

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চণ্ডিছড়া থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত ৫টি স্থানে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এখানে আদিবাসী ত্রিপুরাদের বসবাস। এই এলাকায় বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি পানির ঢলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় নৃ গোষ্টির লোকজন ও তাদের বসতভিটা।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় তাদের সহায়তায় উপস্থিত হয়ে ফেসবুক লাইভ করেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। লাইভে তিনি স্থানীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জ-৪ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এই ত্রিপুরা নৃগোষ্টির লোকদের প্রতি একটু নজর দিতে এবং তাদের বাড়িঘর রক্ষায় ভূমিকা রাখতে।
তিনি বলেন – আমাদের এলাকার সাংসদ তিনি একটু যদি নজর দেন এবং পাহাড়ি ঢলের পানি যাওয়ার গতিপথ পরিবর্তন করার ব্যাবস্থা করে দেন তাহলেই হয়ত তাদের বাড়িঘর বেঁচে যায়।
একই সাথে যারা বিভিন্নভাবে নৃগোষ্ঠিদের নিয়ে কাজ করছে তাদেরকেও তিনি এই ত্রিপুরা আদিবাদীসের পাশে দাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। যেহেতু ববাগত শত শত বছর ধরে এই জায়গায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছে তাই তাদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য হলেও এদের বাড়িঘর রক্ষা করা উচিত বলে মতামত দেন ব্যারিস্টার সুমন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে – সাতছড়ির ত্রিপুরা পল্লিতে ২৪ টি পরিবারে প্রায় দেড়শ লোক বসবাস করেন। এবারের বর্ষার পানির ঢলে ইতোমধ্যে তাদের তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে এবং আরও দুটি ঘর একদম ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) রাতে পাহাড়ি ঢলে পুরনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চণ্ডিছড়া থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পুনরায় বৃষ্টি হলে যে কোনো সময় এ সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বসবাসরত ত্রিপুরা পল্লীর ২৪টি পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছড়ার পানিতে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। ফলে পল্লীর ২৪টি পরিবার এখন বাসাবন্দি হয়ে পড়েছে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির চণ্ডিছড়া চা বাগানের নাচঘর ও মন্দির রক্ষার জন্য তৈরি প্রায় ৬০ ফুট গাইড ওয়ালও ভেঙ্গে গেছে। ফলে আমু, নালুয়া চা বাগানের চলাচলের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাগানের লছমন মুণ্ডা, লিটন মুণ্ডা ও আলন রায়ের ৩টি কাচাঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে তারা এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।
পুরনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চণ্ডিছড়া থেকে সাতছড়ি পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকার ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার ৫টি ব্রিজ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে চণ্ডিছড়া ও রামগঙ্গা ব্রিজ দুটি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো সময় পাহাড়ি ঢলে এ দুটি ব্রিজ ভেঙ্গে নিয়ে যেতে পারে।
সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্ত দেববর্মা জানান, দু’বছর আগে ঢলে আমাদের ৪টি ঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি রাতে ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় আমরা পল্লী থেকে বের হতে পারছি না। পুনরায় বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে আমাদের বসতভিটা ভেঙ্গে নিয়ে যাবে।
ইউপি সদস্য আবু তৈয়ব মুমিন জুয়েল বলেন, আমাদের বাগানের বেশ কয়েকটি চা শ্রমিকের ঘর ভেঙ্গেছে এবং বাগানের একমাত্র মন্দির ও নাচঘর রক্ষার গাইড ওয়ালটি ভেঙ্গে গেছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মন্দির ও নাচঘর।
#আরআর/পাবলিক ভয়েস