

নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভোটের মাধ্যমে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন সে ব্যাপারে কোন বক্তব্য নাই। বক্তব্য হলো, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থান ও তাঁর দল বিজেপির ভূমিকা নিয়ে।
পৃথিবীতে ধর্ম আশ্রিত শক্তি সুসভ্য হয়। আদর্শবাদী হয়।কোন ধর্মই কিন্তু সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ করার শিক্ষা দেয়না। এটাই তো এতদিন জানতাম।
বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টি সে দেশের হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপে আজ সভ্যতা বিলীন হতে চলেছে। ভারত একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
শত শত ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও উপজাতি নিয়ে গঠিত অল ইন্ডিয়া। সেখানে বিজেপি শুধুমাত্র মুসলমানদেরকে টার্গেট করে বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে হিংস্রতার চাষ হচ্ছে সরকারের আস্তিনে ঢুকে। একতরফা প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
গুজরাট মুসলমান অধ্যুষিত প্রদেশ। এখানে নরেন্দ্র মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন ইতিহাসের বর্বরতম দাঙ্গা হয়েছে তার নেতৃত্বে। শত শত মুসলমানকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে উগ্র হিন্দুরা। প্রশাসন খুনীদের তৎপরতা থামাতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং খুনীদের পক্ষাবলম্বন করেছে।
হিন্দু সাম্প্রদায়িক উগ্ররা তখনকার কংগ্রেসের রানিং এক এমপি ও তার পরিবারকে আক্রমন করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অথচ অসংখ্যবার পুলিশের উর্ধ্বতন মহলের নিকট ফোন করে তাদেরকে বাঁচানোর আকুতি করেছিলেন। পুলিশ এগিয়ে আসেনি বাঁচাতে। তাঁর পরিবারের এক গর্ভবতী নারী ও গর্ভের সন্তানকে কুপিয়ে মেরেছে। কতককে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। এসব ঘটনা তখন পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। এসব কান্ডে জড়িত থাকার ফলে উগ্র হিন্দুদের নিকট মোদীর জনপ্রিয়তা বরং আরো বেড়েছে। ফলে ভারতের একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছে।
সম্প্রতি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে দিল্লীতে। অন্ততঃ পনের শত বার দিল্লী পুলিশকে কল করা সত্ত্বেও তারা আসেনি। এ সুযোগে মানুষগুলোকে হত্যা করেছে নৃশংসভাবে। মসজিদ , বাড়ী ও ব্যবসায়িক স্থাপনা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। এ হলো তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক সরকারের নীতি।
মুসলমানদের উপর আগ্রাসী ভূমিকার কারণে আজ ভারতের প্রতিটি মুসলমান নিরাপত্তাহীন। কারো জান ও মালের নিরাপত্তা নাই।
“ভারত হিন্দুদের, এখানে মুসলমানরা থাকতে পারবেনা।” এমন সাম্প্রদায়িক নীতিতে চলছে আজকের ভারত। ভারতের গনতান্ত্রিক ঐতিহ্য ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। কট্টর মুসলিম বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার ফলে তারা আইন করে সেদেশ থেকে মুসলমানদের তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। এটা চুড়ান্ত মাত্রার অসভ্যতা হলেও বিশ্ববিবেক এখানে নির্বিকার।
চলতি বিশ্ব একটি গ্রামের মতো। সব জায়গার সংবাদ সবাই জানে, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অথচ ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে হিন্দু জঙ্গীরা মসজিদ ভাঙ্গে, মিনার ভাঙ্গে, মাইক ভাঙ্গে। মানুষকে পুড়িয়ে ছাই করছে, কুপিয়ে অথবা গুলী করে মেরে লাশ ডোবায় ফেলছে। তাও আবার রাজধানী খোদ দিল্লীতে।
আফসোস ওদের জন্য এ দিল্লী কারা তৈরী করেছে? উত্তরঃ মুসলমানরা। দিল্লীর ঐতিহ্য বলতে যা আছে তা তো সব মুসলমানদের কল্যানে, অথচ সেখানেই মুসলিম নিধনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে অসুর গোষ্ঠী।
ইন্ডিয়ার ১১ বছরের একটি বালকের এ উক্তিটি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হয়েছে। “তাজমহল ও লালকেল্লা না থাকলে ভারত বিশ্বকে শুধু গরু ও গোবর দেখাতো?”
ভারতে চলছে গরুকেন্দ্রিক শাসন। গরুর পেশাব তারা শরবতের মতো ঢকঢক করে গিলে খাচ্ছে। আর গরুর গোবরের প্রসাধনী গায়ে মাখছে। গরুরা ওখানে নবাবজাদা-নবাবজাদী।
নরেন্দ্র মোদী বরাবরের উগ্র। প্রমাণিত খুনী। চা বিক্রেতা থেকে আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কমপ্লিট অশিক্ষিত। অশিক্ষিতরা যে ডেঞ্জারাস হয় তার বাস্তব নমুনা নরেন্দ্র মোদী। তাঁর আমলে মুসলমানরা দুর্দশায় আছে, এটা সবাই জানেন। জানেনা শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
মোদিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সারা দেশ কাঁপছে অথচ সরকার গোঁ ধরে বসে আছে মুজিব শতবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ানোর জন্য। করোনা ভাইরাসের কারণে বেলজিয়াম মোদির সফর বাতিল করেছে অথচ বাঙ্গালরা সাদরে ডাকছে।
বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ সরকার। এটা এখন দেশের এক নম্বর প্রায়োরিটি। সব বাদ। তোমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করো। দেশে এখন ভারতের বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল চলছে দিল্লীতে মুসলমান হত্যা ও মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে। মোদিকে আসতে দেয়া হবেনা। এটাই এদেশের মুসলমানদের দাবী। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে। সরকার আগ্রাসী হলে রক্ত ঝরবে, রক্ত।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিলের ছবি দেখে যে কারোর চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। শুক্রবারও কর্মসূচি আছে। সেদিন নেতৃত্ব দিবেন শায়খে চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম হাফিজাহুল্লাহ।
ইসলামী দলগুলোও সোচ্চার মোদির আগমন ঠেকাতে। কাল শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভের জনপদ হচ্ছে। ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম একটি বড়সড় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।
দ্বীন পাগল মুসলমানরা মোদির সফর বাতিলের জন্য আন্দোলন করছে কিন্তু আজতক তারা সংঘবদ্ধভাবে কোন হিন্দুপাড়া বা মন্দির অভিমুখে রওয়ানা দেয় নাই। এটাই হচ্ছে মুসলমানদের আসল পরিচয়। “তোমরা ওখানে মুসলমানদেরকে মারছো, আমরা এখানে হিন্দুদেরকে মারবো”- এমন নীতি ইনসাফ হলেও আমরা মুসলমানরা ওদের মত অসভ্য জানোয়ার না। এখানের একজন হিন্দুও নিরাপত্তাহীনতায় নেই। সবাই হাসিখুশী, কিন্তু ওখানকার মুসলমানরা বেজার। তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, বাড়ীঘর ধ্বংস অথবা দখল করা হচ্ছে। মেয়েদের ইজ্জত লুটছে। এটাই বিজেপিওয়ালাদের বর্তমান কর্মসূচি।
বাংলাদেশের মুসলমানরা বিশ্ব দরবারে সম্মানিত, কারণ দাঙ্গায় শরিক হয়না। বাংলাদেশের মুসলমানরা নেতিবাচক নিউজের হেডলাইন হয়না। আমরা রাসুল সঃ এর আদর্শে চলি। অন্য মানুষকে পীড়া দেয়ার শিক্ষা ইসলামে নাই।
ভারতকে ছয়শত বৎসর মুসলমানরা শৌর্যবীর্যের সাথে শাসন করেছে। ভারতের সব বড় স্থাপনা মুসলমানদের হাতে তৈরী। অথচ মুসলমানরা সেখানে এখন অচ্ছুত জাতিতে পরিণত হয়েছে।
এসব কিন্তু বর্তমান সরকার গায়ে মাখেনা। ক্ষমতায় থাকতে হলে তাঁদের দরকার ভারতের সমর্থন। মোদির বিরোধীতাকারী কয়েকজনকে সরকার ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে।
আচ্ছা, মোদি কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী? তার বিরোধীতা করা যাবেনা কেন?
লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক।
[পাবলিক ভয়েসের মতামত বিভাগে প্রকাশিত যে কোনো লেখার দায় লেখকের নিজের। পাবলিক ভয়েসের সম্পাদনা পরিষদ এ লেখার দায় গ্রহণ করে না। তাই এই লেখার জন্য পাবলিক ভয়েসের সম্পাদনা পরিষদকে দায়ী করবেন না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে পাবলিক ভয়েসের সম্পাদনা পরিষদের নীতির সাথে অসামঞ্জস্য লেখাও এখানে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কেবল ধর্ম এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো লেখা প্রকাশ করা হয় না। চাইলে আপনিও তথ্য বা যুক্তিসমৃদ্ধ লেখা এখানে পাঠাতে পারেন।]