

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর: চেয়ারম্যানের ভাতিজা বলে কথা। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা নদী কেটে বিক্রি করা অবৈধ মাছ দিয়ে জেলেদের জিম্মি করে রাখা সালিশের নামে বাণিজ্য করা সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত চেয়ারম্যানের ভাতিজারা।
লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় ভোলাগামী একই পরিবারের ১১ সদস্যকে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা আল আমিন ছৈয়াল (২৫) ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় দুই শিশুকে নদীতে ফেলে দেয় তারা।
এ ঘটনায় খবর পেয়ে নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। তবে আগেই পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। শুক্রবার (৮মে) সকালে সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট অদূরে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় এঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আল আমিন ছৈয়াল ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়ালের ভাতিজা। তার বাবার নাম আবু ছৈয়াল। অপরসঙ্গিরা একই এলাকার খোকন বেপারী (২৮) ও সাইজ উদ্দিন সহ ছয়জন বলে জানায় নৌ-পুলিশ।
নদী থেকে উদ্ধারকৃত শিশু দু’টি তিন বছর বয়সের শিশু কন্যা লামিয়া ও ১০ বছর বয়সী শিশু ছেলে নুর আলম। তারা সম্পর্কে মামা ভাগ্নি। জিম্মি থেকে উদ্ধারকৃতরা হলেন, শিশু লামিয়ার মা শাহনাজ (২৪), তিনি ঢাকাস্থ সিএনজি চালক মোখলেছ এর স্ত্রী। বোন সালমা (১৪), শাহনাজের চাচা রুহুল আমিন(৪৫), চাচাতো ভাই রাসেলসহ একই পরিবারের ১১ সদস্য। তারা সবাই ভোলা সদর উপজেলার কাছিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিবাগত গভীর রাতে গৃহবধু শাহনাজের দাদা আবদুল খালেকের মৃত্যুর খবরে ঢাকাস্থ মেরুল বাড্ডা এলাকা থেকে পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে ফেরী যোগে ভোলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় আসেন। দূর্ভাগ্যবশত ঘাটে পৌছানোর পূর্বেই ফেরী চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে তারা।
এসময় তাদের একা পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা আল আমিন ছৈয়ালসহ ৭/৮জন তাদের ট্রলারে তুলে দেয়ার কথা বলে ঘাট অদূরে বালুর চর আশ্রম প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আটকে রাখে। এসময় মুক্তিপন হিসাবে ২০ হাজার টাকা চাঁদাদাবী করে তারা।
বাধ্য হয়ে বিক্যাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দিলেও রক্ষা মেলেনি। দাবীকৃত চাঁদার টাকা না পাওয়ায় তিন বছরের শিশু কন্যা লামিয়া ও ১০ বছরের শিশু নুর আলমকে মেঘনা নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আল আমিন ছৈয়াল। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিম্মিকৃতদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আগেই পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগী গৃহবধু শাহনাজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়ালের ভাতিজা দাবীকৃত ২০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে তার শিশু কন্যা ও শিশু ভাইকে মেঘনা নদীতে ফেলে দিয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্যে এমনটি ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিচার দাবী করেন তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত আল আমীন ছৈয়ালের বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নিজ ভাতিজা আল আমিন ছৈয়ালের বিরুদ্ধে যাত্রীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজী ও দুই শিশুকে পানিতে নিক্ষেপের অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল। এনিয়ে নৌ-পুলিশের সাথেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
প্রথমে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, সে এলাকায় নেই, তার ভাতিজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বলেন, অভিযুক্ত যেই হোক ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে মজু চৌধুরীরহাট নৌ-পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) অচিন্ত কুমার দে জানান, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিবারের ১১ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তাদের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভাতিজা। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ নেয়ার পর তাদের ভোলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
/এসএস