চিন্তাশীল আলেমদের নিয়ে প্রশংসনীয় ঐক্য বৈঠক মুফতী ফয়জুল করীমের

প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৯

পাবলিক ভয়েস: ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব এবং নিজেদের কর্মগুণে পরিচিত প্রায় দেড় শতাধিক যুব আলেমদের নিয়ে ঐক্যপ্রয়াসী এক ব্যাতিক্রমধর্মী মতবিনিময় সভা করেছে আইএবির সহযোগী সংগঠন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ।

বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার বিএম মিলনায়তনে বৃহৎ পরিসরে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত যুব ওলামাগণ ইসলাম দেশ ও জনগণের জন্য তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন। এ সময় তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কাছে তাদের কি প্রত্যাশা রয়েছে এ সম্পর্কে আলোচনা করেন এমনকি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিরুদ্ধে তাদের যে কোন অভিযোগ নিঃসংকোচে তুলে ধরেন।

সভার প্রধান অতিথি মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম ধৈর্য সহকারে সকলের মন্তব্য শোনেন এবং পরিশেষে তাদের মতামতের বিষয়ে সমাধানমূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বিশেষ কোন গোষ্ঠীর দল নয়, এটি সকল ইসলামপ্রিয় মানুষের সংগঠন। আমরা চাই সকল সেক্টরের মানুষের মতামত নিয়ে আগামী দিনে দেশ এবং জাতির জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে। এজন্য তিনি তরুণ ওলামায়ে কেরামের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সহযোগিতা এবং পরামর্শসহ গঠনমূলক সমালোচনা কামনা করেন। এছাড়াও তিনি প্রায় আধাঘন্টা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ইসলামী যুব আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত প্রোগ্রামটি ছিল গতানুগতিক যেকোন প্রোগ্রাম থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে এগিয়ে চলা যুব আলেমদের নিয়ে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গ রাজধানীর উল্লেখযোগ্য মসজিদের খতিব, মাদরাসার পরিচালক বা মুহাদ্দিস, মিডিয়ার সম্পাদক বা সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক অথবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কে এম আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আয়োজক কমিটির পক্ষে যুব আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন, যুবনেতা মুফতী হোসাইন মোহাম্মদ কাওছার বাঙালি, মুফতী মানসুর আহমদ সাকী সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও চিন্তাশীল আলেমদের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন এই মতবিনিময় সভায়।

মতবিনিময় সভা শেষে অনেকেই এ বিষয়ে ফেসবুকে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। উল্যেখযোগ্য কয়েকটি মন্তব্য প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হলো।

মতবিনিময় সভায় দাওয়াত থাকা যুবক আলেম মাওলানা সালাহুদ্দীন মাসউদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন,
… কথা ক্লিয়ার। কোরআন হাদিসের আলোকে চরমোনাই তরিকা ইসলামের সহিহ তরিকার দশটি দলের একটি। এখানে ভেজালের কিছু নেই। কিছু কিছু সমস্যা নেই, তা বলবো না। এই ধরনের সমস্যা কার মধ্যে নেই? বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ আলেম এই তরিকার সঙ্গে জড়িত। এতো বিপুল সংখ্যক হক্কানী আলেমে দীন অন্য কোনো তরিকা বা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত আছেন বলে আমার জানা নেই। আপনার মতো বিশ হাজার মাওলানা চরমোনাই বিরোধী হলেও দুই লাখ আলেম সরাসরি এই মেহনতের সঙ্গে জড়িত আছেন আলহামদুলিল্লাহ।

আপনারা যে স্বপ্ন দেখছেন, যতোদিন এই তরিকা হকের উপর টিকে আছে, ততোদিন এই দুঃস্বপ্ন পূরণ হবার নয়।
মনে রাখবেন, আপনি দশজন আলেমের সঙ্গে গোপন কামড়ায় বসেও যদি চরমোনাই বিরোধী মন্তব্য করেন তবে মনে রাখবেন এখানে একজন হলেও আপনাকে মনে মনে গালি দিবে। কী দরকার নিজেকে বিতর্কিত করার?
আপনার হৃদয়ে দীনের দরদ থাকলে আপনি আপনার অবস্থান থেকে কাজ করে যান। আপনার কাজ আপনাকে মূল্যায়ন করবে। নিজে কাজ করুন, অন্যকে কাজ করতে দিন। হুদাই বিরোধীতা করে নিজের পজিশন নষ্ট করার কোনো দরকার আছে? দশজনের মধ্যে নিজেকে হিরো ভেবে একশো জনের মাঝে হিরো থাকা কাওকে ছোটো ভাবলে বা ছোটো করে উপস্থাপন করলে আপনিই দিন দিন নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবেন।

অন্যের প্রশংসা করার মতো কলিজা না থাকলেও বদনাম করা থেকে বিরত থাকি। এতে নিজেরই লাভ।আপনি বলেন যে অমুকে চরমোনাইয়ের দালাল। আচ্ছা আপনি কার দালাল? চরমোনাই কি হকের বাইরের কোনো দল? তবে কেও হকের দালালী করলে এটা খারাপ লাগে কেন? আপনিও তো কারো না কারো দালালী করেন, নাকি? বাদ দেন ভাই ওসব। কাজ করেন। কাজের মাধ্যমে ওরা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, আপনিও কাজ করে এগিয়ে যান। কারো নিন্দা করে তাকে থামানো যায় না। কথাটা আপনি বোঝেন না? আপনি তো জ্ঞানী মানুষ। পরিশেষে বলবো, আপনি মনে মনে আমার উপর রাগ করলেও একথা কিন্তু স্বীকার করতেই হবে যে, কথা তো ঠিক।

যদি কথা ঠিকই হয়ে থাকে তবে আমাকে গালি দিন সমস্যা নেই। আপনি আপনার যবানকে কন্ট্রোল রেখে নিজ অঙ্গনে কাজ করে যান আর এই বুঝটি আপনার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য আমাকে একটু দোয়া দিয়ে যান। লাভ নাই। কাজ করতে থাকা কারো পেছনে লেগে থেকে কোনো লাভ নেই। কাজ করুন। আপনার কাজ আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকা আর এক যুব আলেম, গাজীপুর মাদরাসাতুল মনসুরের পরিচালক মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেমী তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে লেখেন, শায়খে চরমোনাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম সাহেবের সোহবতে। অমায়িক, আন্তরিক, সজ্জন, দরদী, প্রাণোচ্ছল, প্রাণবন্ত মানুষ তিনি৷ অনেক দোয়া দিলেন, মাহফিলের দাওয়াত দিলেন। আন্তরিকতার সাথে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। নিজে মেহমানদারি করেছেন; আমি তো লজ্জায় মরি।

এছাড়াও ফেসবুকে চরমোনাই তথা ইসলামী আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত ও কটু ভাষায় তর্কচর্চা করে পরিচিত মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেমী এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লেখেন,

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর অঙ্গসংগঠন যুব আন্দোলনের তরফে আয়োজিত যুব আলেমদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠান দেখতে গতকাল হাজির হয়েছিলাম সেগুনবাগিচার বিএম মিলনায়তনে। অন্য সবার মতই তরুণ আলেমদের গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। সবিশেষ রেজাউল করীম আবরার ভাইয়ের নারী নেতৃত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় চমকে গিয়েছিলাম। যুব আন্দোলন নেতৃবৃন্দের আয়োজন ও উদারতাও ছিল প্রশংসনীয়। কে যানতো, এর পরেও যে আরো বড় কোন চমক অপেক্ষা করছিল?

অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করীম সাহেব। উপস্থিত আলেমদের আলোচনা সমালোচনাগুলো সুন্দর ভাবে নিয়ে প্রায় সব পয়েন্টে ঝানু রাজনীতিবিদ স্টাইলেই নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। বহুজনেই বহু সমালোচনা করেছেন কিন্তু তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তা সামলে নিয়ে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও উদারতার এক নতুন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সবার সাথেই তিনি করমর্দন করছিলেন। আমি হাত বাড়িয়ে দিতেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আপনি তো আমার সবচাইতে বেশি উপকার করেন, বেশি সমালোচনা করেন, আপনার কপালে চুমু দেয়া উচিত।’ পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যাই যখন তিনি সত্যি সত্যিই কপালে চুমু বসিয়ে দেন। বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে বিরোধপূর্ণ কারো সাথে উদারতার হয়তো এটিই ছিল চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ, যা ছিল কোনধরণের লৌকিকতামুক্ত, সম্পূর্ণ আন্তরিক।

এরপর ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবার সাক্ষাতে যাই উনার খাস দরবারে। নিজের কাছে বসিয়ে নিজ হাতে আপ্যায়ন করে যেন তিনি নিজেকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তুলতে পারার গোপন রহস্যটির কথাই জানিয়ে দেন। ব্যক্তিগত খোজ-খবর নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাছে আসুন, আমাদের সাথে মিশুন। দূর থেকে অনেক কিছুও আপত্তিকর মনে হলেও কাছে এলে অনেক কিছুই থাকবে না।…. এইজন্যেই তো যারা রাসুল সা. এর বানী শুনেছেন তারা সাহাবী নন বরং যারা দেখেছেন তারা সাহাবী।’ এরপর তিনি বার বার চরমোনাই মাহফিলের দাওয়াত দেন।

অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, উদারতা, পুরুষানুক্রমে পাওয়া সরলতা ও সাদেগীর মিশেলে একজন ফয়জুল করীম সাহেবকে কাছ থেকে উপলব্ধি করে সত্যিই গুনমুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিলো না। সমাধান পেয়ে যাই ব্যক্তিগত ব্যাপারসমূহে বহু অভিযোগ অনুযোগের। আলোচনা সমালোচনা হোক আল্লাহর জন্য৷ ভালো থাকুক ভালোবাসারা। কাছে থাকুক আত্মার আত্মিয়রা।

সভায় উপস্থিত থাকা আলেমরা ছাড়াও অনেকেই ব্যাতিক্রমধর্মী এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে মতামত প্রকাশ করেছেন। দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করা যুবক ও তরুণ আলেমদের নিয়ে বাংলাদেশের পরিচিত ও রাজনৈতিক আলেমদের এমন বৈঠক ও চা-চক্র নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন বলেই মন্তব্য করেছেন অনেকে।

মন্তব্য করুন