ফারুকীর ছবিতে ইসলামফোবিয়ার অভিযোগ; ফেসবুকে তোলপাড়

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: হলি আর্টিজেনের ঘটনা নিয়ে নির্মিত খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর ছবিতে ‘ইসলামফোবিয়া’ প্রকাশের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।

২০১৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দেওয়া হলি আর্টিজেন বেকারিতে হামলার সেই ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী যাদেরকে মূল চরিত্রে নিয়েছেন তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ এবং বাহ্যিক অবয়বে ইসলামীকরণের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ অনেকের। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা জাহিদ হাসান এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা দুজনকেই ইসলামের আবরণে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। জাহিদ হাসানকে দেখা গেছে দাঁড়িতে সজ্জিত এবং তিশা রয়েছেন হিজাব আবৃত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন অনেকেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করে পোস্ট দেয়া কিছু স্ক্রীনশট

তাদের দাবি, হলি আর্টিজেনে আক্রমন করা সন্ত্রাসীরা কেহই ইসলামী পোশাকে ছিল না বা তাদের চেহারায় ইসলামীকরণের কিছু দেখা যায়নি। এমনকি তাদের পড়াশোনাও কোনো ইসলামী প্রতিষ্ঠানে নয়। অথচ সেই ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রের সবাইকে ইসলামী বেশ-ভূষায় সজ্জিতকরণ প্রকারন্তরে ইসলামের অপমান। যা ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর। যেটা মোটেও কাম্য নয় বলে মতামত তাদের।

তবে ছবিতে মূলত কী দেখানো হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। না দেখেই এ বিষয়ে মন্তব্য করার বিষয়টিও সমালোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছে, ছবিতে কী দেখানো হয়েছে, জাহিদ হাসান এবং তিশার মূল চরিত্র কী তা না জেনেই এভাবে সমালোচনা করা উচিৎ নয়।

ফারুকীর এই ছবিতে জাহিদ হাসান ও তিশা ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন ফিলিস্তিনের অভিনেতা ইয়াদ হুরানি, মামুনুর রশীদ ও কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

এ বিষয়ে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজেন বেকারীতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে; যা বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাড়া ফেলেছিল। তখনকার মিডিয়ায় হামলাকারী ৬ জনের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছিল। তাদের পরিচয় যথাক্রমে,

নিব্রাস ইসলাম : হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া জঙ্গিদের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন নিব্রাস ইসলাম। তার বাবা একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ঢাকার ওয়ারী ও উত্তরায় আছে তাদের নিজস্ব বাড়ি। নিব্রাসের তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপসচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন বিজ্ঞানী। নিব্রাস ইসলাম পড়াশোনা করেছে ঢাকার উচ্চবিত্তদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুলে। সেখান থেকে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল শেষ করার পর পড়াশোনা করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ও খরচের শীর্ষে থাকা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মোনাশ ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসে।

মীর সামি মোবাশ্বির : বর্বর এ হামলায় অংশগ্রহণকারী মীর সামি মোবাশ্বির স্কলাসটিকার এ-লেভেলের ছাত্র। মোবাশ্বিরের বয়স ১৭ বছর। মোবাশ্বিরের বাবা অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা সরকারি কলেজের শিক্ষক। বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২৯ ফেব্রুয়ারি গুলশান-২ আগোরা ডিপার্টমেন্টাল শপের সামনে থেকে নিখোঁজ হন মীর সামি মোবাশ্বির।

রোহান ইমতিয়াজ : রোহান ইমতিয়াজ স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ছাত্র। রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। রোহান ইমতিয়াজের মা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণিতের শিক্ষক।

রাইয়ান মিনহাজ : স্কুলজীবন কেটেছে খ্যাতনামা ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগা খান স্কুলে। সেখান থেকে ও-লেভেল পাসের পর পড়েছেন আরেক সুপ্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লে পেন-এ। এরপর মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান রাইয়ান। থাকতেন মালয়েশিয়ার পেতালিং জায়া নামক এলাকায়।

আন্দালিব আহমেদ : মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিরই আরেক ছাত্রকে শনাক্ত করা হয়েছে আন্দালিব আহমেদ হিসেবে। মোনাশে যাওয়ার আগে আন্দালিব পড়েছেন ঢাকার নামকরা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সানিডেলে। তিনিও ঢাকার অভিজাত এলাকার একজন বাসিন্দা। বাবা ব্যবসায়ী।

মন্তব্য করুন