

গালওয়ান ভ্যালি, প্যাংগং লেকের পর এবার দেপসাং ভ্যালিতে সামরিক শক্তি দিয়ে ভারতের এলাকা চীন কব্জা করার চেষ্টা করতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর ১৬ কোরের সাবেক কমান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রায় বলেছেন, এতদিন চীনের পক্ষে দেপসাং ভ্যালিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা মুশকিল ছিল। কারণ পাহাড়ের উপরে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি থেকে ভারত ওই এলাকায় কর্তৃত্ব করে। কিন্তু এখন চীনের সেনা দেপসাং ভ্যালির দক্ষিণে, গালওয়ান ভ্যালিতে পাহাড়ের মাথায় চলে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, ওদিকে প্যাংগং লেকের মধ্যে ঢুকে আসা ফিঙ্গার ফোর নামক পাহাড়ের মাথাতেও চীনের সেনাবাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। এর পর চীন দেপসাং-এও সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করবে। বাস্তবের জমিতে এর অর্থ হলো- দেপসাং ভ্যালি থেকে একেবারে নীচে ডেমচক পর্যন্ত কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা চীনের রয়েছে।
সাবেক সেনা কর্কমর্তাদের এই শঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। কারণ দেপসাং-এ এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে চীন। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে ট্যাঙ্ক, কামানও মোতায়েন করতে শুরু করেছে। ওই এলাকায় দ্রুত সেনা মোতায়েনের জন্য রাস্তাও তৈরি করছে চীন।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রায়ের ব্যাখ্যা, দারবুক থেকে শিয়ক হয়ে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তাভারতের এলাকায় হলেও চীনের মাথা ব্যথার কারণ। চীন পাহাড়ের উপর থেকে এই রাস্তায় গতিবিধি নজরদারি করতে চায় বলেই গালওয়ান ঘাঁটির ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার তোয়াক্কা না করে পাহাড়ের উপরে চলে এসেছে। সেখান থেকে চীন দৌলত বেগ ওল্ডির দিকে যাওয়া রাস্তায় নজরদারি করতে পারবে। ফলে সামরিক দিক থেকে আমাদের দৌলত বেগ ওল্ডি দুর্বল হয়ে পড়ল।
দেপসাং ভ্যালিতে চীনের সেনা ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রায় তিন সপ্তাহ ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। আগস্ট মাসেই দেপসাং-এর উপরে কর্তৃত্ব করতে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি দৌলত বেগ ওল্ডি চালু করে দেয় ভারত। এবার গালওয়ান বা প্যাংগং থেকে চীনের সেনাবাহিনী সরানো সহজ হবে না বলেই মনে করছেন সাবেক সেনা-কর্মকর্তারা।
রামেশ্বর বলেন, অনেকে বলছে, চীনের সেনা শীতে সরে যাবে। সরে যাওয়ার ভাবনা থাকলে কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করত না। ভারতের জওয়ানেরা শীতের সময় ওই ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকতে পারলে, ওরা পারবে না কেন?
তিনি আরো বলেন, আমি যদি মনে করি, আমাদের পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার উপায় নেই, তাহলে ওদের অন্তত ওখানেই আটকাতে হবে। গালওয়ান, প্যাংগং বা দেপসাং, কোথাও এগোতে দেওয়া চলবে না। চীন কথা বোঝে না। সমানে সমানে শক্তি হলে তবেই গুরুত্ব দেয়। সেটাই করতে হবে।
কর্তৃত্ব করার লক্ষ্যেই প্যাংগং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার-ফোর বলে চিহ্নিত পাহাড়ের মাথাতেও চীন ঘাঁটি গেড়েছে। পুরো এলাকার ভৌগলিক খুঁটিনাটির সঙ্গে পরিচিত রামেশ্বরের বক্তব্য, চীনের সেনা প্যাংগং-এর পাহাড়ের মাথায় অন্তত ৬০টি কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করে ফেলেছে। পাহাড়ের নীচে ভারতের ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি)-র চৌকি থাকলেও পাহাড়ের উপরে চীন ঘাঁটি গেড়ে ফেলায় ভারতের সেনা বা আইটিবিপি ফিঙ্গার-এইটের দিকে ভারতের এলাকাতেই যেতে পারছে না।
রামেশ্বর বলেন, আমাদের পক্ষে গালওয়ানে ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট ও প্যাংগং হ্রদের ফিঙ্গার-ফোরের অন্য দিকে নিজের এলাকায় আর এগিয়ে যাওয়া মুশকিল। ব্যস, গল্প শেষ।
বিজ্ঞাপন
এমএম/পাবলিকভয়েস