চাল চোর ও রক্ষাকর্তাদের দল থেকে বহিস্কার করতে হবে: আওয়ামী লীগ নেতা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ৯:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২০

মহামারী করোনাভাইরাসের এই করুণ মূহুর্তেও যারা চাল চুরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বগুড়ার স্থানীয় ঠিকাদার ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক আব্দুল মান্নান।

স্থানীয় এক সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি দেশব্যাপী চাল চুরির ঘটনায় এ মন্তব্য করেছেন। আব্দুল মান্নান বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ঠিকাদার ব্যবসায়ী। স্থানীয়ভাবে সামাজিক সেবায় তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।

চাল চুরির ব্যপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আপনি যদি নিমগাছ লাগান সেখান থেকে কিন্তু আম পাওয়া যাবে না। আপনি গাছটা তো আগেই লাগাচ্ছেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, সারাদেশে আমাদের দলের কমিটি করা নিয়ে এমন একটা ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলার মতো না। আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় বসে সেন্ট্রাল নেতাদের বললেন আপনারা গিয়ে ভালোমতো দেখে শুনে কমিটি করে দিবেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা যে তৃণমূলে আসেন।

উনারা এখানে এসে পিকনিক করেন। ফাইভস্টার হোটেলে বসেন, তিন বেলা ভালো মতো খান এবং তারা বুঝেন না এই তিনবেলা খেতে দুই লক্ষ টাকা বিল হলো এটা আমার জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ সেক্রেটারী কোথায় পাবে? তাকে চাঁদা তুলতে হবে। চোর আপনি সৃষ্টি করেছেন; তো চোর দূর করতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগ একটা গণমানুষের দল। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রাচীণ একটা দল। জাতির পিতার একটা মুজিব কোট পড়লে চিনা যায় যে লোকটা আওয়ামী লীগ করে। সেই দলের সেট্রাল কমিটির নেতাদের চরিত্র এমন নিকৃষ্ট হতে পারে হতে পারে, এরা ‍কৃষকের সন্তান হয়ে সেন্ট্রালে গিয়ে রাজনীতি করে ইংল্যান্ডে বাড়ি করে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অন্য দলের লোকদের দোষ দিয়ে কী লাভ হবে। আমি তো চোর পালতেছি। চোর ডাকাত দিয়ে আমার দল ভর্তি। কিছুদিন আগে বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো। সেখানে ৪০/৪৫ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এই টাকাটা কোথা থেকে এসেছে? নিশ্চয়ই খারাপ লোকদের থেকে টাকা নিতে হয়েছে। আপনি খারাপ লোকদের থেকে টাকা নিয়ে দল করবেন আর দল যখন ক্ষমতায় থাকবে তখন তারা তো সুযোগ নিবেই।

তিনি বলেন, এই চোরেরা আমাদের সৃ্ষ্টি। আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। আজকে এরা আমাদের আঘাত করতেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের যেমন দল নেই, এই চোরদেরও কোনো দল নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। বিভিন্ন দেশে টাকার ব্লাংক চেক দিয়ে রাখছে, যার যা লাগবে তুলে নেও। আর আমাদের দেশে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা চাল চুরি করছে।

আব্দুল মান্নান আক্ষেপ করে বলেন, আজকে আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিদারুণ কষ্টে আছেন। কিন্তু তিনি কাউকে কষ্টটা প্রকাশ করতে পারছেন না। আজকে তাকে এই জিনিসটা দেখতে হচ্ছে যে, চাল চোরদের পুষতে হয়েছে। তার দলের লোক চাল চোর।

একজন মানুষ কী করবেন বলেন তো। তিনি দিন নাই রাত নাই সব জায়গায় হাত দিচ্ছেন। এই যে যতো চেষ্টা হচ্ছে। এমন কোনো সেক্টর নাই যেখানে তিনি হাত দেন নাই। কিন্তু তারপর ও চোরদের থামাতে পেরেছেন? পারনেনি। কারণ হলো স্কুল খোলার সময় ক্লাসে যদি খারাপ ছাত্র দিয়ে ভর্তি করে রাখেন তাহলে কিন্তু পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল হবে।

আব্দুল মান্নান চাল চোরদের ব্যপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়ন চেয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একমাত্র নেত্রী যিনি যেটা বলেন সেটা করেন। আপনি কিন্তু নির্দেশনা দিয়েছেন চাল চোরদের ক্ষমা নাই। এটার আমরা দৃষ্টান্ত দেখতে চাই। হবে হচ্ছে, মামলা চলছে এরকম যেন না হয়।

আব্দুল মান্নান বলেন, প্রথমে চাল চোরদের দল থেকে বহিস্কার করতে হবে, তাদের রক্ষাকারীদের বের করতে হবে, তাদের সাহায্যকারীদের বহিস্কার করতে হবে। আপনিইতো বলেছেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। সুতরাং আমাদের এই আওয়ামী লীগে চোর-ডাকাতদের দরকার নাই।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিপর্যয় মোকাবেলায় সংকটে পড়া সাধারণ মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা করে আসছেন বগুড়ার করোনাযোদ্ধা আব্দুল মান্নান।

ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখ থেকে তিনি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। আব্দুল মানান জানান, তিনি নিজের উদ্যোগে একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা করেছেন। এবং তালিকা অনুযায়ী মানুষকে সহযোগিতা করছেন।

তিনি বলেন, আমি কাজ শুরু করেছি সেই ফেব্রুয়ারি থেকে। বগুড়ায় আমিই প্রথম কাজ শুরু করি। গণমাধ্যমে এর ভয়াবহতার কথা জেনে ৮ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

এরপর আস্তে আস্তে এর ভয়াল থাবা আমাদের দেশেও এলো। আমাদের খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকে সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছে। অনেকে চাল-ডাল দিচ্ছে। অনেকেই যে ৩কেজি ৫কেজি চাল দিচ্ছে। সামান্য কিছু বাজার দিচ্ছি। ওরা কিন্তু দুদিনেই খেয়ে ফেলছে। আর কিন্তু কেউ সাহায্য দিচ্ছে না।

এই অবস্থায় মধ্যবিত্ত বা কোনো মানুষের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব না। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে করতে হবে। সরকারও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে পূর্ণতা পাচ্ছে না। যদি সঠিক পরিকল্পনা করে আগানো যায়, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করা হয় তাহলে ভালো হতো। আমার তো মনে হয়, সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তার ৮০ পার্সেন্ট যথাযথ ব্যবহার হলে নিশ্চিন্ত থাকা যেতো।

আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসেছি। আমরা ক্ষুধার জ্বালা বুঝি। আমাদের বগুড়া পৌরসভার বিসিকের অপজিটে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবার আছে যারা রিকশা চালায়, ভ্যান চালায়। এদের কোনো কাজ নেই। আমি গতকালকে সেখানে একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওখানে ১০/১৫ জন যুবক আছে। তাদের অর্থ নেই কিন্তু কাজ করে।

আমি তাদের কাজে লাগালাম। আজ (রোববার ১২ এপ্রিল) থেকে প্রতিদিন সন্ধার সময় ওখানে পাক হবে। রাতের বেলায় প্রত্যেকটা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। লিস্ট করেছি আমি কতজন মানুষ। সেই হিসেবে পরিমাণ মতো খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিদিন এটা করা হবে।

এতে করে ডাক্তাররা যেটা বলছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে- সেটা ফলপ্রসু হবে। তারা ভাববে আমাকে ঘরে থাকতে হবে। সময় মতো আমার খাবার ঘরে আসবে তাহলে বের হওয়ার তো দরকার নেই। এভাবে যত মানুষ সাহায্যে নামতেছে সবাই যদি ভাগ করে নেয় আমি এই এড়িয়ার বাইরে যাবো না, আমি এই এড়িয়ার বাইরে যাবো না তাহলে কিন্তু ঝামেলা হয় না।

তিনি আরো বলেন, অনেকে দশটা বারোটা ব্যাগ নিয়া সহযোগিতা করছে আর ছবি তুলছে। এতে সহযোগিতা হচ্ছে তারচে বেশি ঝামেলা হচ্ছে। হ্যাঁ ছবি তোলেন, আমিও তো ছবি তুলছি, আপনারা সাংবাদিকরা আমার ছবি তুলছেন। কিন্তু আমিই যদি মরে যাই এই ছবি দিয়ে কী হবে?

ভাবতে হবে আপনার ছবি তুলে কী লাভ হবে যদি আপনি না-ই বাঁচেন। আপনার জীবনই বাঁচলো না,আপনার ছবি বেঁচে থেকে কোনো লাভ নাই। আমরা এখন যে সময়টা এখন পার করছি সেটা কিন্তু তেমন কোনো দূর্বিষহ না। এই সমস্যাটা ফেস করতে হবে আগামী ছয় মাস। কন্টিনিউ এই প্রবলেমটা থাকবে।

আপনি আজকে ৫০/১০০/২০০/১০০০ মানুষকে দান করলেন- কালকে দিতে পারলেন না, এতে কিন্তু সমস্যা শেষ হবে না। এই দানের কোনা দাম থাকলো না। একজনকে একবেলা পেট ভরে খাওয়ালেন এতে সমস্যা শেষ হলো না। একটা মানুষের ৩০ দিনে ৯০ বার ক্ষুধা লাগে। ৩০ দিনে ৯০ বার ক্ষুধা নিবারণ করা লাগে।

আব্দুল মান্নান বলেন, একদিনের ক্ষুধা নিবারণ করে কিন্তু সমাজ থেকে ক্ষুধা দূর করা সম্ভব না। এটাকে একটা পরিকল্পনার মধ্যে আনতে হবে। এটা রাষ্ট্র পারে। আমি তো মনে করি, প্রধানমন্ত্রী যে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তার ৮০পার্সেন্ট যদি কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে অন্তত বাংলাদেশে কোনো মানুষ বলতে পারতো না আমি ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে গেলাম। কিংবা কেউ ক্ষুধার জ্বালায় না খেয়ে মারা যাবে না।

আব্দুল মান্নানের পূর্ণাঙ্গ ভিডিও সাক্ষাতকারটি গতকাল রোববার Pundro TV নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হয়। পূর্ণাঙ্গ ভিডিও বক্তব্য শুনতে লিংকে ক্লিক করুন।

/এসএস

মন্তব্য করুন