

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম জনগোষ্টির মধ্যে ওয়াজ-মাহফিল করা বিভিন্ন পর্যায়ের বক্তাদের বাংলাদেশের স্বীকৃত আলেমদের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে মান যাচাই করে তারপর ওয়াজ করার অনুমতি দেওয়ার দাবি করেছেন বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক, সম্পাদক ও লেখক মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ।
তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত একটি লেখেন, ‘কওমী আর চরমোনাই তরীকায় এত মূর্খ বক্তা বেড়েছে, দীনের নিরলস কাফেলা এই দুই অঙ্গনকে কলুষিত করছে তারা। ভাইরাল টপিক আর আলতু ফালতু কথা বলে বয়ানের ময়দানটাকে বিশ্রী এক অবস্থায় পরিণত করে ফেলেছে। এদের নিয়ন্ত্রণ দরকার। প্রয়োজনে যাত্রাবাড়ি শায়খকে মুরব্বী রেখে মুফতী দিলাওয়ার হুসাইন, মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ ও মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরীদী কিংবা অন্য কোনো আলেমদের মাধ্যমে এসব বক্তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হোক! যেমন নেওয়া হয় খতীব কিংবা মাদরাসার শিক্ষকতার বেলায়। ইন্টারভিউতে যারা টিকবে তারাই বয়ান করবে, যারা টিকবে না তারা শিখবে। তাতে যদি আমিও বাদ পড়ি কোনো আপত্তি নাই।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করলে দেশের উত্তরবঙ্গে মাহফিলের সফরে থাকা এই গুনী আলেম পাবলিক ভয়েসকে বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ওয়াজ মাহফিল একটি বড় ভূমিকা রেখে থাকে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিটি অঞ্চলে যুব সমাজ ও বিভিন্ন মতের জনগোষ্ঠির দ্বারা আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল একটি মূখ্য ভূমিকা রেখে থাকে ইসলামের প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়াজের ময়দানে তরুণ ও অনেক বক্তাদের আগমন ঘটেছে যারা প্রতিনিয়ত ইসলামের আলোচনার চেয়ে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার মাধ্যমে ওয়াজ মাহফিল জমিয়ে রাখতে চান। যাতে করে এই মাহফিলে দীনের জ্ঞানার্জনের চেয়ে জনগণের বিনোদনের খোরাক বেশি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের মধ্য থেকে দীনের উপকারের চেয়ে চিত্তবিনোদনের স্বার্থে ওয়াজ-মাহফিল আয়োজনের প্রবণতা বেড়ে যাবে।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের স্বীকৃত ও মান্যবর আলেমদের এগিয়ে আসা উচিত এবং ওয়াজ-মাহফিলের এই জগতটিকে একটি নিয়ম-নীতির মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি প্রণয়নের ব্যাপারেও ভাবতে পারেন ওলামায়ে কেরাম। অন্তত সেটুকু না হলেও যারা ওয়াজ-মাহফিল করতে চায় তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের মান যাচাই করে তারপর ওয়াজ মাহফিলে বয়ান-বক্তৃতার অনুমতি দেওয়া উচিত। সাথে সাথে তাদেরকে কিছু নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করে দিতে হবে যার আওতায় তারা বয়ান করবেন। বিভিন্ন চটকদার আলোচনা বা কৌতুক করা, গান গওয়া ইত্যাদি থেকে তাদেরকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া সাধারণ জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভিন্ন মতভেদপূর্ণ ইসলামের হুকুম আহকাম বা মাসয়ালা-মাসায়েল বর্ণনা করার ক্ষেত্রেও বক্তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা স্বীকৃতভাবে মুফতী নন বা ফতোয়া দেওয়ার অধিকার রাখেন না তারা যেন কোথাও শরিয়তের মাসয়ালা মাসায়েল বর্ণনা করতে না পারেন সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সবার।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন বক্তাদের আলোচনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইউটিউবে এক ধরণের ব্যবসা চলে। বিভিন্নভাবে বক্তাদের চটকদার আলোচনাকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভাবে শিরোণাম বানিয়ে ব্যবসা চলে। যাতে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি বিভিন্নভাবে কলুষিত হয়ে পড়ছে। তাই এসব ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে জনসাধারণের মধ্যে ওয়াজ-মাহফিলের ব্যাপারে এক ধরণের বিতৃঞ্চ ভাব চলে আসবে যা শেষ পর্যন্ত ইসলামেরই ক্ষতি করবে।
আরও পড়ুন
ওয়াজ-মাহফিলে তামাশা, দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত