শহীদ স্মৃতি কওমী মাদরাসার বার্ষিক প্রতিযোগিতায় স্বাধীনতার স্মৃতিচারণ

বকশীগঞ্জ, জামালপুর

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯

মো. ইসমাইল হোসাইন, বকশীগঞ্জ, জামালপুর: জামালপুরের বকশীগঞ্জে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিজড়িত কামালপুরে ‘দারুল উলুম উঠানোরপাড়া শহীদ স্মৃতি কওমী মাদরাসা’র বার্ষিক হামদ-নাত, ক্বেরাত ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা গতকাল বুধবার মাদরাসা অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

থানভী ছাত্র কাফেলা’র আয়োজনে দিনব্যাপী এ বার্ষিক প্রতিযোগিতা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এসময় ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় হিফযুল কোরআন বিভাগের শির্ক্ষী ছাড়াও হামদ-নাত ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এরপর দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত অতিথিদের বক্তব্য ও পুরস্কার বিতরণী সম্পন্ন হয়।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে এতে বক্তব্য প্রদান করেন, বিশিষ্ট কবি, ছড়াকার ও সাংবাদিক- পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর যুগ্ম সম্পাদক শাহনূর শাহীন, ইকরা নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড বাংলাদেশ এর পুস্তক সম্পাদক, প্রশিক্ষক ও পরিদর্শক বিশিষ্ট ছড়াকার মীম হুমায়ুন কবির, মেলান্দহ সরকারী কলেজের প্রভাষক মুস্তাফিজুর রহমান মাসুদ (৩৬তম বিসিএস) প্রমুখ।

এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণ করে শাহনূর শাহীন বলেন, মহান বিজয়ের মাসে মাদরাসায় এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদেরকে ইতিহাস চর্চা ‍উদ্বুদ্ধ করবে যা তাদের আত্মপ্রতয়ী হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

বিজয়ের মাসে বীর শহীদদের স্মরণে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়বস্তুর আলোচনা ও প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক স্বকীয়তা অর্জনে বদ্ধ পরিকর উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও নিজস্ব স্বকীয়তা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আর এ জন্য ইতিহাস চর্চা জরুরি। কেননা পূর্ব পুরুষের ইতিহাস থেকে নিজের স্বকীয়তা ও অস্তিত্বের প্রেরণা  পাওয়া যায়।

সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চার নিয়মিত আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ইতিহাসের পাশাপাশি সাহিত্য চর্চাও জরুরি। ইতিহাস চর্চায় যেমনি নিজেকে জানতে পারবে তেমনি সাহিত্য চর্চা তোমার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। তোমাদের সাহিত্য, তোমাদের লেখনী আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে’।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কামালপুর কমান্ডের বীরপ্রতিক সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল ও বীরপ্রতিক মিজানুর রহমান খান এর স্মৃতিও উল্লেখ্য করেন তিনি।

দারুল উলুম উঠানোরপাড়া শহীদ স্মৃতি কওমী মাদরাসার বার্ষিক হামদ-নাত, ক্বেরাত ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা

মহান মুক্তিযুদ্ধে আলেম-ওলামাদের ঐতিহাসিক অবদান তুলে ধরে শাহনূর শাহীন আরো বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কোনো ধর্মযুদ্ধ হয়নি। এটা ছিলো জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের যুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে এদেশের হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই জালিমের বিরুদ্ধে রণাঙ্গণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে পাশ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরীরর কমান্ডার মাওলানা শাসুল হুদার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এই মাওলানার হাতে বন্দি হওয়া শান্তি কমিটির স্থানীয় চেয়ারম্যান রাজাকার সন্তানকে তার গর্ভধারীণি মা নিজের হাতে ২৮টি গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। তিনি বলেন, এরকম জানা-অজানা হাজারো গল্পের নায়ক ছিলেন এদেশের আলেমা ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ।

মেলান্দহ সরকারী কলেজের প্রভাষক মুস্তাফিজুর রহমান মাসুদ তার বক্তব্যে বলেন, আলেমদের নিষ্কৃয়তার সুযোগে এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিকৃতি ঘটেছে। এদেশের নাটক সিনেমায় দাড়ি-টুপিওয়ালাদের সব সময় রাজাকার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিবাদে আমরা কিছুই করতে পারিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত শ্যামল ছায়া সিনেমার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, একমাত্র হুমায়ুন আহমেদ বাংলা চলচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ‍রুপায়ণে বিকৃতির আশ্রয় নেননি। তিনি। এদেশের আলেমদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে অন্তত নূন্যতম চেষ্টাটুকু হলেও করেছেন।

ইতিহাস বিকৃতিরোধে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের সোনালী ইতিহাস চর্চায় আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের সম্পর্কে আগে নিজেকে জানতে হবে। নইলে নিজের ওপর দেয়া কারো অপবাদের প্রতিবাদ করা যাবে না। এজন্য মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে।

ছড়াকার মীম হুমায়ুন কবীর বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আরো বেশি জরুরি। কেননা মাদরাসা শিক্ষার্থী তথা আলেমা-ওলামারাই এদেশে ইতিহাস বিকৃতির বিরুপ প্রতিকূলতার স্বীকার হয়েছে, হচ্ছে। এজন্য মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মন্ডল। দারুল উলুম উঠানোরপাড়া শহীদ স্মৃতি কওমী মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আশরাফুল ইসলাম এর দিকনির্দেশনা ও শিক্ষক মাওলানা আশরাফুল আলম এর পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ফখরুজ্জামান, বকশীগঞ্জ ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আমিনুল ইসলাম, বিশিষ্ট উপস্থাপক মহিব হাসান, সংগীত শিল্পী কলরব এর দাউদ আনাম, জোনায়েদ সানীম, শেখ সাঈদ  প্রমুখ।

আলোচনা পর্ব শেষে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন থানভী ছাত্র কাফেলার সদস্য শিক্ষার্থী রাকিব ও আবু ইউসুফ।

বক্তৃতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন জাকারিয়া আব্দুল্লাহ জুয়েল, আমির হামজা ও মাহমুদুল হাসান মাহদী। হামদ-নাত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার গ্রহণ করেন মেশকাত আহমেদ, সাব্বির আহমেদ ও জুবাইদুল করিম।

এছাড়া হিফজুল কোরআন ৩০ পারা গ্রুপ ১ম খোরশেদ আলম ২য় হাবিবুর রহমান ৩য় আঃ আজিজ। হিফজুল কোরআন ১০ পারা গ্রুপ ১ম মুস্তাকিম বিল্লাহ ২য় এহসানুল হক ৩য় স্থান অর্জন করেন মিলন আহমদ।

মন্তব্য করুন