে তাঁকে কখনোই ভুলা সম্ভব না! বাড়িতে, ঘরে, চারদিকে শুধুই আব্বার শূন্যতা।

আব্বার ব্যবহারিত ব্যাগ, চশমা, ঘড়ি, মেসওয়াক, তাসবীহ, জায়নামাজ, তিলাওয়াত করার পর পাতায় চিহ্ন দিয়ে রাখা কোরআন শরীফ, সুগন্ধি আতরের শিশি, ঔষধের বক্স, হেঙ্গারে ঝুলানো পাঞ্জাবী, রুমালসহ সব কিছু পড়ে আছে আগের মতো, শুধু তিনি নেই।

আব্বাকে অনুভব করার জন্য পেয়েছি তাঁর লিখে যাওয়া অর্ধশত জীবন ডায়েরী। প্রতিদিনের রোজনামচায় তিনি লিখেছেন তাঁর সুখ-দুঃখের কথা! গত দুদিন ধরে শুধু আব্বাকেই পড়ছি, মনে হচ্ছে আব্বা নিজের জীবন সংগ্রামের বর্ণনা দিচ্ছেন। প্রতিটা পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আব্বাকে অনুভব করে আব্বার ভালোবাসায় ব্যাকুল হচ্ছি।

অনুভূতি একটাই, এমন বাবার সন্তান হয়ে আমি ধন্য। আব্বা আমার উস্তাদ, আমার পীর, আমার আদর্শ। আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ, আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।

অপরদিকে গত ২২ আগস্ট শুক্রবার বাদ ইশা ঢাকা কামরাঙ্গীরচরে আব্দুল গাফফার মাদ্রাসা মিলনায়তনে ইসলামী সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে নোয়াখালীর প্রখ্যাত এই আলেম মাও. ওয়ায়েছ উদ্দিন রহ. এর রূহের মাগফিরাত কামনায় এক বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির একাধিকবারের মেয়র পদপ্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি জননেতা আলহাজ্ব আবদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে মাও. আবুল কালাম আজাদ, এইচ এম সাইফুল ইসলাম, মুফতী হেদায়েতুল্লাহ আজাদী, মুফতী আলী হাসান সাকাফী, মুফতী ইব্রাহীম শরীফ, মাও মহিউদ্দিন প্রমূখ।এছাড়াও মরহুমের দুই সন্তান মুফতী আব্দুর রহমান কোব্বাদী ও মাও. ইব্রাহীম কোব্বাদীও উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যপ্রদান : মরহুমের দুই সন্তান মুফতী আব্দুর রহমান কোব্বাদী ও মাও. ইব্রাহীম কোব্বাদী।

আবৃতির ভিডিওটি দেখুন :

প্রতিবেদন : হাছিব আর রহমান।

মন্তব্য করুন