

ছাত্রলীগের হাতে নৃশংসভাবে খু*ন হওয়া বুয়েটের আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ । ২৫ জনকে আসামি করে এই অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পুলিশি তদন্তক রিপোর্টে আবরার ফাহাদকে দ্বিতীয়বার আবার হত্যা করার নামান্তর বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক।
আজ সন্ধ্যার পর পুলিশের অভিযোগপত্র প্রদানের পর মিডিয়ায় দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তার নিজ ফেসবুক আইডিতে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়। বিশ্বজুড়ে বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা, গালফ নিউজসহ আন্তর্জাতিক সব মিডিয়ায় বলা হয়েছে- ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পানিচুক্তির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’ অথচ আজকে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যার চার্জশিটে এই মূল কারনটির কোন উল্লেখই নাই!
পুলিশের আজকের সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসাবে বলা হলো অন্যসব কারন। বলা হলো- ‘জড়িতদের উশৃঙ্খল আচরণের অভ্যস্ততা, অন্যদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করা এবং সালাম না দেয়ার বিষয়টিও আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ।’ পুলিশ এটাও বলে, ‘এটা ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুও ছিল।’
আশ্চর্য, দেশ-বিদেশের সবাই দেখেছে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হয় আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরেই ৬ অক্টোবর রাতে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় পর বুয়েট ছাত্রলীগের খুনিরা নিজেদের মধ্যে গড়া একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরার ফাহাদকে মেরে ফেলার নির্দেশনা দেয়। সেই মেসেঞ্জার গ্রুপে অভিযুক্তরা সেই নির্দেশনার প্রতি সম্মতিসূচক রেসপন্স করে সবাই মিলে আবরারকে ডেকে এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এগুলো মামলার স্বাক্ষ্য প্রমান, আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভিডিও ফুটেজে স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে। অবশ্য ঘটনার পুরো ভিডিওর দাবিতে প্রাধ্যক্ষসহ পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে সেদিন বুয়েটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ না করলে এই ভিডিও ফুটেজটিই হয়ত আর কখনও পাওয়া যেত না।
আবরার হত্যার চার্জশিট এখনও দেখিনি। তবে, পুলিশের আজকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ যতটুকু জানিয়েছে ততটাই গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি। আশা করি, আবরার হত্যাকান্ডের মত স্পর্শকাতর মামলার তদন্তে পুলিশ কোন ছলচাতুরির আশ্রয় নিবে না। আর সত্যিই যদি আবরার হত্যার চার্জশিটে খুনের মূল মোটিভ আড়াল করে যতসব অসংলগ্ন কারনকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্ঠা করা হয়, তাহলে সেটা হবে আবরারকে দ্বিতীয় বার হত্যা করার নামান্তর।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ । ২৫ জনকে আসামি করে এই অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বুধবার সিএমএম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই চার্জশিট জমা দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। অভিযোগপত্রে ২৫ আসামির মধ্যে ১১ জন সরাসরি হত্যায় অংশ নেয় বলে উল্লখ করা হয়েছে। এর আগে দুপুর ১২টায় মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রসঙ্গত : ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
সিসিটিভি ফুটেজ ও জব্দ আলামত থেকে পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।