

হালিমা ইসলাম: মেয়েটির নাম সাইমা। এক রমজান মাসে পাওয়া হেদায়াত প্রাপ্ত মেয়ে। কতই না ভাগ্যবান সে। হেদায়াত পাওয়ার পর কত যে তওবা, পূর্ব জীবনের হালাল-হারাম মেনে না চলা মেয়েটি আজ অনুতপ্ত। প্রতিটি মুহূর্ত সে এমনভাবে কাটায় যেন, পরের মুহূর্তেই তার মৃত্যু চলে আসবে। আর সে মৃত্যুর জন্য পূর্ণ প্রস্তুত। কখনও আর এক মুহূর্তের গাফলতি তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। আহা! আল্লাহর রাস্তায় সময় ব্যয় করা কতইনা মধুর ও প্রশান্তিময়।
কিন্তু এই প্রশান্তির সময়ে ছোট ছোট বিষয় ছাড় দেয়াও গাফলতিপূর্ণ জীবনে পদার্পণ করার বিশাল ফাঁদ। প্রতিদিন সাইমা ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর কুরাআন তেলাওয়াত করত। শীতের দিন আজ একটু না হয় একবেলা কম পড়ি , ৪ বেলা তো পড়ছি।
যে মেয়ে নামাজের সেজদার পর সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল মোনাজাতে আল্লাহের কাছে কান্না করা, তার প্রশংসা করতে করতে চোখ ভিজে যাওয়ার যে অনুভুতি -মনে হয় যেন আল্লাহর অতি নিকটে আমি। কোন একদিন মোনাজাত না ধরেই উঠে পরল দুনিয়াবি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করতে।
পাঁচ ওয়াক্ত তো করিই, এক ওয়াক্ত না করলে কীইবা এমন হবে! তা ছাড়া আজ একটু গুরুত্ব পূর্ণ কাজও ছিল। এক বেলা মিস হল, এক বার দেওয়া ছাড়ের সুযোগেই থাকে শয়তান। আর প্রতিবার ওয়াস- ওয়াসা দেওয়া, কাল তো মোনাজাত করনি, এক বেলা কুরআন পড়া মিস দিয়েছে তাতে কি এমন ক্ষতি! যদি আরেক বেলা দাও অতো সমস্যা হবে না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা মনে করিয়ে দেয় সে।
এভাবে শয়তান সাইমার পেছনে লাগল। যখনই সে দ্বীনের আমলের বেপারে সামান্য ছাড় দিল। একটা সময় এটা সামান্য রইল না। কুরআন পরা ৫ ওয়াক্ত থেকে ১ বেলায় এসে পরল। মোনাজাত করার সেই মজা আর সে পাচ্ছে না। চাইলেও চোখে এক ফোঁটা অশ্রু আসে না। সাইমা বুঝতে পারছে না সে কিভাবে এমন হল।
হ্যাঁ, আসলেই শয়তানের ফাঁদ এতই সূক্ষ্ম যা সহজে বুঝা যায় না। শয়তান মানুষকে এমনভাবে আল্লাহর থেকে দূরে করে যে, সে একবারে দূর হওয়ার আগে টের পায় না, তার কাছে গুরুতর বিষয় হয়ে উঠে না ।
আমরা প্রত্যেকেই কখনো না কখনো সাইমার মতো অবস্থায় পরি। কেউ আবার দ্বীনের পথে ফিরে আসে প্রথমের মতো। আবার কেউ আজীবনের জন্য গোমরাহ হয়ে যায়। ‘No compromois‘ আল্লাহর বিষয়ে কখনও কমতি করা যাবে না, ছাড় দেওয়া যাবে না। এটা নিজের মনে গেঁথে নিতে হবে ।
আজ যদি শয়তানকে খুশি করতে কাজ করি, সে মাথায় উঠে নাচব। এর চেয়ে ভাল, যখনই মনে আসবে এখন না পরে করবো , তখনি সেই আমল তো করবই। আর মনে মনে ভাববো, শয়তান এখন কাঁদছে, কি মজা!
আমরা যদি প্রতিদিন এমন একটি নিয়ত করি আজ শয়তান কাঁদাবো। এমন দু’টি কাজ করব যাতে শয়তান অখুশি হয়। তাহলে আস্তে আস্তে শয়তানকে কাঁদানোর মজা এমনভাবে পাবো যে, শয়তান আমাকে গাফেল করা তো দূরে থাক ধোকাই দিতে আসবে না। সে পরাজয়ের করণ করবে। এই জন্য আমল বারিয়ে দিতে হবে। হে আমাদের রব! আমাদের পথ প্রদর্শনের পর অন্তরসমুহ বক্র করবে না। আমীন।
আই.এ/