ইরানের হামলায় কোন মার্কিন সেনা নিহত হয়নি : দাবি ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২০

গতকাল ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি সেনা নিহত হয়নি। ইরানের হামলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ দাবি করেন। এর আগে ওই হামলায় ৮০ জন নিহত হয় বলে দাবি করে ইরান। তারা আরও বলেন, গত সপ্তাহে শীর্ষ ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে অন্যায়ভাবে হত্যার প্রতিবাদে তারা ওই হামলা চালিয়েছে।

অপরদিকে আলোচিত এই হামলার পর ট্রাম্প স্থানীয় সময় বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান গুটিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরান সম্ভবত গুটিয়ে গেছে। অবশ্য এটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য ভালো এবং এটি বিশ্বের জন্য খুব ভালো কিছু। ট্রাম্প দাবি করেন, ২০১৩ সালে অকার্যকর পারমাণবিক চুক্তি সইয়ের পর ইরানের যুদ্ধবিগ্রহ মনোভাব বেড়েছিল। ২০১৫ সালে চুক্তি সই হয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের হামলায় কোনো মার্কিন অথবা ইরাকির প্রাণহানি হয়নি কিন্তু তাতের ঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই ইরানের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ইরানের আচরণ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল-গ্যাসের তাদের প্রয়োজন নেই। তারা এখনই তেল-গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষে আছে। ইরাকে মার্কিন দুটি ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন হেলিকপ্টার ও সামরিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ তথ্যের উৎস সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি তারা। আন্তর্জাতিক কোন গণমাধ্যমও ইরানের এ দাবির পক্ষে কোন সংবাদ পরিবেশন করেনি। এই হামলার মাধ্যমে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার জবাব দেওয়া হয়েছে এবং তারা আর যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে ইরাকের ওই দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে এক ডজনেরও বেশি ‘ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ ছুড়েছে ইরান।

প্রসঙ্গত : গত শুক্রবার ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। সোলাইমানির বাহিনী মার্কিনদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি দেশটি। বরং বিশ্ব গণমাধ্যম এটিকে একটি অন্যায় হামলা ও অশান্তির দিকে ধাবিত হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় ইরান চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো ইরান।

আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানি, ডেনমার্ক ও নরওয়ে জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরানি টেলিভিশন জানায়, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ছিল ‘সবচেয়ে দুর্বল’। আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিভিশনটি জানায়, ইরানের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে আরও ১০০টি সম্ভাব্য স্থান রয়েছে।

ইরান টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তাঁর (কাশেম সোলাইমানি) হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এখন তিনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।’ গত শুক্রবার যে সময়ে সোলাইমানির ওপর মার্কিন ড্রোন হামলা চালানো হয়, ঠিক একই সময়ে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। নিজের শহর কেরমানে শহীদদের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইরানের জাতীয় এই বীরকে সমাহিত করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যান বলেছেন, ইরাকে যে দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে আল-আসাদ ও ইরবিল। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা, অংশীদার ও সহযোগীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইরাকে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছে। জার্মানি জানিয়েছে, তাদের ১১৫ জনের মতো সেনা ইরবিলে রয়েছে। তারা সবাই ভালো আছে। ডেনমার্ক জানিয়েছে, ইরাকে তাদের ১৩০ জনের মতো সেনা রয়েছে। আল-আসাদ ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনা নিহত হয়নি, আহতও হয়নি। নরওয়ে জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনাও হতাহত হয়নি। আল–আসাদ ঘাঁটিতে তাদের ৭০ জনের মতো সেনা রয়েছে। এর আগে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেন, যেকোনো উপায়ে বা আকারে ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে বলে তাঁদের ধারণা ছিল।

হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ইরান আর যুদ্ধ বা উত্তেজনা চায় না বলে টুইটে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর যে ঘাঁটি থেকে কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা করা হয়েছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে আত্মরক্ষায় ইরান সেখানে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে এর (ঘটনার) সমাপ্তি টেনেছে। আমরা যুদ্ধ বা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না, তবে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করব।’

মন্তব্য করুন