
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: সম্পত্তির লোভে আপন ভাই, মা-বাবাকে খুন করার ঘটনাও বহুল আলোচিত আছে আমাদের দেশে। এবার সম্পত্তি লিখে নিয়ে গর্ভধারিনী মা তফুরা বেগম (৬৫)কে ঘর থেকে বের করার দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে।
সৌদি আরব ফেরত সন্তান তৌহিদুল ইসলাম স্ত্রী রুবি বেগমের পরামর্শে বাবার অবর্তমানে মায়ের নামের ১৪ শতক জমি অপর দুই ভাই-বোনকে বঞ্চিত করে নিজের নামে লিখে নিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিরোধ মিমাংসায় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলেও রুবি বেগমের দায়েরকৃত মামলায় অনেকেই হয়রানীর শিকার।
ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৭ইং সনে উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম করপাড়া গ্রামের হুমার বাড়ীতে। ঘটনার পর থেকে মা গত দুই বছর থেকে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে বসবাস করে আসছে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণসহ ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে জানানোর অপরাধে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ আদালতে ছেলের স্ত্রী রুবি বেগমের দায়ের করা মামলায় আসামী দেয়া হয়েছে বৃদ্ধা তফুরা বেগমসহ স্থানীয় এলাকাবাসীকে। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছেন।
বৃদ্ধা তফুরা বেগম জানান, আমার স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। বহুকষ্টে সন্তানদের মুখে খাবার জুটিয়েছি। ছোট ছেলে তরকারী বিক্রি করে, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি একই ইউনিয়নের ভাটিয়ালপুর গ্রামে।
২০১৭ইং সনে আমার বড় ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তার স্ত্রী রুবি বেগমের কথামতো আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ১৪শতক সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য বহু চাপ প্রয়োগ করে আসলেও আমি রাজি হইনি। একদিন আমি ঘরে অসুস্থ্য থাকাবস্থায় আমাকে চিকিৎসার কথা বলে রামগঞ্জে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের একটি দোতলা কক্ষে নিয়ে আমার কাছ থেকে সকল সম্পত্তি লিখে নিয়ে জোর করে টিপসই আদায় করে। আমি পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে ছোট ছেলে তছলিম ও মেয়েকে কিছু সম্পত্তি দেয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করলে সে আমার কোন কথা শুনেনি। আমি এসময় অনেক কান্নাকাটি করি।
ঘটনার পর থেকে আমার ছেলের স্ত্রী রুবি বেগমের কথামতো আমার ছেলে আমাকে বেশ কয়েকবার মারধর করে। কয়েকবার ঘর থেকেও বের করে দিয়েছে। আমি ঘর থেকে বের হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে গিয়ে ঘরে এসে দেখি আমার রুমে তালা দেয়া। এদিকে ছেলের স্ত্রী-শাশুড়ি ও তার আত্মীয় স্বজন ঘরে বসবাস করছে। আমার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম সৌদি আরব চলে গেলে নতুন করে আমার উপর নেমে আসে অত্যাচার। ঘরের কোন কিছুতেই আমার কোন অধিকার থাকতো না। একদিন বাড়ীর গাছের পেপে পাশ্ববর্তি বাড়ীর একজনকে দেয়ার কারনে আমার ছেলের স্ত্রী রুবি বেগম আমাকে ঝাড়– দিয়ে পিটিয়েছে। আমাকে ঘর থেকে বের করার জন্য আমার প্রবাসী ছেলের কাছে আমার নামে দেয়া হয় নানান অভিযোগ।
বৃদ্ধা তফুরা বেগম আরও বলেন, ছেলের স্ত্রী’র এ ধরনের আচরনে বাধ্য হয়ে আমি বেশিরভাগ সময় আত্মীয়স্বজনদের বাড়ীতে চলে যেতাম। ১৫ আগষ্ট শনিবার সকালে আমি ছেলের বাড়ীতে এসে আমার হাতে লাগানো গাছ থেকে দুইটি পেপে বিক্রি করে ঔষধ ক্রয় করলে আমার ছেলের স্ত্রী রুবি বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ীর সব পেপে ও পেয়ার গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়। স্থানীয় এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানালে তারা ছেলের স্ত্রী রুবি বেগমের পরামর্শদাতা ও মামলার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধা তফুরা বেগমের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম মোবাইলের ইমো নম্বরে জানান, বাড়ীতে কিছু হলেই আমার স্ত্রীর দোষ দেয় আমার মা। আসলে সব দোষ আমার মায়ের। আমার মায়ের কারনেই সংসারে অশান্তি লেগে আছে। এ পর্যন্ত ৫০ বার বৈঠক করেও কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি আমি। আমি রুজি করে গাড়ী-বাড়ী সম্পদ কিনেছি। সে সম্পদ আমি আমার নামে নিয়েছি তাতে তো কারো কিছু বলার নেই।
স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি কথা রেকর্ড না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন ভাই আমি মাপ চাই। আমি কোন কথা বলতে পারবো না। এ পরিবারের বিরোধ মিমাংসা করতে গিয়ে মামলার আসামী হয়েছি।
উক্ত বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার ওসি একে ফজলুল হক মোবাইল ফোনে জানান, আমিতো বিষয়টি জানি না। আর আমিতো এখানে যোগদান করেছি মাত্র এক সপ্তাহ। এর আগে হয়তো আদালতের মামলার প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার কোন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করতে পারে। তারপরও যদি এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাই অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আই.এ/

