
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে বাক্ষ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বাংলাদেশের প্রখ্যাত ওয়ায়েজ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় ব্যপক লোকসমাগ ঠেকাতে না পারায় সরাইল থানার ওসি মো. সাহাদাত হোসেন টিটুকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে পুলিশ সদরদফতরের এক আদেশে তাকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সদরদফতর সূত্র জানায়, শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ বাসভবনে মাওলানা আনসারীর মৃত্যুর পরই এমন লোক সমাগমের বিষয়টি আঁচ করা যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির এমন আশঙ্কা করলেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরাইলের ওসিকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদারাসা প্রাঙ্গণে আল্লামা জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মানুষের ব্যপক উপস্থিতিতে মাদরাসা প্রাঙ্গণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশেও হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শরিক হন।
একদিকে বিশ্বরোড মোড় হয়ে সরাইলের মোড় পর্যন্ত অন্যদিকে আশুগঞ্জে কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে লোকজন। এছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদেও মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট খবর:
বিদায় আনসারী: সব বাধা উপেক্ষা করে জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি
সরাইল থানার ওসি মো. শাহাদাত হোসেন টিটু স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, মাওলানা আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকা থেকে লোকজন এসেছে। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি যে এত লোক হবে। লোকজন আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিল না।
তবে ওইসময় উপস্থিত লোকজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজায় শরিক হয়েছেন বলেও ওসি দাবি করেন।
এদিকে এই ঘটনায় সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষকে ১৪ দিন ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। শনিবার রাতে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মো. মুসা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপজেলার বেড়তলা গ্রাম, সীতাহরণ, বলিবাড়ি, শান্তিনগর ও বগইর গ্রামে আমরা মাইকিং করে বলে দিয়েছি কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়। আগামী ১৪-১৫ দিন তারা যেন এই কোয়ারেন্টিন মেনে চলে।
তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে যুবসমাজের ব্যক্তিদের দিয়ে আমরা কমিটি গঠন করে দিচ্ছি। তারা যেন নিত্যপ্রয়াজনীয় পণ্যগুলো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। তাদের সুরক্ষার জন্য একান্তই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বের না হয়। আমরা হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সবাইকে বলে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধায় বি-বাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী তিনি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়ে ও দেশে বিদেশে লাখো ভক্ত-শ্রোতা, অনুগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর ছিলেন।
মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দেশ বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় আমেরিকায় ছিলেন। তার বেশ কয়েকবার অপারেশন এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
/এসএস

