ফেলে রেখে যাওয়া মা এখন ম্যাজিস্ট্রেটের মা!

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২০

গর্ভধারিণী বৃদ্ধা মাকে করোনার ভয়ে সন্তানরা ফেলে রেখে গেছেন রাস্তায়। অথচ সন্তানরা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হবেন ভেবে পরিচয় প্রকাশ করছেন না মা।

এমতঅবস্থায় পরিচয়হীন ওই মাকে নিজের ‘মা’ বানিয়ে নিলেন সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।

জানা যায়, গত শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সাভারে এক বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে রেখে যায় তার সন্তানরা। অন্যদিকে, সমাজের কাছে হেয় হবেন এই ভয়ে সন্তানদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজী হচ্ছিলেন না গর্ভধারিণী ওই ‘মা’।

একদিকে সন্তানদের কাণ্ডজ্ঞানহীন নির্দয় আচরণ, অন্যদিকে মায়ের অপার মায়ায় সন্তানদের জন্য আগলে রাখা ভালোবাসা। এমতঅবস্থায় পরিচয় গোপনা রাখা ওই অসহায় বৃদ্ধাকে ‘মা’ সম্মোধন করে তার সব দায়িত্ব নিয়েছেন সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ গত শনিবার রাতে উপজেলার হেমায়েতপুর জয়নাবাড়ি এলাকা থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। এর আগে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন।

পরে বিশেষ ব্যবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে ভর্তি করা হয় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সাভার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে‌ ‘ম্যাজিস্ট্রেটের মা’ পরিচয়েই তার সেবা শুশ্রুষা করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

স্থানীয়রা জানান, রাতে ওই বৃদ্ধাকে দেখেই তাদের সন্দেহ হয়। কেউ তার কাছে ফিরছিলেন না। মনে হচ্ছিল, তিনি না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

এলাকাবাসী বলেছেন, স্বভাবতই ওই বৃদ্ধাকে তার সন্তানরা ফেলে রেখে পালিয়েছে। এলাকাটি করোনা আক্রান্ত। তার ওপর ঝামেলা হওয়ার ভয়ে ওই বৃদ্ধা কার বাসায় ছিলেন সেটাও ভয়ে কেউ বলছেন না।

জানতে চাইলে সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, প্রকৃতপক্ষে অসহায় ওই বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত কি- না, তা পরীক্ষার জন্য (রোববার) তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হবে। আর রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তিনি আমার ব্যবস্থাপনাতেই থাকবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার যা যা করা দরকার এই মায়ের জন্য সবকিছুই আমি করব।’

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা জানান, ‘ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে কেমন সন্তান! সন্তান নামের কলঙ্ক। আমরা এই মায়ের পরীক্ষা করাব। মায়ের স্বাস্থ্য সেবায় সর্বোচ্চ সেবা আমরা নিশ্চিত করব।’

‘তিনি আমারও মা। এই মায়ের সকল দায়িত্ব এখন আমাদের। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী আজ থেকে এই নারীর ‘ছেলে-মেয়ে’ বলেও উল্লেখ্য করেন ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।

/এসএস

মন্তব্য করুন