

কওমী মাদরাসাসমূহের সর্ববৃহত শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফ ও বর্তমান মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুস এর ফোনালাপে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতী জসিম উদ্দিনকে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মুফতি মনসুরুল হক, মুফতি দেলোয়ার হুসাইন, মুফতি আব্দুল মালেক এবং মাওলানা নোমান ,বরুড়া, কুমিল্লা।
- গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ২৭ শে আগস্ট এর মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন। ২৯ শে আগস্ট সভাপতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য মজলিসে খাসের পূনরায় সভায় এই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবেন।
বেফাকের ফোনালাপ ফাঁস ও মার্কশীট দুর্নীতি : ফেঁসে যেতে পারে শতাধিক মাদরাসা
বেফাক থেকে বহিস্কার ও ‘ফোনালাপ’ বিষয়ে যা বলছেন মুফতি আবু ইউসুফ
বেফাক থেকে বহিস্কার বিষয়ে যা বলছেন মুফতী তোয়াহা
আজ (১৬ই আগস্ট) রবিবার সকাল ১১টায় বেফাক সভাপতি আল্লামা শফীর কার্যালয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর মজলিসে খাসের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী, আল্লামা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আনাস মাদানী, মুফতি নুরুল আমিন এবং মাওলানা ছফিউল্লাহ।
সভায় আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর বেফাকের মজলিসে আমেলার সভার তারিখ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এবং বেফাকের ১১ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হওয়া এবং নতুন জমি ক্রয় বিষয়ে আল্লামা শফী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বেফাকের আজকের খাস কমিটির বৈঠকে বেফাকের খাস কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ৯ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।
আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে আজকের মিটিং-এ উপস্থিত ছিলেন বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহাসচিব আল্লামা কুদ্দুস, মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা নুরুল আমীন, মুফতী ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু (সিলেট), মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মুফতী মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস, মাওলানা সফিউল্লাহ (পীরজঙ্গী মাদরাসা)।
খাস কমিটির সদস্যদের মধ্যে আজকের মিটিংয়ে উপস্থিত হননি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবদুল হালিম (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা মনিরুজ্জামান, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবদুল হক মোমেনশাহী, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া ও মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী। এর মধ্যে মধুপুরের পীর সাহেব অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
খাস কমিটির অপর সদস্যরা কেন উপস্থিত হননি এবং আজকের মিটিংয়ের ব্যাপারেও বা তাদের মতামত কী সে বিষয়ে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। বেফাকের অফিসে প্রদত্ত তাদের সাথে যোগাযোগের নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী পাবলিক ভয়েসকে বলেন, ‘হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত আজকের এই বৈঠক বেফাকের অফিসিয়াল বৈঠক, তবে বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং কী নিয়ে আলোচনা হবে সেসব কোনো বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন।’
এদিকে বেফাকের বৈঠক কেন বেফাকের অফিসে না হয়ে হাটহাজারী মাদরাসায় হচ্ছে সে বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কওমী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। তবে বেফাকের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে বেফাক চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার কারণে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে বেফাকের খাস কমিটির সদস্যরা চট্টগ্রামে গিয়েছেন জরুরি এই বৈঠকটি করার জন্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে আলামিন আরাফাত নামে একজন কওমী শিক্ষার্থী লিখেন – আল্লাহ এই বরকতময় মজলিশকে কবুল করুক। আমাদের বড়রা একত্রিত হয়েছেন, উম্মতের সমস্যা নিরসনের জন্য, আমরা বেশী বেশী দোয়া করতে থাকি, জায়নামাজে কান্নাকাটি করি, যাতে উত্তম কোন ফায়সালা আসে। যারাই এতে জলঘোলা করার চেষ্টা করবে,তাদের ধ্বংস অনিবার্য। অনেকেরই দেখি বেফাকের টাকায় বিমানে যাওয়ায় চুলকানি উঠছে,আচ্ছা বিমান ভাড়া আর কত? আজকাল সড়কের কোন ভরসা আছে? সড়কে গেলে যদি কোন একটা দূর্ঘটনা ঘটে এর দায়ভার ওসামা কিংবা অন্য কেউ নিবে? আগেরবারের মত হেলিকপ্টারেতো আর যায়নি। হেলিকপ্টার বাদ দিয়ে নরমাল ঠেলাগাড়ি মার্কা বিমানে চলাফেরা করে,এরাইতো আমাদের উত্তরসূরী,এরা আগের যুগে থাকলে নিশ্চিত উঠের পিঠে চড়ে হাটহাজারী যেতেন।
আরিফ জাব্বার নামে আর এক কওমী শিক্ষার্থী লেখেন – আল্লাহ তাআলা এই বরকতময় মজলিসকে কবুল আর মুঞ্জুর করুন৷ আহ দেশের শ্রেষ্ঠ আকাবীরদের বৈঠক৷ কতই না মুবরক মজলিস৷ নিজে বৈঠকে উপস্থিত হতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতে পারতাম৷ বড়দের এতোটা আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশে আগে কখনো ছিলো না৷ আলেমদের মাঝে ঐক্য না থাকায় সকলে হতাশ হইতো৷ আজ বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সুনিশ্চিত৷ প্রিয় কওমী তরুণ প্রজন্মের ভাইয়েরা, মুরব্বীদের মিল মুহাব্বত দেখে হিংসুকরা তো জ্বলবেই, তাদেরকে জ্বলতে দিন৷
আনাস বিন ইউসুফ নামে একজন কওমী শিক্ষার্থী তার মন্তব্যে লেখেন – হাটহাজারী এখন দারুন-নাদওয়া। জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিয়ে গোপনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে। বৈঠকের রূপ-ঢং দেখে মনে হচ্ছে- এটা স্পষ্ট ষড়যন্ত্রের বৈঠক। তবে এই বৈঠকে যারা উপস্থিত আছেন তাদের তালিকা দেখে আমার দৃঢ় বিশ্বাস— তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করেন না। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই— বৈঠকে উপস্থিত আব্বাজানের আশীর্বাদপুষ্ট নীতিহীন হযরতবৃন্দ কওমির আদর্শ ও স্বকীয়তা বিরোধী ষড়যন্ত্র করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করার নন। পূর্বের অভিজ্ঞতা এমনটাই বলে। তাই আশংকা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা করে যে বৈঠকটি চলছে তা আমাদের জন্য প্রত্যাশিত কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। বাকিটা সময় বলে দিবে। অপেক্ষা করুন।
এছাড়াও এ বৈঠক নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই মন্তব্য করছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন – এই বৈঠক থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের মাধ্যমে বেফাকের চলমান অস্থিরতা বিষয়ে একটি সমাধান পাওয়া যাবে।
বেফাক চলমান অস্থিরতা সম্পর্কে জানতে প্রতিবেদনগুলো পড়ুন :
বেফাকের অস্থিরতা: গুঞ্জনের ডালপালা পক্ষ-বিপক্ষ ও অনেক পক্ষ
বেফাক ও কওমী মাদরাসা সংকট : মূল প্রশ্ন আড়ালেই থাকছে
বেফাক সংকট সমাধানে দায়িত্বশীলরা দ্রুত উদ্যোগী হন : মুফতী ফয়জুল করীম
বেফাকে অনিয়ম : বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ
বেফাক থেকে তিনজন বরখাস্ত : দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চলবে
বেফাক মহাসচিব আল্লামা কুদ্দুস নির্দোষ : আল্লামা শফী