

ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট টিম। আজ রোববার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ভারত। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২৩ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ যুব দল।
অধিনায়ক আকবর আলীর দায়িত্বশীল ব্যাটে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
এর আগে উদ্বোধনীতে পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ৮.৫ ওভারে ৫০ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান তানজিদ হাসান। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ২৫ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান করে ফেরেন তরুণ এ ওপেনার।
উড়ন্ত সূচনার পরও সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে এক ঘরে হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুর বল খেলতেই পারছিলেন না বাংলাদেশি যুবারা। নিজের করা প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে বাংলাদেশের ৩ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান ১৯ বছর বয়সী ভারতীয় এ লেগ স্পিনার। ১৩তম ওভারে রবি বিষ্ণুর বলে আউট হয়ে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়।
দলীয় ৬৫ রানে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফেরেন শাহাদাত হোসেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আকবর আলীকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি শামিম হোসেনও। তিনি ২০ রানের জুটি গড়ে আউট হন।এরপর আকবর আলীর সঙ্গে ১৭ রানের জুটি গড়তেই আউট হয়ে যান অভিষেক দাস।
২৩ ওভারে দলীয় ১০২ রানে ৭ উইকেট পতনের পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরা ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ফের ব্যাটিংয়ে নামেন। সপ্তম উইকেটে ইমনকে সঙ্গে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন আকবর আলী। তাদের এই জুটিতেই জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ।
শেষ দিকে জয়ের জন্য ১০৯ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৫ রান। খেলার এমন অবস্থায় সজোরে ব্যাট চালাতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ইমন। তার আগে ৭৯ বলে ৭টি চারের সাহায্যে করেন ৪৭ রান। ১৪৩ রানে ৭ উইকেট পতনের পর পরপর দুই ওভার মেইডেন দেন আকবর আলী ও রাকিবুল হাসান।
রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রমে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়ে যায় ভারতীয় যুব দল। দলীয় ৯ রানে ভারতীয় ওপেনার দিব্বাংশ সাক্সেনাকে সাজঘরে ফেরান অভিষেক দাস।
এরপর তিনে ব্যাটিংয়ে নামা তিলক ভার্মাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন যশস্বী জসওয়াল। এই জুটিই বেশি ভুগিয়েছে বাংলাদেশি যুবাদের। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৪ রানের জুটি গড়েন জসওয়াল ও ভার্মা। তিলক ভার্মাকে আউট করে জুটির বিচ্ছেদ ঘটান তানজিম হাসান সাকিব। দলীয় ১০৩ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তিলক ভার্মা।
তার আগে ৬৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৩৮ রান করেন তিনি।এরপর নিয়মিত বিরতিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফেরান বাংলাদেশি যুবারা। ভারতীয় অধিনায়ক প্রিয়াম গার্গকে দ্রুত সাজঘরে ফেরান রাকিবুল হাসান।
ভারতীয় শিবিরে এরপর জোড়া আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের শুরু থেকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া ভারতীয় ওপেনার জসওয়ালকে সাজঘরে ফেরান শরিফুল। তার বলে তানজিম হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জসওয়াল। তার আগে ১২১ বলে ৮টি চার ও এক ছক্কায় ৮৮ রান করেন ভারতীয় এ ওপেনার।
ব্যাটিংয়ে নেমে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরিফুলের দ্বিতীয় শিকার সিদ্ধেশ বীর। তিনি এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন শরিফুল। কিন্তু পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেটে সাফল্য না পাওয়ায় হ্যাটট্রিক হয়নি তার।এরপর আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ৩৮ বলে ২২ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ধ্রুব জুরেল। ৬ বলে ২ রান করার সুযোগ পান রবি বিষ্ণু। ৭ বলে ৩ রান করে অভিষেক দাসের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন অথর্ব আঙ্কোলেকার।
কার্তিক ত্যাগীকে রানের খাতা খুলারই সুযোগ দেননি বাংলাদেশ দলের তরুণ পেসার অভিষেক দাস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সুশান্ত মিশ্রকে আউট করে ভারতকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দেন তানজিম হাসান সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত: ৪৭.২ ওভারে ১৭৭/১০ (জসওয়াল ৮৮, তিলক ভার্মা ৩৮, ধ্রুব জুরেল ২২; অভিষেক ৩/৪০, তানজিদ হাসান সাকিব ২/২৮, শরিফুল হাসান ২/৩১)। বাংলাদেশ: //ওভারে ///(ইমন ৪৭, আকবর//, তানজিদ ১৭)। ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।