

প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ঈদের নামাজের জামাত হবে না কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায়। প্রতিবছরই দেশের সর্ববৃহত ঈদের জামাত হয়ে থাকে ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানে।
১৮২৮ সাল থেকে শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাত হয়ে আসছে। সেই থেকে ১৯২ বছর ধরে বৃহত্তম এ ঈদ জামাত হয়ে আসছে। এবছর ১৯৩তম বছরের ঈদ জামাত হওয়ার কথা ছিলো।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শোলাকিয়ায় নামাজ পড়ার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষজন আসেন। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত না হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গতকাল এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী। এর আগে ঈদ জামাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বৃহস্পতিবার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্মমন্ত্রণালয়।
পরে ধর্মমন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠকের পরে করোনাভাইরাসের কারণে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত এবার ঈদগাহে করা যাবে না বলে জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসকের ফেসবুকে প্রচার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করার জন্যও অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ইতিমধ্যে (আজ বৃহস্পতিবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উন্মুক্ত স্থানে বড় পরিসরে ঈদের জামায়াত পরিহারের নির্দেশনা দিয়ে বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী ঈদের জামাত আয়োজনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। ইসলামি শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, মসজিদের প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা, প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে আসা এবং অজুর সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ঈদের নামাজের জামাতে আসা মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে ও এক কাতার অন্তর কাতার করতে হবে।
শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। মসজিদে জামায়াত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহারের অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈদের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করতে খতিব ও ইমামদের অনুরোধ করা হয়েছে।
খতিব, ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৩তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত। ঈদগাহের মুতওয়াল্লি দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান জানান, ঈদগাহের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শোলাকিয়ায় কোনো ঈদের জামাত বন্ধ হয়নি।
এবারই করোনাভাইরাসের কারণে ঈদের জামাত বন্ধ করা হলো। তিনি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ এবং দেশ ও দেশের জনগণের জন্য দোয়া করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন।
সংশ্লিষ্ট খবর: খোলা মাঠের পরিবর্তে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় ও দোয়ার অনুরোধ
/এসএস