

আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ ঈসায়ীর ১৭ মার্চ মুতাবেক ২য় হিজরীর ১৭ রমজান অর্থাৎ আজকের এই দিনে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইনসাফের আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানবতার এ জিহাদ সংঘটিত হয়েছিলো।
ইসলামী রাষ্ট্র মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর উপত্যকায় মক্কার মুশরিক বাহিনীর সাথে মুসলমানদের প্রথম বড় যুদ্ধ এটি।
ইতিহাসের মোড় বদলে দেয়া এই যুদ্ধের টুকিটাকি তথ্য দিয়ে আজকের ক্ষুদ্র এই আয়োজন।
বদর যুদ্ধের টুকিটাকি:
বদর যুদ্ধের কারণ:-
১. মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা।
২. মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর ষড়যন্ত্র।
৩. মদিনার ইহুদিদের রাষ্ট্র বিরোধি ষড়যন্ত্র।
৪. অর্থনৈতিক কারণ।
৫. কুরাইশদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ।
৬. নাখলার খন্ড যুদ্ধ।
৭. আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের মিথ্যা গুজব।
বদর যুদ্ধের গুরুত্ব:-
১. রাসুল সাঃ এর সামরিক প্রজ্ঞার পরিচয়।
২. ইসলাম প্রচারে সুযোগ সৃষ্টি।
৩. চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ।
৪. মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি।
৫. রাজনৈতিক নেতা হিসাবে মুহাম্মদ সাঃ এর পরিচিতি ৬, মুহাম্মদ সা এর রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি।
৭. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মনে ভীতি সঞ্চার।
৮. বিশ্ব বিষয়ের সূচনা।
৯. রাসূলুল্লাহর (সা.) রাষ্ট্র নায়কের মর্যাদা লাভ।
যেসব খন্ডযুদ্ধ (গাযওয়াহ ও সারিয়্যাহ) বদর যুদ্ধের পরোক্ষ প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলো:
১. সারিয়্যাতু সী ফিল বাহার, ২. সারিয়্যাতু রাগেব, ৩. সারিয়্যাতু খাররার, ৪. গাযওয়ায়ে আবওয়া বা আদ্দান, ৫. গাযওয়ায়ে বুওয়াত, ৬. গাযওয়ায়ে সাফওয়ান, ৭. গাযওয়ায়ে যিল উশাইরাহ ও ৮. সারিয়্যাতু নাখলা।
* যুদ্ধের তারিখ: ২য় হিজরীর ১৭ রমযান মুতাবেক ১৭ মার্চ, ৬২৪ ঈসায়ী।
* যুদ্ধের স্থান: বদর উপত্যকা
* মুসলিম সৈন্য সংখ্যা : ৩১৩/৩১৪ কিংবা ৩১৭ জন।
* মুসলিম সৈন্যবাহিনীতে ৮২/৮৩ কিংবা ৮৬ জন মুহাজির বাকি সবাই আনসার। আনসারদের মধ্যে ৬১ জন আউস গোত্রের বাকি ১৭০ জন খাযরাজ গোত্রের।
* মুশরিকদের সৈন্য সংখ্যা: ১০০০
* মুসলিম সেনাবাহিনীর অস্ত্র-সরঞ্জাম: মাত্র ২ টি ঘোড়া ও ৭০ টি উট। অস্ত্র বলতে শুধুমাত্র তীর ও তলোয়ার। কারো কাছে বর্ম ও শিরস্ত্রাণ ছিলোনা।
* ঘোড়া দুটির একটি হযরত যুবাইর ইবনু আওয়াম রা: ও আরেকটি মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ কিনদী রা: এর।
* মুশরিকদের ছিলো ১০০ টি ঘোড়া, ৬০০ টি লৌহ বর্ম। উটের এতো বেশি ছিলো যে প্রতিদিন ৯/১০ টি উট জবাই করতো কুরাইশ বাহিনী।
* যুদ্ধকালীন সময়ে মদিনার ইমামতির প্রাথমিক দায়িত্ব অন্ধ সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাখতুম, পরে হজরত আবু লুবাহা ইবনু আবদিল মুনযিরকে মদিনার ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করা হয়।
* মুহাজির ও আনসারদের আলাদা দুটি দল করা হয়। মুহাজিরদের পতাকা থাকে হজরত আলী রাযি: এর হাতে ও আনসার দলের পতাকা হজরত সা’দ ইবনু মুয়াজ রাযি: এর হাতে। সার্বিক দলের পতাকা ও নেতৃত্ব হজরত মুস’আব ইবনু ওমায়ের রাযি: এর হাতে প্রদান করা হয়।
* পতাকার রঙ: সাদা।
* মুসলিম বাহিনীর ডান ব্যুহ এর কমান্ডার হজরত যুবাইর ইবনু আওয়াম রাযি: ও বাম ব্যুহ এর কমান্ডার হজরত মিকদাদ ইবনু আমর রাযি: কে নিযুক্ত করা হয়। পেছনের ব্যুহ এর কমান্ডার হজরত কায়েস ইবনু আবি সা’সাহ রাযি:।
* মুসলিম সেনাবাহিনীর সার্বিক সেনাপতি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর মুশরিক সেনাবাহিনীর সার্বিক সেনাপতি আবু জাহল।
* কুরাইশদের মধ্যে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা একমাত্র গোত্র বনু আদী। এছাড়া যুদ্ধ করা আর না করার ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা দিলে অংশগ্রহণ করেও না করার পক্ষে মত দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে যায় বনু যুহরা। তাদের সংখ্যা ৩০০ জন, ফলে মুশরিক সেনা সংখ্যা ১৩০০ থেকে কমে ১০০০ জন হয় । এই গোত্রের নেতার নাম আখনাস ইবনু শুরায়েক।
* যুদ্ধে গমনের সময় শয়তান কিনানাহ গোত্রের নেতা সুরাকা ইবনু জুশুম এর বেশ ধরে এসে মুশরিকদের উস্কানি প্রদান করে।
* রাসুল সা: যুদ্ধ পূর্ববর্তী পরামর্শ সভায় যে ৩ জন সাহাবির জন্য দোয়া করেন তারা হচ্ছেন, হজরত আবু বকর রাযি:, হজরত ওমর রাযি: ও হজরত মিকদাদ ইবনু আমর রাযি:।
* মুসলিম সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান তিনজন হচ্ছেন, হজরত আলী রাযি:, হজরত যুবাইর ইবনু আওয়াম রাযি: ও হজরত সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাযি:।
* বদর যুদ্ধের প্রথম ইন্ধনদাতা মুশরিক দলের আসওয়াদ ইবনু আবুল আসাদ মাখযুমী।
* সম্মিলিত আক্রমনের পূর্বে সামনাসামনি আক্রমনে যারা অংশগ্রহণ করেন
হজরত আলী রাযি: এর সাথে ওয়ালিদ
হজরত হামযাহ রাযি: এর সাথে শায়বা
হজরত উবায়দা রাযি: এর সাথে উতবা।
* সম্মিলিত প্রথম আক্রমণ হয় মুশরিকদের পক্ষ থেকে।
* বদর যুদ্ধে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ১০০০ জন ফিরিস্তা মোতায়েন করেন।
* আবু জাহেলের হত্যাকারী দুইজন কিশোর হচ্ছেন, হজরত মু’আয বিন আমর বিন জামুহ ও হজরত মু’আয বিন আফরা রাযি:।
* রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু জাহেলকে উম্মতের ফিরআউন নামে অভিহিত করেছেন।
* বদর যুদ্ধে রাসুল সা: হাশিম গোত্রের কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
* বিশেষ করে যে দুইজন ব্যক্তির নাম ধরে হত্যা করতে নিষেধ করেন তারা হচ্ছেন হজরত আব্বাস রাযি:। যিনি তখন নিজের ইসলাম গ্রহনের সংবাদ গোপন রেখেছিলেন। আরেকজন আবুল বুখতারী বিন হাশিম, যিনি মক্কায় রাসুল সা: কে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।
* বদর যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে ১৪ জন সাহাবি শহিদ হন।যার মধ্যে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনসার। আর মুশরিকদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়।
* মুশরিকদের পক্ষ থেকে মক্কায় পরাজয়ের সংবাদ নিয়ে যায় হাইসাম ইবনু আবদুল্লাহ খুযায়ী।
* মুসলিমদের পক্ষ থেকে মদিনার উচ্চ ভূমির মানুষদের কাছে বিজয়ের সংবাদ নিয়ে যান হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ও নিম্নভূমির মানুষদের জন্য যায়িদ ইবনু হারিসা রাযি:।
* বদর যুদ্ধের উপর যে সুরা অবতীর্ণ হয়: সুরা আনফাল।
গ্রন্থনায়: এম ওমর ফারুক আজাদ
শিক্ষার্থী: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,চট্টগ্রাম কলেজ