

ইসমাঈল আযহার: পৃথিবীতে একমাত্র ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। হেমন্তকালের পর খুব দ্রুই যেন সারা বাংলায় শীত ছড়িয়ে পড়ে। অন্য পাঁচ ঋতুতে বাংলাদেশের গরিবদের বিভিন্ন কষ্ট থাকলেও শীতকালে তাতে নতুন মাত্র যোগ হয়।
শীতকালে নানান কষ্টের পাশাপাশি গরীব দুখিদের ঠাণ্ডার তীব্র কষ্ট হয়। তাদের উষ্ণবস্ত্রর অভাব হয়ে পড়ে। শুদু তাই নয় শীতের কবলে পড়ে অসহায় মানুষ মারাও যায়।
শীত এলে মধ্য ও উচ্চবিত্তরা একেক জন দু’তিন অথবা এরচে’ বেশি শীত কাপড়ও কিনে থাকেন অনেকে। কিন্তু গরীব-দুখিদের শীত নিবারনের জন্য ছেঁড়া-ফাঁড়া পুরোনো একটি কাপড়ও জোটে না। শীতের শুস্কতায় শিশুদের ঠোঁট মুখ ফেঁটে যায়। যেখানে শীতবস্ত্র নেই সেখানে ক্রিম তো আরও দূরের কথা।
আচ্ছা আমরা কি পারি না গরীবদের এই কষ্ট থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করতে! আমরা সচ্ছল পরিবারগুলো যদি একটু এগিয়ে আসি তাহলে গরীবদের এই কষ্ট লাঘব হবে। অনেক পরিবার বেঁচে যাবে শীতের প্রকোপ থেকে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকার যুবকরা মিলে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। চাঁদা তুলে বাস্তিবাসীদের জন্য ব্যবস্থা করতে পারি শীতকাপড়ের। মহল্লার মহাজনরাও গরীবের জন্য শীতকাপড় ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে পারি। তাদের শীতের বাড়তি কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বোপরি আমরা সকলশ্রেণির মানুষ যদি এ বিষয়ে এগিয়ে আসি তাহলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে পারে বহু সংখ্যক গরীব, দুখি ও নিঃস্ব মানুষ। তারা তো আমাদেরই কারও না কারও দাদা দাদি, মা বাবা, ভাই বোন বা আত্বিয় স্বজন। তারা তো আমাদেরই আপনজন।
আমরা যদি তাদের জন্য একটি শীতকাপড়ের ব্যবস্থা না করি তাহলে আমাদের হীন মন-মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হবে। তা ছাড়া তাদের জন্য আমরা চিন্তা না করলে আর কে চিন্তা করবে? তাদের স্থানে তো আমরা থাকতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করেছেন। আমাদের সমপত্তি দিয়েছেন। আমাদের এই সম্পদের মধ্যে গরীবের হক আছে।
এ জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করবো আপনারা পরিবারের জন্য যখন শীতের কাপড় কিনতে যাবেন অল্প মূল্যের হলেও দয়া করে একটি অতিরিক্ত কাপড় কিনবেন। আপনার আশপাশে বসবাসরত কোন গরিবের হাতে তুলে দেবেন। তাতে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। একটা মানুষ অন্তত রক্ষা পাবে শীতের কষ্ট থেকে।
অনেক বাবা মা আছেন যারা অসচ্ছলতার কারণে নিজের ছোট বাচ্চাটিকে শীতবস্ত্র কিনে দিতে পারেন না। সন্তান যখন তাদের কাছে এসে শীতকাপড়ের আবদার করে, অবুঝ শিশু যখন অভিযোগ করে, তখন কষ্টে তাদের চোখে পানি আসে। কিন্তু তারা কাঁদতে পারে না। পারে না সন্তানকে সদুত্তর দিতে। তারা অসহায় এবং ছোট হয়ে যান সন্তানের কাছে। সন্তানকে কষ্টে দেখাও বাবা মার জন্য যন্ত্রণাদায়ক।
হতে পারে আমাদের এ পদক্ষেপ অনেক মা বাবাকে তাদের সন্তানের কাছে ছোট হওয়া থেকে বাঁচাবে। যে সব বাবা মা তাদের সন্তানের হাতে শীতের কাপড় তুলে দিতে পারে না, নিজ চোখে সন্তানকে শীতে কষ্ট পেতে দেখেন তারাই শুধু বুঝবেন এটা কতো বেশি কষ্টদায়ক। অট্টলিকায় থেকে আমরা কোনদিন সেটা বুঝতে পারবো না।
অতএব এই শীতে গরিব দুখির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি এ আবেদনের সারা দেবেন। গরিবের মুখের হাসি ফোটানোর জন্য তাদের হাতে তুলে দেবেন একটি গরমকাপড়, একটি শীতাবস্ত্র।
লেখক, সাব এডিটর (সহসম্পাদক) পাবলিক ভয়েস
আই.এ/